Friday, September 4, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ১০১। প্রয়োজন মতো ব্যায়াম নির্বাচন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ১০১। প্রয়োজন মতো ব্যায়াম নির্বাচন।
রণদীপম বসু

# নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন

কারো জন্যেই সবগুলো ব্যায়াম বা যোগ-ব্যায়াম একসাথে একদিনে করা সম্ভব নয় এবং তা উচিত বা প্রয়োজনও নেই। আবার বৈচিত্র্যহীন একই ব্যায়াম রোজ রোজ করলেও একঘেয়ে লাগার সম্ভাবনাই বেশি। এতে করে ব্যায়ামে মনঃসংযোগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর মনঃসংযোগ না থাকলে ইয়োগা বা যৌগিক ব্যায়ামে তেমন সুফল পাওয়া যায় না। এ ছাড়াও বয়স, সামর্থ্য ও শারীরিক জটিলতাজনিত কারণে প্রয়োজন বিবেচনায় সব আসন বা ব্যায়াম সবার জন্য প্রযোজ্যও হয় না। তাই নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এ জন্যে বয়স অনুযায়ী কোন্ কোন্ ব্যায়াম প্রযোজ্য হবে এই ধারণা যেমন থাকা জরুরি, তেমনি শরীরের কোন অঙ্গ বা গ্রন্থির জন্য কোন ব্যায়াম ফলপ্রসূ তাও জানতে হয়। পাশাপাশি কোন্ রোগে কোন্ ব্যায়াম ফলদায়ক তা জানার পাশাপাশি কোন্ রোগের জন্য কোন্ ব্যায়াম অভ্যাস করা নিষেধ বা অনিষ্টকর তাও জানতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাকে কোনভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।

একজন সুস্থ ব্যায়াম অভ্যাসকারীকে রোজ গুটিকয় খালি হাতে ব্যায়াম অভ্যাসের পর ২/৩ মিনিট শবাসনে বিশ্রাম নিয়ে ৬ থেকে ৮টি যৌগিক ব্যায়াম যথানিয়মে অভ্যাস করার পর সবশেষে মিনিট পাঁচেক শবাসন করে দৈনন্দিন ব্যায়াম অভ্যাস শেষ করা উচিত। সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যাসনশবাসন ছাড়া কোন আসনই এক-দু’মাসের বেশি একনাগাড়ে অভ্যাস করার প্রয়োজন নেই। প্রতি দু’মাস অন্তর ব্যায়াম তালিকায় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দৈনন্দিন তালিকায় হাতের, বুকের, মেরুদণ্ডের ও পায়ের ব্যায়াম হয় মতো কিছু খালিহাতে ব্যায়াম কিংবা আসন এবং বিভিন্ন গ্রন্থি ও স্নায়ুর মধ্যে যাতে রক্ত চলাচল ভালোভাবে হয় সে জন্যে যৌগিক ব্যায়াম হতে নিজ প্রয়োজন মতো ৭/৮টি আসন ও মুদ্রা নির্বাচন করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে এক-দু’টা সহজ-প্রাণায়ামও দৈনন্দিন তালিকায় থাকতে পারে। এভাবে নির্বাচিত ব্যায়াম, আসন ও মুদ্রাগুলো দু’মাস অভ্যাসের পর একঘেয়েমি দূর করতে তালিকাটির আমূল বা আংশিক পরিবর্তন করে নেয়া উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন দেহের সব অংশে প্রচুর রক্ত চলাচল করে এবং সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যাসনশবাসন প্রভৃতি অত্যাবশ্যকীয় আসনগুলো কোন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।

অসুস্থ ব্যায়াম অভ্যাসকারীদের বেলায় রোগ নির্ণয়ের পর উপযুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য ও প্রয়োজনমতো বিশ্রামের পাশাপাশি রোগ অনুযায়ী ৪/৫টি আসন নির্বাচন করে দিনে দু’বেলা সকাল সন্ধ্যায় চর্চা করার অভ্যাস করা যায়।

প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম নির্বাচন ও দৈনন্দিন তালিকাভুক্তির সুবিধার্থে বয়স, দেহের বিভিন্ন অংশ ও রোগ-নিরাময় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় যৌগিক ব্যায়ামের তালিকা জেনে রাখা সবার জন্যেই সুবিধাজনক।

---------------------------------------------------------
(ক) বয়স ও সামর্থ্য উপযোগী যৌগিক ব্যায়ামের তালিকা:

(০১) ৬ থেকে ১২ বছর উপযোগী (ছেলে ও মেয়ে)-
পদ্মাসন, পদহস্তাসন, অর্ধ-চক্রাসন, অর্ধ-চন্দ্রাসন, চন্দ্রাসন, চক্রাসন, ভুজঙ্গাসন, পূর্ণ-ভুজঙ্গাসন, ধনুরাসন, পূর্ণ-ধনুরাসন, উষ্ট্রাসন, পূর্ণ-উষ্ট্রাসন, মৎস্যাসন, শশঙ্কাসন, অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন, অর্ধ-কুর্মাসন, পশ্চিমোত্থানাসন, ভদ্রাসন (বদ্ধ-কোণাসন), ব্যাঘ্রাসন, গড়ুরাসন, বৃক্ষাসন, বকাসন, ত্রিকোণাসনশবাসন। (আসনগুলো এক-দু’বারের বেশি অভ্যাস করা ঠিক হবে না।)

(০২) ১৩ থেকে ১৬ বছর উপযোগী (ছেলে ও মেয়ে)-
০১ নং তালিকায় উল্লিখিত ব্যায়াম ও তার সঙ্গে পবন-মুক্তাসন, উত্থিত-পদাসন, শলভাসন, গোমুখাসন, হলাসন, জানুশিরাসন, বিভক্ত-জানুশিরাসন, বজ্রাসন, সুপ্ত-বজ্রাসন, আকর্ণ-ধনুরাসন, সর্বাঙ্গাসন, বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসন, পূর্ণ-বদ্ধসর্বাঙ্গাসন, মকরাসন, পূর্ণ-মকরাসন, দণ্ডায়মান একপদ-শিরাসন, সিদ্ধাসন, কুক্কুটাসন, বিপরীতকরণী মুদ্রা ও যোগমুদ্রা

(০৩) ১৭ থেকে ২০ বছর উপযোগী (ছেলে ও মেয়ে)-
০১ ও ০২ নং তালিকায় উল্লিখিত ব্যায়াম ও মুদ্রা এবং তার সঙ্গে গর্ভাসন, কর্ণ-পিঠাসন, উড্ডীয়াননৌলী মুদ্রা (মেয়েদের ঋতু প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে উড্ডীয়াননৌলী মুদ্রা অভ্যাস করা উচিত নয়)।

(০৪) ২১ থেকে ৩০ বছর উপযোগী (নারী ও পুরুষ)-
০১, ০২ ও ০৩ নং তালিকায় উল্লিখিত ব্যায়াম ও মুদ্রা এবং তার সঙ্গে শীর্ষাসন, শক্তিচালনী মুদ্রাসহ কয়েকটি সহজ মুদ্রা, বস্তিক্রিয়াসহজ-প্রাণায়াম

(০৫) ৩১ থেকে ৪০ বছর উপযোগী (নারী ও পুরুষ)-
০১, ০২, ০৩ ও ০৪ নং তালিকায় উল্লিখিত ব্যায়াম, মুদ্রা ও প্রাণায়াম-এর অনুরূপ। তবে এমন কোন আসন অভ্যাস করা উচিত হবে না যাতে মেরুদণ্ডের বা দেহের কোন সংযোগস্থলে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। যেমন- চক্রাসন, চন্দ্রাসন, পূর্ণ-উষ্ট্রাসন, পূর্ণ-ধনুরাসন, বিভক্ত-জানুশিরাসন, দণ্ডায়মান একপদ শিরাসন ইত্যাদি অভ্যাস না করাই বাঞ্ছনীয়।

(০৬) ৪১ বছর এবং তদুর্ধ্ব বয়সোপযোগী (নারী ও পুরুষ)
৬ থেকে ৮টি সহজ স্বাস্থ্যাসন যেমন- পবনমুক্তাসন, ভূজঙ্গাসন, মৎস্যাসন, সর্বাঙ্গাসন, ধনুরাসন (সহজে যতটুকু সম্ভব), উষ্ট্রাসন (সহজে যতটুকু সম্ভব), হলাসন, জানুশিরাসন ইত্যাদি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী দুয়েকটি মুদ্রা ও প্রাণায়াম
৫০ বছরের পর থেকে ভ্রমণ-প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী।

---------------------------------------------------------

(খ) দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শিরা-উপশিরা, স্নায়ু, গ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় রাখার উপযোগী য়ৌগিক ব্যায়ামের তালিকা:

(০১) মাথা ও কপাল-

(০২) কণ্ঠ বা গলা-

(০৩) কাঁধ-

(০৪) বুক-

(০৫) উদর বা পেট ও বস্তিপ্রদেশ-

(০৬) মেরুদণ্ড-

(০৭) উরু ও তার সংযোগস্থল-

(০৮) নিতম্ব-

(০৯) কোমর-

(১০) হাত-

(১১) পা-

(১২) হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস-

(১৩) জননেন্দ্রিয়-

(১৪) চোখ-

(১৫) কণ্ঠ-

---------------------------------------------------------

(গ) রোগ নিরাময়ে উপযোগী আসন ও মুদ্রা:

(০১) কোষ্ঠবদ্ধতা-

(০২) অজীর্ণ ও অম্লদোষ-

(০৩) আমাশয়-

(০৪) পেটে বায়ু-

(০৫) উদরাময়-

(০৬) স্থূলতা-
খালিহাতে ব্যায়াম ও সূর্য-নমস্কার, পবনমুক্তাসন, পদহস্তাসন, অর্ধ-চন্দ্রাসন, ত্রিকোণাসন, উত্থিত-পদাসন, মৎস্যাসন, সর্বাঙ্গাসন এবং উষ্ট্রাসন, ধনুরাসনহলাসন। রাতে ঘুমানোর পূর্বে দশ-পনেরো মিনিট বজ্রাসন। দিবানিদ্রা নিষিদ্ধ।

(০৭) কৃশতা-

(০৮) রক্তচাপ (উচ্চ/নিম্ন)-

(০৯) হাঁপানি-

(১০) ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র-

(১১) মুখে ব্রণ বা বয়স ফোঁড়া-

(১২) মাথাধরা-

(১৩) তোতলামী-

(১৪) অর্শ-

(১৫) বাতরোগ-

(১৬) অন্ত্রবৃদ্ধি রোগ-

(১৭) পাকস্থলীর বা অন্ত্রের ক্ষত-

(১৮) পক্ষাঘাত-
সকালে বিকেলে ভ্রমণ-প্রাণায়াম। সামর্থ বৃদ্ধির সাথে সাথে খালিহাতে সহজ ব্যায়াম ও বিভিন্ন যৌগিক ব্যায়াম।

(১৯) স্নায়বিক দুর্বলতা-
রোগের উৎস-কারণ হিসেবে চিহ্ণিত রোগ বা জটিলতা দূরীকরণার্থে প্রয়োজন-সংশ্লিষ্ট আসন ও মুদ্রা অভ্যাস।

(২০) যৌনসমস্যা-
প্রাতে সহজ বস্তিক্রিয়া, ভদ্রাসন (বদ্ধ-কোণাসন), উষ্ট্রাসন, শশঙ্গাসন, বিভক্ত-জানুশিরাসন, উড্ডীয়ান, মূলবন্ধ মুদ্রা, মহামুদ্রা, মহাবন্ধমূদ্রা, অগ্নিসার এবং প্রয়োজনে স্নায়বিক দুর্বলতা নিরসন সংশ্লিষ্ট আসন ও মুদ্রা।

---------------------------------------------------------
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [১০০][**][১০২]