Saturday, April 25, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৫১। আসন: শিরাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৫১। আসন: শিরাসন।
রণদীপম বসু

# শিরাসন (Sirasana):
আসনাবস্থায় কোন না কোন পা কে শির বা মাথায় উঠাতে হয় বলে আসনটির নাম শিরাসন।

শিরাসন কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: (ক) একপদ শিরাসন (খ) দুইপদ শিরাসন (গ) দণ্ডায়মান একপদ শিরাসন।

@ একপদ শিরাসন (Eka Pada Sirasana):


পদ্ধতি :
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। বাঁ পা সোজা সামনের দিকে মেলে রাখুন বা হাঁটু থেকে ভেঙে পায়ের গোড়ালি পাছার কাছে আনুন। এবার ডান পায়ের গোড়ালির ঠিক ওপরে দু’হাত দিয়ে ধরে দম নিতে নিতে পা-টি উঁচু করে টেনে এনে কাঁধের উপর রাখুন। এখন হাতের তালু দুটো একত্রে জোড় অবস্থায় নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের উপর রাখুন। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ বাঁ পা কাঁধের উপর থাকবে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ দুইপদ শিরাসন (Dui Pada Sirasana):


পদ্ধতি :
প্রথমে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার ডান পায়ের গোড়ালির ঠিক ওপরে দু’হাত দিয়ে ধরে দম নিতে নিতে পা-টি উঁচু করে টেনে এনে কাঁধের উপর রাখুন। একই পদ্ধতিতে বাঁ পা-টিও এনে কাঁধের উপর রাখুন। এখন হাতের তালু দুটো একত্রে জোড় অবস্থায় নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের উপর রাখুন। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ দণ্ডায়মান একপদ শিরাসন (Dandayamana Eka Pada Sirasana):

পদ্ধতি :
সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার কোমর থেকে দেহের উপরের অংশ অল্প সামনে নামিয়ে ডান পা হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা ওপরে তুলুন এবং দু’হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা ধরে টেনে নিয়ে ঘাড়ের উপর রাখুন। এখন দম নিতে নিতে বাঁ পায়ের উপর ভর রেখে আস্তে আস্তে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং হাত দুটো নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের উপর রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০সেঃ থেকে ২০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে ধীরে ধীরে হাত-পা আলগা করে পা মাটিতে নামিয়ে এনে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসুন। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে পা বদলে একইভাবে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ ডান পায়ের উপর খাড়া হয়ে বাঁ পা দু’হাত দিয়ে ঘাড়ের উপর ধরে রাখুন।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উল্লেখ্য, একপদ শিরাসনের সাথে দণ্ডায়মান একপদ শিরাসনের পার্থক্য হচ্ছে, একপদ শিরাসনে এক পা ঘাড়ে রেখে দেহ মেঝেতে বসা অবস্থায় থাকবে, আর দণ্ডায়মান একপদ শিরাসনে এক পা ঘাড়ে রেখে দেহটা অন্য পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ানো থাকবে।


উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে পায়ের শক্তি বাড়ে এবং দৈহিক ভারসাম্য বা ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণে আসে। এছাড়া কোমর ও উরুর সংযোগস্থলের মাংসপেশী ও হাড়ের জোর মজবুত ও নমনীয় হয় এবং এসব অঞ্চলের স্নায়ুজাল সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। বুক সুগঠিত হয়, ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের কর্মমতা বৃদ্ধি পায়। একশিরা, হার্নিয়া, অর্শরোগ ও কোন স্ত্রী-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়।

নিষেধ:
অর্শ, একশিরা ও হার্নিয়া রোগীদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এ আসন চর্চা করা উচিৎ নয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৫০][**][৫২]

Sunday, April 19, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৫০। আসন: বীর-ভদ্রাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৫০। আসন: বীর-ভদ্রাসন।
রণদীপম বসু

বীর-ভদ্রাসন (Vira-Bhadrasana):
আসনাবস্থায় দেহটাকে বীর যোদ্ধার মতো দেখায় বলে আসনটির নাম বীর-ভদ্রাসন।

পদ্ধতি (ক) :


প্রথমে জোড় পায়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার বাঁ পা বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দু’ থেকে আড়াই ফুট দূরে রাখুন। এখন ডান পা সোজা রেখে বাঁ পায়ের হাঁটু ভেঙে মেরুদণ্ড সোজা রেখে শরীরের ভার বাঁ পায়ের উপর নিয়ে যান এবং হাত দুটো মাটির সমান্তরালে দু’পায়ের সোজাসুজি দু’পাশে টানটান করে মেলে দিন। ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টি বাঁ হাতের দিকে নিবদ্ধ থাকবে। এ অবস্থায় বাঁ পায়ের পাতা থেকে হাঁটু পর্যন্ত মাটির উল্লম্ব অর্থাৎ খাড়া থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর পূর্বাবস্থায় ফিরে এসে পা বদলে একইভাবে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ এবার শরীরের ভার ডান পায়ের উপর থাকবে এবং দৃষ্টি প্রসারিত ডান হাতের দিকে নিবদ্ধ থাকবে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ) :


প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার ডান পা সামনের দিকে দু’ থেকে আড়াই ফুট দূরে রাখুন। এখন আঙুলগুলো নমস্কারের ভঙ্গিতে রেখে হাত দুটো সোজা মাথার উপর তুলুন যেন হাত কানের সঙ্গে লেগে থাকে। এবার বাঁ পা সোজা রেখে এবং ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে কোমর থেকে দেহের উপরাংশ সাধ্যমত পেছনদিকে বাঁকিয়ে নিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।


এরপর পূর্বাবস্থায় ফিরে এসে পা বদলে একইভাবে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ ডান পা সোজা রেখে সামনে বাড়ানো বাঁ পাযের হাঁটু ভেঙে শরীর পেছনদিকে বাঁকাতে হবে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (গ) :


আঙুলগুলো নমস্কারের ভঙ্গিতে রেখে হাত দুটো সোজা মাথার উপর তুলুন এবং সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত কানের সঙ্গে লেগে থাকবে। এ অবস্থায় ডান পায়ের উপর দেহের ভার রেখে কোমর থেকে শরীরের উপরাংশ সামনের দিকে নামাতে থাকুন এবং একই সাথে হাঁটু না ভেঙে বাঁ পা পেছনদিকে এমনভাবে ওঠাতে থাকুন যেন নমস্কারের ভঙ্গিমায় জোড়া হাত, মাথা, ঘাড়, কোমর এবং হাঁটু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত মাটির সমান্তরালে এক সরলরেখায় অবস্থান করে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর পূর্বাবস্থায় ফিরে এসে পা বদলে একইভাবে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ বাঁ পায়ের উপর দেহের ভার রেখে ডান পা এবং হাত, ঘাড়, কোমর একই সরলরেখায় অবস্থান করে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় ও মজবুত হয়, মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। পাঁজরের হাড়ের অসাম্যতা দূর হয় এবং বুক সুগঠিত হয়। এতে পায়ের ভালো ব্যায়াম হয় বলে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং গঠন সুন্দর হয়। তলপেট, কোমর ও নিতম্বে বেশি মেদ জমতে পারে না বলে দেহ সুন্দর ও সুঠাম হয়ে ওঠে। আসনটি অভ্যাসে বাত বা সায়টিকা আশ্রয় করতে পারে না।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৯][**][৫১]

Saturday, April 18, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৯। আসন: ওঙ্কারাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৯। আসন: ওঙ্কারাসন।
রণদীপম বসু

ওঙ্কারাসন (Omkarasana):
আসনাবস্থায় দেহটিকে ওঁ-কারের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম ওঁকারাসন বা ওঙ্কারাসন।

পদ্ধতি :
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। বাঁ পা হাঁটু থেকে ভেঙে পায়ের গোড়ালি পাছার কাছে আনুন। এবার ডান পায়ের গোড়ালির ঠিক ওপরে দু’হাত দিয়ে ধরে পা-টি উঁচু করে টেনে এনে কাঁধের উপর রাখুন। এখন হাতের তালু দুটো মেঝের উপর রাখুন এবং বাঁ পা দিয়ে বাঁ হাত বেষ্টন ক’রে বাঁ পায়ের পাতা ডান হাতের কনুইয়ের ওপর রাখুন। এবার হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে দেহটাকে যতোটা সম্ভব উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর ধীরে ধীরে মেঝেতে বসে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে হাত-পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এবারে বাঁ পা কাঁধের উপর থাকবে এবং ডান পা দিয়ে ডান হাত বেষ্টন করে ডান পায়ের পাতা বাঁ হাতের কনুইয়ের ওপর থাকবে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
আসনটি দেহের সকল অংশের কম-বেশি উপকার সাধন করে। বিশেষতঃ আসনটি অভ্যাসের ফলে হাতের ও কব্জির জোর বাড়ে এবং পায়ের শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাছায়, কোমরে ও হাঁটুতে বাত আশ্রয় করতে পারে না এবং এসব অঙ্গে ব্যথা থাকলে সেরে যায়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৮][**][৫০]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৮। আসন: যোগনিদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৮। আসন: যোগনিদ্রা।
রণদীপম বসু

যোগনিদ্রাসন (Yoganidrasana):

পদ্ধতি :
চিৎ হয়ে শুযে পড়ুন। এবার মাথা মেঝে থেকে তুলে হাত দিয়ে ডান পায়ের ঠিক গোড়ালির উপর ধরে দম নিতে নিতে পা-টি উঁচু ক’রে টেনে এনে কাঁধের উপর রাখুন। একই পদ্ধতিতে বাঁ পা-টিও এনে কাঁধের উপর রাখুন। এখন হাত দুটো কোমরের পাশ দিয়ে নিয়ে গিয়ে নিতম্বের তলায় এক হাত দিয়ে অন্য হাত শক্ত করে ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০সেঃ থেকে ১৫সেঃ এ অবস্থায় থাকুন এবং দম ছাড়তে ছাড়তে হাত ছেড়ে পা দুটো কাঁধ থেকে নামিয়ে আনুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
আসনটি দেহের সকল অংশের কম-বেশি উপকার সাধন করে। আসনাবস্থায় হৃদযন্ত্রের খুব একটা পরিশ্রম হয় না বলে এ আসন অভ্যাসে হৃদযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এ আসন অভ্যাসে উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বজায় থাকে। নিয়মিত এ আসন অভ্যাসে রাখলে মেয়েদের সন্তান প্রসবে দৈহিক কোন বাধার সৃষ্টি হতে পারে না। এ আসন অভ্যাসে দীর্ঘ শ্রমজনিত কান্তি ও অনিদ্রাজনিত কষ্ট দূর হয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৭][**][৪৯]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৭। আসন: কুর্মাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৭। আসন: কুর্মাসন।
রণদীপম বসু

কুর্মাসন (Kurmasana):
এ আসন অবস্থায় শরীরটাকে কুর্ম বা কচ্ছপের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম কুর্মাসন।

পদ্ধতি (ক):


সামনে দু’পা ছড়িয়ে বসুন। এবার ধীরে ধীরে কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে যতটুকু সম্ভব নামিয়ে এনে কপাল বা চিবুক মেঝেতে লাগান এবং হাত দুটো দু’হাঁটুর নিচে দিয়ে দু’দিকে ছড়িয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ):


সামনে দু’পা ছড়িয়ে বসুন। এবার দু’হাঁটু ভাঁজ করে হাঁটু দুটো দু’দিকে ছড়িয়ে রেখে দু’পায়ের পাতা উরুসন্ধির দিকে কিছুটা এগিয়ে এনে একত্র করুন যেন একটার সাথে আরেকটা মিশে থাকে। এখন ধীরে ধীরে কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে নামিয়ে এনে হাত দুটো দু’হাঁটুর নিচে দিয়ে দু’দিকে রের করে নিয়ে দু’দিক থেকে দু’পায়ের পাতার উপরের দিকে নমস্কারের ভঙ্গিতে চেপে ধরুন এবং দু’পায়ের জোড় করা গোড়ালির কাছে কপাল নামিয়ে প্রণামের ভঙ্গিতে মেঝেতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


@ অর্ধ-কুর্মাসন (Ardha-Kurmasana):

পদ্ধতি :


হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা মুড়ে ঠিক গোড়ালির ওপর পাছা রেখে বজ্রাসনের ভঙ্গিতে সোজা হয়ে বসুন। হাঁটু দুটো একসঙ্গে লেগে থাকবে। এবার নমস্কারের ভঙ্গিতে হাত দুটো জোড় করে মাথার উপর তুলুন যেন দু’হাত দু’কানের সঙ্গে লেগে থাকে। এখন এই অবস্থায় দেহের উপরের অংশ সামনে নামিয়ে যতদূর সম্ভব সম্পূর্ণ প্রসারিত করে প্রণামের ভঙ্গিতে মেঝেতে কপাল ঠেকান। কপাল ও দু’হাতের কড়ে আঙুল মেঝেতে এবং পেট উরুর সঙ্গে লেগে থাকবে। তবে কনুই যেন মাটিতে বা মেঝেতে না লাগে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ সুপ্ত কুর্মাসন (Supta Kurmasana):

পদ্ধতি (ক):


সামনে দু’পা ছড়িয়ে বসুন। এবার ধীরে ধীরে কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে নামিয়ে হাত দুটো দু’হাঁটুর নিচে দিয়ে দু’দিকে রের করে নিয়ে হাত দিয়ে দু’দিক থেকে পা দুটোকে ঘাড়ের উপর তুলে দিন। কপাল মাটিতে লেগে থাকবে। এখন হাত দুটো পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কোমর পেঁচিয়ে এক হাত দিয়ে আরেক হাত শক্ত করে ধরে রাখুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ):


সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার দু’হাত দিয়ে ডান পায়ের ঠিক গোড়ালির উপর ধরে পা-টি উঁচু ক’রে টেনে এনে কাঁধের উপর রাখুন। একই পদ্ধতিতে বাঁ পা-টিও এনে কাঁধের উপর রাখুন। এ অবস্থায় দু’হাতের তালুর উপর ভর করে আস্তে আস্তে দেহটাকে যতটুকু সম্ভব উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

কুর্মাসনের উপকারিতা:
এ আসনে শরীরের সকল অংশের কম-বেশি উপকার হয়। মেরুদণ্ড ও পেটের জন্য বিশেষ উপকারী। আসনটি অভ্যাস রাখলে মেরুদণ্ডের হাড়ের সংযোগস্থল নমনীয় থাকে এবং মেরুদণ্ডসংলগ্ন স্নায়ৃমণ্ডলী ও দু’পাশের পেশী সবল ও সক্রিয় থাকে। পেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহের গড়ন সুন্দর করে।


নিষেধ:
যাদের হার্নিয়া বা এপেণ্ডিসাইটিস রোগ আছে এবং যারা উচ্চরক্তচাপে ভোগেন, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আসন করা উচিৎ নয়। আর যাদের প্লীহা, যকৃৎ রুগ্ন বা অত্যধিক বড়, তাদের অতি সতর্কতার সঙ্গে আসনটি করা উচিৎ। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ না নিয়ে ঝুঁকি নেয়া ঠিক নয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৬][**][৪৮]

Thursday, April 16, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৬। আসন: উৎকটাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৬। আসন: উৎকটাসন।
রণদীপম বসু

উৎকটাসন (Utkatasana):

পদ্ধতি (ক):


পায়ের পাতা দুটো ৭/৮ ইঞ্চির মতো ফাঁক ও সমান্তরাল রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটো মাটির প্রায় সমান্তরালে সামনের দিকে মেলে দিন। এবার হাঁটু ভেঙে চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় বসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ):


দু’পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে পায়ের গোড়ালি তুলে দাঁড়ান। হাত দুটো মাটির সমান্তরাল রেখে সামনে মেলে দিন। এবার হাঁটু ভেঙে মেরুদণ্ড সোজা রেখে গুহ্যদেশ বা নিতম্ব দু’পায়ের গোড়ালির ওপর রেখে রসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ এক পদ উৎকটাসন (Eka Pada Utkatasana):

পদ্ধতি (ক):


প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার ডান পা ভাঁজ করে উঠিয়ে পায়ের অগ্রভাগ বাঁ পায়ের জানুর উপর রাখুন। হাত দুটো জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকে রাখুন কিংবা মাটির সমান্তরালে সামনের দিকে মেলে দিন। এবার বাঁ পায়ের হাঁটু ভেঙে চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় বসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর পা নামিয়ে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে একইভাবে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ):


দু’পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে পায়ের গোড়ালি তুলে দাঁড়ান। এবার বাঁ পা ভাঁজ করে উঠিয়ে পায়ের অগ্রভাগ ডান পায়ের জানুর উপর রাখুন। হাত দুটো জোড় করে নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকে রাখুন কিংবা হাত দুটো মাটির সমান্তরাল রেখে সামনে মেলে দিন। এবার ডান প হাঁটু ভেঙে মেরুদণ্ড সোজা রেখে গুহ্যদেশ বা নিতম্ব ডান পায়ের গোড়ালির ওপর রেখে রসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে পা বদল করে একইভাবে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ পরিবৃত্ত উৎকটাসন (Parivritta Utkatasana):

পদ্ধতি (ক):


দু’ পায়ের পাতা জোড়া রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। দু’হাতের তালু জোড়া করে নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের উপর রাখুন। এবার হাঁটু ভেঙে চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় বসুন। এখন কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বাঁ দিকে মোচর দিয়ে এমনভাবে বাঁকিয়ে নিন যেন ভাঁজ করা ডান হাতের কনুই বাঁ পায়ের বাম পার্শ্বে হাঁটুতে লেগে থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আবারো চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় এসে নমস্কারের ভঙ্গিতে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বিপরীত দিকে অর্থাৎ ডান দিকে বাঁকিয়ে একইভাবে আসনটি করুন যেন বাঁ হাতের কনুই ডান পায়ের ডান পার্শ্বে হাঁটুতে ছুঁয়ে থাকে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ):


দু’ পায়ের পাতা জোড়া রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটো মাটির প্রায় সমান্তরালে সামনের দিকে বাড়িয়ে দিন। এবার হাঁটু ভেঙে চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় বসুন। এখন কোমর থেকে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বাঁ দিকে মোচর দিয়ে বাঁকিয়ে ডান হাতের তালু বাঁ পায়ের বাম পার্শ্বে গোড়ালি ছুঁয়ে মাটিতে রাখুন এবং অন্য হাত অর্থাৎ ডান হাতটি প্রসারিত করে উপরের দিকে সোজা মেলে দিন। ঘাড় মাথা ঘুরিয়ে বাঁ হাত বা উপরের হাতের তালুর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে আবারো চেয়ারে বসার ভঙ্গিমায় এসে শরীরের উর্ধ্বাংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বিপরীত দিকে অর্থাৎ ডান দিকে বাঁকিয়ে একইভাবে আসনটি করুন যেন বাঁ হাতের তালু ডান পায়ের ডান পার্শ্বে গোড়ালি ছুঁয়ে থাকে এবং ডান হাত সোজা উপরে অবস্থান করে। দৃষ্টি ডান হাতের তালুতে নিবদ্ধ থাকবে।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উৎকটাসনের উপকারিতা:
আসনটি বিশেষভাবে পায়ের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পায়ের গঠন সুঠাম ও সুন্দর করে তোলে। এ আসন অভ্যাসে জানুর সংযোগস্থলের স্নায়ু ও পেশী সবল হওয়ায় হাঁটুতে বাত হতে পারে না, কটিবাত থাকলে সেরে যায় এবং পায়ের গোদ সারাতে সাহায্য করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৫][**][৪৭]

Wednesday, April 15, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৫। আসন: ময়ূরাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৫। আসন: ময়ূরাসন।
রণদীপম বসু

ময়ূরাসন (Mayurasana):

আসন অবস্থায় দেহটি অনেকটা ময়ূরের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম ময়ূরাসন।


পদ্ধতি:
পায়ের পাতা মুড়ে হাঁটুর উপর বসুন বা হাঁটু গেড়ে বজ্রাসনে বসুন। এবার হাতের তালু দুটো হাঁটু থেকে প্রায় এক হাত দূরে এমনভাবে মেঝেতে রাখুন যেন হাতের কব্জি দুটো একসঙ্গে এবং আঙুলগুলো পেছন ফিরে হাঁটুর দিকে থাকে। এখন দু’হাতের কনুই ভেঙে নাভির দুপাশে লাগিয়ে গভীরভাবে দম নিয়ে তলপেট শক্ত করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ুন এবং পা দুটো সোজা করুন। এবার হাতের তালুর উপর ভর রেখে পা জোড়া ও সোজা অবস্থায় উপরে তুলুন। দু’হাতের উপর শরীরটা মাটির অনেকটা সমান্তরালে ভেসে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০সেঃ থেকে ২০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর পা নামিয়ে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ এক হস্ত ময়ূরাসন (Eka Hastha Mayurasana):


পদ্ধতি:
ময়ূরাসনের অনুরূপ প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসে ডান হাতের তালু হাঁটু থেকে প্রায় এক হাত দূরে মেঝেতে রাখুন এবং একই ভঙ্গিতে দেহের ভার এক হাতের ওপর রেখে শরীরটাকে মেঝের সমান্তরালে ভাসিয়ে রাখুন। অন্যহাত শরীরের সাথে বাঁ জানুতে সেটে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০সেঃ থেকে ২০সেঃ এ অবস্থায় থেকে পা নামিয়ে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে হাত বদল করে বাঁ হাতের উপর দেহের ভার রেখে একইভাবে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ বদ্ধ ময়ূরাসন (Baddha Mayurasana):


পদ্ধতি:
আসনটিকে পদ্ম-ময়ূরাসনও (Padma Mayurasana) বলা হয়ে থাকে। প্রথমে মুক্ত-পদ্মাসনে বসুন। হাতের তালু সামনে প্রায় একহাত দূরে মেঝেতে রাখুন যেন হাতের আঙুল পেছনদিকে মেলে থাকে। এবার হাতের কনুই ময়ূরাসনের মতো নাভির কাছে লাগিয়ে পা বদ্ধ অবস্থায় উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ১০সেঃ থেকে ২০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর পা নামিয়ে হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


ময়ূরাসনের উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে মলদ্বারের পেশী সঙ্কুচিত হয় বলে তলপেটে আভ্যন্তরীণ চাপ পড়ে, ফলে তলপেটে প্রধান রক্তবাহী শিরা আংশিকভাবে রুদ্ধ হওয়ায় পাকস্থলী, যকৃত, প্লীহা এবং প্যানক্রিয়াস ও এ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলোতে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। ফলে এগুলো সবল ও অধিক কর্মক্ষম হওয়ায় পেটের কোন রোগ সহজে হয় না। এতে পরিপাকশক্তি প্রচণ্ড বেড়ে যায়, এ্যাড্রিনাল গ্রন্থি অধিক কর্মক্ষম হওয়ায় হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা ও রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ আসনে হাতের শক্তি প্রচণ্ডভাবে বৃদ্ধি পায়।

নিষেধ:
ময়ূরাসনে পেট ও বুকে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে যাদের কোনরকম হৃদরোগ আছে বা যাদের প্লীহা, যকৃৎ রোগা বা অস্বাভাবিক বড়, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আসনটি করা উচিৎ নয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৪][**][৪৬]

Tuesday, April 14, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৪। আসন: গর্ভাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৪। আসন: গর্ভাসন।
রণদীপম বসু

গর্ভাসন (Garbhasana)

পদ্ধতি:
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। এবার হাঁটু উঁচু করে দু’হাত পায়ের ভিতর দিয়ে নিয়ে এসে দু’হাতের তালু চোয়ালের উপর রেখে পাছার উপর বসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর হাত-পা আলগা করে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের পা বদল করে একইভাবে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
আসনটিতে দেহের সকল অংশের কম-বেশি উপকার হয়। এ আসন অভ্যাসে দেহের প্রতি অঙ্গে ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ায় দেহের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ও মুখমণ্ডল লাবণ্যমণ্ডিত হয়। আসনটি ধনুরাসনের সঙ্গে অভ্যাস রাখলে দেহের কোন অংশে বাত, সায়টিকা, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস স্লীপড ডিস্ক জাতীয় কোন রোগ হতে পারে না। আসনটি মহিলাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী- গর্ভাশয়ের সকল ত্র“টি দূর করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪৩][**][৪৫]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৩। আসন: সিংহাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪৩। আসন: সিংহাসন।
রণদীপম বসু

সিংহাসন (Simhasana)
আসন অবস্থায় দেহ অনেকটা সিংহের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম সিংহাসন।


পদ্ধতি:
প্রথমে বজ্রাসনে ও পরে মণ্ডুকাসনে বসুন। অর্থাৎ হাঁটু ভেঙে দু’পা ভাঁজ করে জোড়া অবস্থায় পায়ের চিৎ হওয়া তালুর ফাঁকে মেঝেতে বসুন যেন দুপায়ের বুড়ো আঙুল পরস্পর ছুঁয়ে থাকে এবং পায়ের মুড়া দুটো নিতম্বের দুপাশে ছড়িয়ে থাকে। এবার নিতম্ব একটু তুলে পায়ের আঙুলের উপর ভর করে সোজা হয়ে বসুন এবং হাঁটু দুটো যথাসম্ভব দু'পাশে ছড়িয়ে দিন। এখন হাতের আঙুলগুলো ছড়িয়ে হাতের তালু দুটো জানুর উপর বা হাঁটুতে বা হাঁটুর সামনে মেঝেতে সিংহের থাবার মতো রাখুন। এবার দু’ চোয়াল প্রসারিত করে মুখ-বিবর যতটা সম্ভব ফাঁক করে জিহ্বাটাকে সাধ্যমতো বের করুন এবং চিবুক কণ্ঠসংলগ্ন করুন। দৃষ্টি নাসাগ্রে বা দুই ভ্রূ’র মাঝখানে নিবদ্ধ করে গলা কাঁপিয়ে সিংহনাদের মতো আওয়াজ করে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়তে থাকুন।

এরপর স্বাভাবিকভাবে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে আগের মতো শ্বাস ছাড়তে থাকুন। এইভাবে একবারে যতক্ষণ সম্ভব সহজভাবে করার চেষ্টা করুন। তারপর বিশ্রাম নিয়ে আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে কণ্ঠের চার পাশের পেশীর কর্মক্ষমতার অভাবজনিত তোতলামি দূর হয়। টনসিল সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এ আসন শ্রবণশক্তি বাড়ায়। কানের পর্দা পুরু হওয়ার জন্য যাঁরা কানে কম শোনেন, আসনটি অভ্যাসে তাঁরা উপকার পেতে পারেন। স্বরের কর্কশতা এই আসন অভ্যাসে বহুল পরিমাণে দূর হয় এবং সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের গলার স্বর মিষ্ট হয়। এ আসনের সঙ্গে সর্বাঙ্গাসন, মৎস্যাসন ও হলাসন অভ্যাস করলে আরও দ্রুত ফললাভ হয়।


আসন বৈচিত্র্য:
এই সিংহাসনে কিছু বৈচিত্র্যকর চর্চা লক্ষ্য করা যায়। গোমুখাসনে বসে কিংবা পদ্মাসনে বসে হাত দুটো সামনে মেঝেতে রেখে পদ্মাসনরত হাঁটুতে ভর করে হামাগুড়ির ভঙ্গিতেও এ আসন চর্চা করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে জিহ্বা বের করা এবং শ্বাস নেয়া ও সশব্দ ছাড়ার প্রক্রিয়া একই থাকে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪২][**][৪৪]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪২। আসন: কোণাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪২। আসন: কোণাসন।
রণদীপম বসু

কোণাসন (Konasana):


পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাত দুটো দেহের পেছনে নিয়ে কোমরের দুপাশে হাতের দুই তালু মেঝেতে বিছিয়ে দিন যেন আঙুলগুলো বাইরের দিকে থাকে। এখন হাতের তালুর উপর ভর রেখে মেরুদণ্ড সোজা ও টানটান করুন এবং পা দুটো হাঁটু না ভেঙে যতটুকু সম্ভব দুপাশে ছড়িয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

আসন বৈচিত্র্য:
এ আসনে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন- উপবিষ্ট কোণাসন (Upavishta Konasana), সুপ্ত কোণাসন (Supta Konasana), বদ্ধ কোণাসন (Baddha Konasana), সুপ্ত বদ্ধ কোণাসন (Supta Baddha Konasana) প্রভৃতি।

@ উপবিষ্ট কোণাসন (Upavishta Konasana):

পদ্ধতি (ক) :

প্রথমে কোণাসনে বসুন। হাঁটু না ভেঙে পা দুটো দুপাশে যতটুকু সম্ভব ছড়ানো থাকবে। এবার হাত দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে শরীটাকে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকাতে থাকুন এবং সম্ভব হলে বুকটাকে মেঝেতে বিছিয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ) :

প্রথমে কোণাসনে বসুন। হাঁটু না ভেঙে পা দুটো দুপাশে যতটুকু সম্ভব ছড়ানো থাকবে। এবার হাত দুটো শরীরের দুপাশে প্রসারিত করে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের এবং বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল বা পায়ের চেটো ধরুন। এখন মাথা একটু উপরের দিকে তুলে সামনে তাকিয়ে শরীটাকে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকাতে থাকুন এবং সম্ভব হলে বুকটাকে মেঝেতে বিছিয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ সুপ্ত কোণাসন (Supta Konasana):

পদ্ধতি:

প্রথমে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাত দুটো শরীরের সমান্তরালে রেখে মেঝেতে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন মেঝেতে বিছানো হাতের উপর ভর দিয়ে পা দুটো হাঁটু না ভেঙে সটান উপরে তুলুন। কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে কোমরটাকে তুলে মাথার উপরে এবং পায়ের অগ্রভাগ শরীরের পেছনদিকে নিয়ে আসুন। এবার হাত দুটো মাথার পেছনের দিকে নিয়ে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের এবং বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে হাত ও পা দুদিকে যতটুকু সম্ভব ছড়িয়ে দিন। এ অবস্থায় গোটা শরীর মূলত ঘাড়ের উপর থাকবে। ধীরে ধীরে হাতে ধরা পায়ের আঙুল মাথার দুপাশে মেঝেতে ছুঁইয়ে ধরে রাখুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর ধীরে ধীরে হাত-পা আলগা করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ বদ্ধ কোণাসন (Baddha Konasana):


পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাঁটু ভেঙে দু' পায়ের পাতার নিচের দিকটা পরস্পরের সঙ্গে লাগান। এখন দু’ হাত দিয়ে দু’ পায়ের গোছা ধরে আস্তে আস্তে টেনে এনে দু’ উরুর সংযোগস্থলের মেঝেতে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে দু’ হাঁটুতে চাপ দিয়ে হাঁটু মেঝেতে লাগান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এ আসনটিকে কখনও কখনও ভদ্রাসন (Bhadrasana) বা গোরক্ষাসন (Gorakshasana) বা ব্রহ্মচর্য আসনও (Brahmacharya Asana) বলা হয়ে থাকে।

আসনের এ অবস্থায় দুহাত দিয়ে দু’ পায়ের যুক্ত গোছা ধরে রেখে কোমরের উপরিভাগ থেকে শরীরটাকে সামনের দিকে যতটুকু সম্ভব ঝুঁকিয়ে নিন। সম্ভব হলে কপাল পায়ের আঙুলে লাগানোর চেষ্টা করুন।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ সুপ্ত বদ্ধ কোণাসন (Supta Baddha Konasana):


পদ্ধতি:
প্রথমে বদ্ধ কোণাসনে বসুন। দু’ পায়ের পাতার নিচের দিকটা পরস্পরযুক্ত অবস্থায় দু’ উরুর সংযোগস্থলে লাগানো থাকবে। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ দু’ হাতের উপর ভর দিয়ে পেছনের দিকে চিৎ হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন এবং হাত দুটো পরস্পর কনুই ধরা অবস্থায় দু’ পাশ থেকে মাথাটাকে ঘিরে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


কোণাসনের উপকারিতা:
এই আসন হাত ও পায়ের ধমনী, শিরা-উপশিরা, স্নায়ু ও পেশী সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং পায়ের গঠন দৃঢ় ও সুগঠিত হয়। আসনটিতে উরুর সন্ধিস্থলের স্থিতিস্থাপকতা ঠিক থাকায় মেয়েদের সন্তান প্রসবে দৈহিক কোন বাধা সৃষ্টি করে না। তবে এ আসন ব্রহ্মচর্য পালনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪১][**][৪৩]

Saturday, April 11, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪১। আসন: ত্রিকোণাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪১। আসন: ত্রিকোণাসন।
রণদীপম বসু

ত্রিকোণাসন (Trikonasana):
আসন অবস্থায় দেহটাকে ত্রিকোণ বা ত্রিভূজের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম ত্রিকোণাসন।
এ আসন একাধিক ধরণের। যেমন- উত্থিত ত্রিকোণাসন (Utthita Trikonasana), পরিবৃত্ত ত্রিকোণাসন (Parivritta Trikonasana), বদ্ধ ত্রিকোণাসন (Baddha Trikonasana) প্রভৃতি।

@ উত্থিত ত্রিকোণাসন (Utthita Trikonasana):

পদ্ধতি (ক):

পা দুটো সুবিধামতো দেড় থেকে দুই ফুট ফাঁক করে দাঁড়ান। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ বাঁ দিকে বাঁকিয়ে বাঁ হাতের তালু বাঁ পায়ের পাতার উপর রাখুন। প্রসারিত ডান হাত সোজা উপরের দিকে উঠিয়ে সেদিকে তাকান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং শরীরের উপরের অংশ ডান দিকে বাঁকিয়ে ডান হাতের তালু ডান পায়ের পাতার উপর রাখুন। বাঁ হাত সোজা উপরে থাকবে। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


পদ্ধতি (খ):
পদ্ধতি (ক) এর মতো একইভাবে চর্চা করতে হবে, কেবল উর্ধ্বে প্রসারিত হাতটি শরীর যেদিকে বেঁকে থাকবে সেদিকে মাথার সমান্তরালে থাকবে।

ত্রিকোণাসনের উভয় পদ্ধতিতে শরীর যেদিকে বেঁকে থাকবে সেদিকের পা সোজা বা হাঁটু কিছুটা ভাঁজ অবস্থায়ও থাকতে পারে।

@ পরিবৃত্ত ত্রিকোণাসন (Parivritta Trikonasana):


পদ্ধতি:
পা দুটো সুবিধামতো দেড় থেকে দুই ফুট ফাঁক করে দাঁড়ান। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ বাঁ দিকে বাঁকিয়ে ডান হাতের তালু বাঁ পায়ের পাতার উপর বা পাশে মেঝেতে রাখুন। প্রসারিত বাঁ হাত সোজা উপরে কিংবা মাথার সমান্তরালে থাকবে। শরীর যে দিকে বাঁকানো থাকবে সেদিকের পা সোজা কিংবা হাঁটু থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভাঁজ অবস্থায় থাকতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।

এরপর ধীরে ধীরে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং শরীরের উপরের অংশ ডান দিকে বাঁকিয়ে বাঁ হাতের তালু ডান পায়ের পাতার উপর রাখুন। ডান হাত সোজা উপরে থাকবে বা মাথার সমান্তরালে থাকবে। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ বদ্ধ ত্রিকোণাসন (Baddha Trikonasana):


ত্রিকোণাসনের উপকারিতা:
আসনটিতে দেহের সব অংশের কম-বেশি উপকার হয়। মেরুদণ্ডে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরুদণ্ড সরল ও নমনীয় হয়। তবে পায়ের কাজ খুব ভালো হয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪০][**][৪২]