Monday, May 25, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৭। প্রাণায়াম।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৭। প্রাণায়াম।
রণদীপম বসু

# প্রাণায়াম (Pranayama):

যে প্রক্রিয়া দেহের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং জরা, ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর হাত থেকে দেহকে রা করে, তাই প্রাণায়াম (Pranayama)। প্রাণায়ামের কাজ হলো বায়ুকে অর্থাৎ নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত করে দেহের প্রাণশক্তিকে বৃদ্ধি করা।
যোগ-শাস্ত্র অনুযায়ী বায়ুই দেহের প্রাণশক্তি এবং তা রস-রক্তকে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিচালিত করে। বায়ু প্রধানতঃ ‘প্রাণ’, ‘উদান’, ‘সমান’, ‘অপান’ ও ‘ব্যাণ’- এই পাঁচ ভাগে ভাগ হয়ে দেহের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। গলদেশে ‘উদান’, হৃদয়ে ‘প্রাণ’, নাভিদেশে ‘সমান’, গুহ্যদেশে ‘অপান’ এবং দেহের সর্বত্র ‘ব্যাণ’ কার্যরত।


এই পাঁচ প্রকার বায়ুর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ‘প্রাণ’ বায়ুর। শ্বাসগ্রহণ ও ত্যাগ, হৃদযন্ত্র পরিচালনা করা, খাদ্যবস্তুকে পাকস্থলীতে পাঠানো, ধমনী-শিরা-উপশিরা দিয়ে রক্তরস আনা-নেয়া করা, ধমনী, শিরা, উপশিরা, স্নায়ুজালকে কাজে প্রবৃত্ত ও সাহায্য করা প্রভৃতি অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলো নিয়ত এই প্রাণবায়ু করে যাচ্ছে। কাজেই দেহে প্রাণবায়ুর ভূমিকা প্রধান।
‘উদান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে শব্দ করা। এই বায়ুর সূক্ষ্মাংশ বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তিকে পুষ্ট করে। ‘উদান’ বায়ুর সাহায্যে আমরা হাসি, কাঁদি, গান করি, শব্দ করি ইত্যাদি। ‘সমান’ বায়ু আমাদের জঠরাগ্নিকে উদ্দীপ্ত করে, পাকস্থলী থেকে জরাজীর্ণ খাদ্যবস্তুকে গ্রহণী নাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর সার ও অসার অংশে ভাগ করে অসার অংশকে মলনাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ‘অপান’ বায়ুর কাজ হচ্ছে প্রাণবায়ুকে সাহায্য করা এবং মেয়েদের রজঃনিঃসরণ, সন্তানধারণ ও সন্তান প্রসবে সাহায্য করা ইত্যাদি। আর ‘ব্যাণ’ বায়ুর কাজ হচ্ছে প্রাণবায়ুকে রক্ত পরিচালনায় সাহায্য করা, পেশী সঙ্কোচন ও প্রসারণে সাহায্য করা এবং দেহ থেকে ঘাম বের করে দেয়া।
যোগ-শাস্ত্রে বলা হয়, এই পাঁচটি বায়ুর একটি কূপিত হলে দেহে রোগাক্রমণ ঘটে, আসে মৃত্যুর হাতছানি।


যোগ-শাস্ত্র মতে বায়ু গ্রহণকে ‘পূরক’, ধারণকে ‘কুম্ভক’ এবং ত্যাগকে ‘রেচক’ বলা হয়। এই তিন প্রকার কাজকে একসঙ্গে বলা যেতে পারে প্রাণায়াম। অন্যদিকে প্রাণ ও অপান-বায়ুর পরস্পর সংযোগকেও প্রাণায়াম বলা হয়ে থাকে। প্রাণায়াম প্রক্রিয়ায় শ্বাস গ্রহণ করতে সাধারণত যে সময় নেয়া হয়, শ্বাস ত্যাগ করতে প্রায় তার দ্বিগুণ সময় নিতে হয়। এ বিষয়ে নানা জনের নানা মত। অনেকে বলেন পূরক, কুম্ভক ও রেচকের অনুপাত ২ ঃ ১ ঃ ২ হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে কুম্ভকের সময়কালকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। তা হতে হবে আয়াসহীন ও সুখকর। তবেই শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। অর্থাৎ পূরক, কুম্ভক, রেচক যত সময় নিয়েই করা যাক না কেন, আয়াসহীন হওয়া চাই। শরীরের ক্ষতি তখনই হয়, যখন জোর করে ফুসফুসের শক্তির বিচার না করে শ্বাস-ব্যায়াম করা হয়। তাই প্রাণায়াম অভ্যাসের সময়কাল আপেক্ষিক এবং ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। প্রাণায়াম ততক্ষণ করা যেতে পারে, যতক্ষণ ফুসফুস ক্লান্ত না হয়। যখন দেখা যাবে, সে আর অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে পারছে না, তখন তার প্রাণায়াম করা উচিৎ নয়।


বায়ুর প্রধান উপাদান চারটি। অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন ও কার্বন। ফসফরাস, সালফার প্রভৃতি আরও কয়েকটি উপাদান আছে। সেগুলোও মূলত বায়ুরই পরিণতি। শ্বাসের সঙ্গে আমরা যে পরিমাণ বায়ু দেহে গ্রহণ করি, তা ঠিকমত কাজে লাগাতে বা দেহ উপাদানে পরিণত করতে পারলে আমাদের খাদ্য-সমস্যা অনেকটাই মিটে যেতো। অনেক যোগী দিনের পর দিন কোন খাবার না খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন। অথচ আমরা সাধারণ মানুষ একদিন না খেলেই আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। দেহ-বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দেহের শতকরা বাষট্টি ভাগ অক্সিজেন দ্বারা গঠিত। শ্বাসের সঙ্গে আমরা যে বায়ু গ্রহণ করি এবং এতে যে শতকরা একুশ ভাগ অক্সিজেন থাকে, তার মাত্র চার ভাগ আমরা দেহের কাজে লাগাতে পারি। বাকি প্রায় সতের ভাগ আবার নিঃশ্বাসের সাথে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। এই অভাব আমাদেরকে খাদ্যবস্তু দ্বারা পূরণ করতে হয়।


আমরা যদি এমন কিছু প্রক্রিয়া অভ্যাস করতে পারি, যার দ্বারা প্রচুর পরিমাণে বায়ু শরীরের ভেতরে নিতে পারি এবং তা দেহোপযোগী উপাদানে পরিণত করতে পারি তবে দেহের খাদ্য বা পুষ্টি-সমস্যা অনেকটা মিটে যায়। আবার যদি গভীরভাবে রেচক করতে পারি অর্থাৎ নিঃশ্বাস ছাড়তে পারি, তবে দেহের অপ্রয়োজনীয় কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হয়ে যেতে পারে এবং দেহও বিষমুক্ত হয়। কেবল প্রাণায়াম দ্বারাই এই কাজগুলো যথাযথ করা যেতে পারে। তাই প্রাণায়ামকে উত্তম শ্বাস-ব্যায়াম বলা হয়। এতে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। সুতরাং প্রাণায়াম অভ্যাস দীর্ঘ ও কর্মক্ষম জীবন লাভের একটি উৎকৃষ্ট উপায়।


আমাদের শরীরটা একট দেহ-কারখানা। এখানে যেসব যন্ত্র আছে যেমন হৃদযন্ত্র, স্নায়ু, গ্রন্থি, ধমনী, শিরা, উপশিরা প্রভৃতি, সেগুলো সঠিকভাবে কাজ করলেই কেবল সুস্বাস্থ্য লাভ সম্ভব। স্বাস্থ্য রক্ষায় স্নায়ুজালের বিরাট ভূমিকা। শ্বাস-প্রশ্বাস, পরিপাক, রক্ত-রস সঞ্চালন প্রভৃতি কাজ স্নায়ুজালের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার নালীহীন গ্রন্থিগুলোর ভূমিকাও দেহে কোন অংশে কম নয়। এইসব গ্রন্থিনিঃসৃত রস দেহকে রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে, দেহযন্ত্রগুলোকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখে এবং শক্তি যোগায়। এই গ্রন্থিগুলো যদি প্রয়োজনমতো রস নিঃসরণ না করে, তবে অন্যান্য দেহযন্ত্রের মতো স্নায়ুতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তা একদিন অকেজো হয়ে যায়। তাই নালীহীন গ্রন্থির সক্রিয়তার উপর স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা নির্ভর করে।


অন্যদিকে অক্সিজেনযুক্ত বিশুদ্ধ বায়ু ও রক্ত সংবহন ছাড়া নালীহীন গ্রন্থি ও স্নায়ুমণ্ডলী সতেজ ও সক্রিয় থাকতে পারে না। শ্বাসযন্ত্র যদি ঠিকমতো কাজ না করে, আবশ্যকীয় অক্সিজেন ফুসফুসে যেতে পারে না এবং দেহের কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া প্রভৃতি বিষও বের হয়ে যেতে পারে না। শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকযন্ত্র কর্মক্ষম না থাকলে দেহে এইসব বিষ জমতে শুরু করে। ফলে এক এক করে দেহযন্ত্রগুলো বিকল হয়ে আসতে থাকে। রক্তবাহী শিরা-উপশিরা এই বিষ ফুসফুসে টেনে আনে এবং নিঃশ্বাসের সঙ্গে তা বের হয়ে যায়। তেমনি মূত্রাশয় ও মলনাড়ী দেহের বিষ ও অসার পদার্থ বের করে দেয়।


মূত্রাশয় ও মলনাড়ী তলপেটে এবং ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড আমাদের বুকে অবস্থিত। এর মাঝে রয়েছে শক্ত পেশীর দেয়াল ‘ডায়াফ্রাম’। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এই ডায়াফ্রামের যে উত্থান-পতন হয় এবং তলপেটের পেশীসমূহের যে সঙ্কোচন ও প্রসারণ হয়, তা দ্বারা প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র প্রভৃতিতে মৃদু কম্পন ও ঘর্ষণ লাগে। এতে করে এইসব যন্ত্রগুলোর ভালো ব্যায়াম হয়। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে প্রাণায়াম শ্বাসযন্ত্র থেকে শুরু করে দেহের প্রধান প্রধান যন্ত্রগুলো সবল ও সক্রিয় রাখে। এছাড়া আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে এতো অনিয়ম যে ফুসফুস ঠিকমতো সবখানি উঠানামা করে না। সাধারণভাবে আমরা যখন দম নেই ও ছাড়ি তখন ফুসফুস অক্সিজেন গ্রহণের দ্বারা ২/৩ অংশ প্রসারিত হয়। ফলে ফুসফুসের ঠিক প্রয়োজনমতো ব্যায়াম হয় না। এতে ফুসফুস আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসতে থাকে। শ্বাসগ্রহণের সময় রোগ-জীবাণু ঐ দুর্বল ফুসফুসে গিয়ে বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। ফলে দেহে নানা দূরারোগ্য রোগ দেখা দেয়। প্রণায়াম অভ্যাসের দ্বারা ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের খুব ভালো ব্যায়াম হয় এবং আমরা ফুসফুসকে সম্পূর্ণভাবে প্রসারিত করতে পারি। ফলে শ্বাসযন্ত্র সবল ও সুস্থ থাকে আর তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।


একজন সুস্থ মানুষের সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি মিনিটে ১৭/১৮ বার। প্রাণায়াম অভ্যাসের মাধ্যমে এই সাধারণ গতিবিধিকে ইচ্ছামতো কমিয়ে আনতে পারা যায়। এতে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড বিশ্রাম পায়। এবং আমরা আমাদের চঞ্চল মনকে শান্ত করে নিজের কাছে বশীভূত করতে পারি।

প্রাণায়াম অভ্যাস করতে যে চারটি বস্তুর আয়ত্ত একান্ত প্রয়োজন তা হলো- (১) উপযুক্ত স্থান, (২) বিহিত কাল, (৩) পরিমিত আহার এবং (৪) নাড়ীশুদ্ধি।
এই নাড়ীশুদ্ধি বা নাড়ী শোধন প্রাণায়াম কোন প্রাণায়ামের অন্তর্ভূক্ত না হলেও যে কোন প্রাণায়াম অভ্যাসের আগে তা অভ্যাস করা বিশেষ প্রয়োজন। নাড়ী শোধন প্রাণায়াম বা অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম অভ্যাসের ফলে প্রাণায়াম অভ্যাসকারী খুব সহজেই যে কোন প্রাণায়াম অভ্যাসের পদ্ধতি সহজেই আয়ত্ত করতে পারবে।

প্রাণায়াম অভ্যাসকারীদের যতদূর সম্ভব কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলা উচিত-
১) সকালে বা সন্ধ্যায় নির্মল বায়ুতে প্রাণায়াম অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়। যেখানে বিশুদ্ধ বায়ু পাওয়া সম্ভব নয়, সেখানে সকালে সুর্যোদয়ের পূর্বে প্রাণায়াম অভ্যাস করা উত্তম।
২) প্রাতঃক্রিয়াদির পূর্বে, স্নানের পরে অথবা কোন শ্রমসাধ্য কাজের বা ব্যায়ামের ঠিক পরে প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিৎ নয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তবেই তা করা যেতে পারে।
৩) ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় প্রাণায়াম করা আবশ্যক নয়। এরূপ ক্ষেত্রে কফ্-প্রবণ ব্যক্তির রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত প্রাণায়াম করা নিষেধ। তবে, রোদ উঠলে করা যেতে পারে।
৪) ভরপেটে আসন, মুদ্রা, প্রাণায়াম কোনটাই করা উচিৎ নয়।
৫) শীর্ষাসনের পরে যেমন আর কোন আসন করা ঠিক নয়, তেমনি প্রাণায়ামের পর তখনকার মতো আর কোন ব্যায়াম করা উচিৎ নয়।
৬) প্রাণায়াম আট-নয় বছর বয়স থেকে আজীবন করা যেতে পারে। তবে অধিক বয়সে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
৭) তাড়াহুড়ো করে, চিন্তাযুক্ত মন নিয়ে প্রাণায়াম, আসন, মুদ্রা কোনটাই করা ঠিক নয়। মন শান্ত, ধীর ও চিন্তাশূন্য রাখার চেষ্টা করতে হবে। আসন ও মুদ্রার মতো প্রাণায়াম অভ্যাসের সময়ও একাগ্রতা থাকা আবশ্যক।

প্রাণায়াম চার প্রকার- (১) সহজ প্রাণায়াম, (২) লঘু প্রাণায়াম, (৩) বৈদিক প্রাণায়াম ও (৪) রাজযোগ প্রাণায়াম। কোন গৃহীর পক্ষে এই চার ধরনের প্রাণায়াম আয়ত্ত করা সহজসাধ্য নয়। সদগুরু বা প্রাণায়াম সিদ্ধ যোগীর সাহায্য ব্যতীত কেবল বই পড়ে কোন শিক্ষার্থীর পক্ষে বৈদিক ও রাজযোগ প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত নয়। এতে বিপদের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। রাজযোগ প্রাণায়াম সাধারণতঃ গৃহীদের পক্ষে নিষিদ্ধ। কেবল যোগী ও সাধকই এই প্রাণায়াম অভ্যাসের অধিকারী। প্রথমোক্ত দু’ধরনের অর্থাৎ সহজ ও লঘু প্রাণায়ামই কেবল গৃহীরা দিনে দুইবার সকাল ও সন্ধ্যায় অভ্যাস করতে পারে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৬][**][৭৮]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৬। কুলকুণ্ডলিনী।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৬। কুলকুণ্ডলিনী।
রণদীপম বসু

# কুলকুণ্ডলিনী (Kulakundalini):

আমাদের শরীরের মধ্যে অসংখ্য নাড়ী আছে, তার মধ্যে ১৪টি প্রধান। এগুলো হলো- ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, সরস্বতী, বারূণী, পূষা, হস্তিজিহ্বা, যশস্বিনী, বিশ্বোদরী, কুহূ, শঙ্খিনী, পরদ্বিণী, অম্লম্বুষা ও গান্ধারী। জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান নাড়ীগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কুহূনাড়ী জননেন্দ্রিয়ের সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন করে আর শঙ্খিনী নাড়ী দেহের মলাদি নির্গমনে সহায়তা করে। এই কুন্দস্থানেই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করছেন। কুলকুণ্ডলিনী হচ্ছে সমস্ত শক্তির আধার। প্রাচীনকালের সিদ্ধিপ্রাপ্ত যোগী-ঋষিরা মানবদেহ ও মনের কুণ্ডলিত শক্তি-উৎস সম্পর্কে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন সে মত অনুসরণ করেই যুগে যুগে সাধকপুরুষরা যোগসাধনায় ব্যাপৃত থেকে এই শক্তিকে জাগরিত করে সিদ্ধিলাভের অন্বিষ্ট খুঁজেছেন।

বলা হয়ে থাকে, আমাদের শরীরের মধ্যে মৃণালতন্তুর ন্যায় সূক্ষ্ম জগন্মোহিনী আদ্যাশক্তি ও প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি নিজের মুখব্যাদান করে ব্রহ্মদ্বারের মুখ আবৃত করে জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মধ্যবর্তী কুন্দস্থানে সর্বদা নিদ্রিত রয়েছেন। এ স্থানকে বলে মূলাধারচক্র। এটা সুষুম্না নাড়ীর একটি গ্রন্থি। আমাদের স্নায়ুরজ্জুর প্রধান ধারক মেরুদণ্ড মস্তিষ্কের নিম্নাংশ থেকে বের হয়ে গুহ্যদেশে এসে শেষ হয়েছে। যোগ-শাস্ত্রকারীদের মতে মেরুদণ্ডের বাঁদিকে ইড়া (Ida Nadi), মধ্যে সুষুম্না (Sushumna Nadi) ও ডানদিকে পিঙ্গলা (Pingala Nadi) নাড়ী বিরাজমান। আমাদের সঞ্চারণমান প্রাণবায়ু ইড়া-পিঙ্গলা নাড়ীর মধ্যে দিয়ে চক্রাকারে সতত আবর্তিত হচ্ছে। সুষুম্না একটি অতি সূক্ষ্ম, জ্যোতির্ময়, সূত্রাকার ও প্রাণময় পথ- মেরুদণ্ডের পথে যার অবস্থান। সুষুম্না নাড়ীর এই প্রাণময় পথে ছয স্থানে ছয়টি চক্র বিরাজ করছে, যাকে ষট্চক্র বলা হয়।
বিমুক্তিসোপান গ্রন্থে বলা আছে-
গুহ্যেলিঙ্গে তথা নাভৌ হৃদয়ে কণ্ঠদেশকে।
ভ্রূমর্ধ্যহেপি বিজানীয়াৎ ষট্চক্রান্তু ক্রমাদিতি।।
অর্থাৎ ভ্রূমধ্যে, কণ্ঠদেশে, হৃদয়ে, নাভিমূলে, লিঙ্গদেশে ও গুহ্যস্থানে ষট্চক্র বিরাজ করেন।

এই ষট্চক্র হচ্ছে, (১) ললাটে অর্থাৎ ভ্রূমধ্যে আজ্ঞাচক্র (Agnya Chakra), (২) আজ্ঞাচক্রের নিচে কণ্ঠমূলে বিশুদ্ধিচক্র (Vishuddhi Chakra), (৩) বিশুদ্ধিচক্রের নিচে হৃদিস্থানে অনাহত চক্র (Anahata Chakra), (৪) অনাহত চক্রের নিচে নাভিমূলে নাভিচক্র বা মণিপুর চক্র (Nabhi Chakra/Manipura Chakra), (৫) মণিপুর চক্রের নিচে লিঙ্গমূলে সুষুম্নার মধ্যে স্বাধিষ্ঠান চক্র (Swadhisthana Chakra), (৬) স্বাধিষ্ঠান চক্রের নিচে গুহ্য ও লিঙ্গের মধ্যস্থলে কুন্দস্থানে সুষুম্নানাড়ীর মুখদেশে মূলাধারচক্র (Mooladhara Chakra)। এই মূলাধার প্রদেশেই মুখব্যাদান করে ব্রহ্মদ্বারে সর্পাকৃতি কুলকুণ্ডলিনীর অধিষ্ঠান।

সুষুম্নার এই সূক্ষ্ম, জ্যোতির্ময়, সূত্রাকার ও প্রাণময় পথই মুক্তির পথ। মুক্তির এই পথ দিয়েই কুণ্ডলিনীকে উর্ধ্বদিকে চালিত করতে হয়। কুণ্ডলিনীর অবস্থান সম্বন্ধে সিদ্ধ-যোগীদের বক্তব্য হচ্ছে- ‘মেরুদণ্ডের নিম্নদেশে যে মূলাধার চক্র আছে তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থানটি হচ্ছে প্রজননশক্তি বীজের আধার। একটি ত্রিকোণ মণ্ডলে একটি ছোট সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে- যোগীরা এঁকে এই প্রতীকে প্রকাশ করেছেন। এই নিদ্রিত সর্পই কুণ্ডলিনী; এঁর ঘুম ভাঙানোই হচ্ছে রাজযোগের একটিমাত্র লক্ষ্য।’

কুণ্ডলিনীকে জাগরিত করার উপায় হিসেবে স্বামী বিবেকানন্দ বলেন- ‘ প্রাণায়ামের পূর্বে ঐ ত্রিকোণ মণ্ডলকে ধ্যানে দেখবার চেষ্টা কর। চোখ বন্ধ করে এঁর ছবি মনে মনে স্পষ্টরূপে কল্পনা কর। ভাবো এর চার পাশে আগুনের শিখা, তার মাঝখানে কুণ্ডলীকৃত সর্প ঘুমিয়ে রয়েছে। ধ্যানে যখন কুণ্ডলিনীশক্তি স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে তখন কল্পনায় তাকে মেরুদণ্ডের মূলাধারে স্থাপন কর; এবং তাকে অনুভব করার চেষ্টা কর। প্রাণায়ামসহ বিভিন্ন মুদ্রা ও বন্ধন অভ্যাস কালে কুম্ভকে শ্বাস রুদ্ধ রাখার সময় সুপ্ত কুণ্ডলিনীকে জাগাবার জন্যে ঐ রুদ্ধ বায়ু সবলে তার মস্তকে নিক্ষেপ করবে। যার কল্পনা শক্তি যত বেশি সে তত শীঘ্র ফল পায়, আর তার কুণ্ডলিনীও তত শীঘ্র জাগেন। যতদিন তিনি না জাগেন ততদিন কল্পনা কর- তিনি জাগছেন। আর ইড়া ও পিঙ্গলার গতি অনুভব করার চেষ্টা কর, জোর করে তাদের সুষুম্না পথে চালাতে চেষ্টা করো- এতে কাজ খুব তাড়াতাড়ি হবে। মনের সংযমের দ্বারাই কল্পনা করা সম্ভব।’

মহাসর্প অনন্ত যেমন রত্ন-নিধিসমাকীর্ণা পৃথিবীর একমাত্র আধার, তেমনি কুণ্ডলিনী শক্তি হঠ্তন্ত্রের আধার। ঐ কুণ্ডলিনী শক্তি জাগরিতা হলে শরীরে ষট্চক্রস্থিত অখিল পদ্ম ও গ্রন্থি ভেদ হয়ে যাওয়ায় প্রাণবায়ু সুষুম্নাচ্ছিদ্র দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। প্রাণায়াম অভ্যাসে যা বিশেষ প্রয়োজন।

প্রণয়মূলক চিন্তা বা পাশব-কার্য থেকে যে যৌনশক্তি উত্থিত হয়, তাকে উর্ধ্বদিকে মানব শরীরের মহাবিদ্যুৎ আধার মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারলে সেখানে সঞ্চিত হয়ে যৌনশক্তি ‘ওজঃ’ বা আধ্যাত্মিক শক্তিলাভে সাহায্য করে। এই ‘ওজস’ হচ্ছে মানুষের মনুষ্যত্ব- একমাত্র মনুষ্যশরীরেই এই শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব। যাঁর ভেতর সমস্ত পাশব যৌনশক্তি ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে, তিনি মহাপুরুষ বা দেবতার পর্যায়ে উন্নীত হন।

যোগীরা মনে মনে কল্পনা করেন যে এই কুণ্ডলিনী সর্প সুষুম্না পথে স্তরে স্তরে চক্রের পর চক্র ভেদ করে মস্তিষ্কের সহস্রধারে (Sahastrara Chakra) উপনীত হয়। মনুষ্য শরীরের শ্রেষ্ঠ শক্তি যৌন-শক্তি যে পর্যন্ত না ওজঃশক্তিতে পরিণত হয়, সে পর্যন্ত নারী বা পুরুষ কেউই ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক জীবন লাভ করতে পারে না।

কোন শক্তিই সৃষ্টি করা যায় না, তবে তাকে শুধু ঈপ্সিত পথে চালিত করা যেতে পারে। এটাই রাজযোগের উদ্দেশ্য। কিন্তু এটা সাধারণ গৃহীদের কাজ নয়। একমাত্র যোগীরাই যোগ প্রভাবে এই সমস্ত নাড়ী সম্বন্ধে সবিশেষ জানতে পারেন এবং তা অনুভবও করেন। রাজযোগ অভ্যাস করতে হলে প্রথমে হঠযোগ আয়ত্তে আনতে হয়। হঠযোগই রাজযোগের সোপান। আর এই হঠযোগের একটা বিরাট অংশ হলো অষ্টাঙ্গযোগ (Astanga Yoga)। কারণ এর অঙ্গ হলো আটটি- (১) যম (Yama), (২) নিয়ম (Niyama), (৩) আসন (Asana), (৪) প্রাণায়াম (Pranayama), (৫) প্রত্যাহার (Pratyahara), (৬) ধারণা (Dharana), (৭) ধ্যান (Dhyana) ও (৮) সমাধি (Samadhi)।

তবে সাধারণ চর্চাকারীদের জন্য মূলত প্রথম চারটি অঙ্গের নির্বাচিত অংশই অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়।

[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৫][**][৭৭]

Friday, May 22, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|মুদ্রা|


---------------------------------------------------------
# ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|মুদ্রা|
--------------------------------

---------------------------------------------------------

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৫। মুদ্রা : বন্ধ-ত্রয়ী মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৫। মুদ্রা : বন্ধ-ত্রয়ী মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# বন্ধ-ত্রয়ী মুদ্রা (Bandha-trayi Mudra):
হঠযোগ-প্রদীপিকায় ৩/২৩ নং শ্লোকে মূলবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও জালন্ধরবন্ধ-এর একত্রে অভ্যাসের উল্লেখ রয়েছে। এই তিন মুদ্রার একত্র অভ্যাসকেই বন্ধ-ত্রয় মুদ্রা বলা হয়।
যে কোন ধ্যানাসনে বসে কণ্ঠদেশ সঙ্কুচিত করে চিবুক কণ্ঠকূপে নিবদ্ধ করাকে জালন্ধরবন্ধ মুদ্রা (Jalandhara-bandha Mudra) বলে। যোগ-শাস্ত্রকারীদের মতে জালন্ধরবন্ধ মুদ্রায় ষোড়শ প্রকার আধারবন্ধ সাধিত হয়।

পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বসে প্রথমে মূলাধার (কুন্দস্থান) সম্পূর্ণ আকুঞ্চন করে মূলবন্ধ, পরে নাভিদেশ আকুঞ্চন করে উড্ডীয়ানবন্ধ করতে হবে। তারপরে কণ্ঠদেশ সঙ্কুচিত করে চিবুক কণ্ঠকূপে নিবদ্ধ করে জালন্ধরবন্ধ করে ইড়া ও পিঙ্গলার পথ রুদ্ধ করে প্রাণবায়ুকে সুষুম্নার পথে ১৫/২০ সেকেন্ড প্রবাহিত করবার পর আকুঞ্চন শিথিল করে শবাসন অভ্যাস করতে হবে।
এভাবে সামর্থ অনুযায়ী কয়েকবার অভ্যাস করতে হবে।

উপকারিতা:
যোগশাস্ত্রীদের মতে, একত্রে বন্ধ-ত্রয় অভ্যাস করলে প্রাণের লয় অর্থাৎ স্থিরতা সাধিত হয়। ফলে সহজে বার্ধক্য, জরা ও ব্যাধি হবার সম্ভাবনা থাকে না। অভ্যাসকারীর মহাসিদ্ধি লাভ হয়। “বন্ধ-ত্রয়মিদং শ্রেষ্ঠং মহাসিদ্ধৈশ্চ সেবিতম্”।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৪][**][৭৬]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৪। মুদ্রা : শক্তি-চালনী মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৪। মুদ্রা : শক্তি-চালনী মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# শক্তি-চালনী মুদ্রা (Shakti-Chalani Mudra):
যোগ-শাস্ত্রকারীদের মতে, আমাদের শরীরের জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান নাড়ীগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। মূলাধারচক্রের এই কুন্দস্থানেই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করছে। যোগশাস্ত্রকারীরা এই কুণ্ডলিনীকে শক্তির আধার বলেছেন।
যে মুদ্রা অভ্যাসে কুণ্ডলিনীকে জাগরিত করে উর্ধ্বে চালনা করা যায় তাকে বলা হয় শক্তি-চালনী মুদ্রা (Shakti-Chalani Mudra)।

পদ্ধতি:
পদ্মাসন, বজ্রাসন, গোমুখাসন বা সহজ সিদ্ধাসনে বসুন। হাত হাঁটুর উপর রাখুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদেশ সবলে আকুঞ্চিত করুন এবং একই সাথে কুহূ ও শঙ্খিনী নাড়ীকে (জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে যার উৎপত্তি) উপরে আকর্ষণ করুন। অর্থাৎ মলদ্বার সঙ্কুচিত করে তলপেট উপরদিকে টেনে তুলুন। এই টেনে তোলার বা কুঞ্চিত করার ফলে নাভিপ্রদেশ প্রায় মেরুদণ্ডের সঙ্গে লেগে যাবে। এ অবস্থায় যতক্ষণ সহজভাবে সম্ভব দম বন্ধ রাখুন। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করে দিন।
এইভাবে দিনে দুই বেলা সকাল-সন্ধ্যায় দশ-পনেরবার করে মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।

উপকারিতা:
মুদ্রাটিতে যৌনগ্রন্থির বিশেষ উপকার হয়। এতে ধারণশক্তি, জীবনীশক্তি, স্মৃতিশক্তি, চিন্তাশক্তি ও ইচ্ছাশক্তি বৃদ্ধি পায়। এই মুদ্রা কামজয়ী ও উর্ধ্বরেতা হতে সাহায্য করে।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৩][**][৭৫]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৩। মুদ্রা : অশ্বিনী মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৩। মুদ্রা : অশ্বিনী মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# অশ্বিনী মুদ্রা (Aswini Mudra):
গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল প্রভৃতি জীব মলত্যাগ করে মলদ্বার বার বার সঙ্কুচিত ও প্রসারিত করে থাকে। এই প্রক্রিয়াটির নামই অশ্বিনী মুদ্রা (Aswini Mudra)।

পদ্ধতি:
বজ্রাসন, গোমুখাসন, বিপরীতকরণী মুদ্রা বা যে কোন ধ্যানাসন অবস্থায় শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদ্বার সঙ্কুচিত করুন আর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করে দিন। সহজভাবে এই সঙ্কোচন করার সময় মলদ্বার ধীরে ধীরে ভিতরদিকে আকর্ষণ করতে হবে। এভাবে যতক্ষণ সম্ভব করুন। অভ্যাস হয়ে গেলে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সামর্থানুযায়ী ১০ বার থেকে ২০ বার অভ্যাস করা উচিৎ।

উপকারিতা:
এই মুদ্রা অভ্যাসে অর্শ, ভগন্দর প্রভৃতি গুহ্যরোগ সেরে যায়। ধারণশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মলদ্বারের পেশী দৃঢ় হয়।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭২][**][৭৪]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭২। মুদ্রা : মহাবন্ধ মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭২। মুদ্রা : মহাবন্ধ মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# মহাবন্ধ মুদ্রা (Mahabandha Mudra):
যোগ-শাস্ত্রকারদের মতে, এই মুদ্রা অভ্যাসে জীবনীশক্তির প্রধান উৎস শুক্রধাতুর অপচয় বন্ধ করে বলে এই মুদ্রার নাম মহাবন্ধ মুদ্রা (Mahabandha Mudra)।

পদ্ধতি:
পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এবার হাঁটু ভেঙে বাঁ পায়ের গোড়ালি যোনীমণ্ডলে (লিঙ্গ ও গুহ্যের মধ্যবর্তী স্থান) এবং ডান পা বাম জানুর উপরে এমনভাবে রাখুন যেন পায়ের গোড়ালি ঠিক নাভিদেশে থাকে। হাত দুটো দু’হাঁটুর উপর থাকবে। এখন চিবুক বা থুতনি কণ্ঠকূপে নিবদ্ধ করে (জালন্ধরবন্ধ করে) শ্বাস নিতে নিতে মলদ্বার বা গুহ্যদেশ ও যোনিপ্রদেশ ধীরে ধীরে আকুঞ্চিত করে উপরদিকে টেনে তুলুন বা আকর্ষণ করুন। আকর্ষণের ফলে তলপেট কিছুটা মেরুদণ্ডের দিকে যাবে। শ্বাস নেযা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত যোনিপ্রদেশ ও গুহ্যদ্বার আকুঞ্চিত থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করুন এবং চিবুক মুক্ত করে দিন। এভাবে আট-দশবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।
এরপর পা বদল করে অর্থাৎ ডান পায়ের গোড়ালি যোনিমণ্ডলে সংযুক্ত করে বাঁ পায়ের গোড়ালি ঠিক তার উপরে নাভিদেশে রেখে চিবুক কণ্ঠকূপে নিবদ্ধ করে শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদেশ ও যোনিপ্রদেশ আকুঞ্চিত করে এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করে আট-দশবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।

উপকারিতা:
এই মুদ্রা অভ্যাস যৌনগ্রন্থিকে স্বাভাবিক ও সক্রিয় রাখতে বিশেষভাবে সাহায়্য করে। পুরুষের পিতৃগ্রন্থি এবং নারীর মাতৃগ্রন্থি সুস্থ ও সবল হয়। ফলে যৌনগ্রন্থি সংক্রান্ত সব রকম রোগ হতে মুক্ত হয়ে যৌবনোচিত স্বাস্থ্যে, সৌন্দর্যে দেহ লাবণ্যময় হয়ে ওঠে। মোটকথা, মহাবন্ধ মুদ্রা অভ্যাসে দেহ-মন সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক থাকে।
যোগ-শাস্ত্রকারদের মতে, মহাবন্ধ মুদ্রা যাবতীয় মুদ্রার মধ্যে শ্রেষ্ঠ। তা জরা ও মৃত্যুকে বিনষ্ট করে। এর প্রভাবে নিখিল অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭১][**][৭৩]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭১। মুদ্রা : মহামুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭১। মুদ্রা : মহামুদ্রা।
রণদীপম বসু

# মহামুদ্রা (Mahamudra):
যোগ-শাস্ত্রকারদের মতে, এই মুদ্রা অভ্যাসে বার্ধক্যকে দূরে সরিয়ে এবং বিবিধ রোগ আরোগ্য করে মহাশক্তি লাভ করা যায়। তাই এ মুদ্রার নাম মহামুদ্রা (Mahamudra)।
মুদ্রাটি প্রায় জানুশিরাসনের মত। তবে মহামুদ্রায় কপাল হাঁটুতে রাখতে হয় না, চিবুকটি বুক ও কণ্ঠনালীর সংযোগস্থলে লাগাতে হয়।


পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন। এবার ডান পায়ের হাঁটু ভেঙে গোড়ালি যোনীমণ্ডলে (লিঙ্গ ও গুহ্যের মধ্যবর্তী স্থান) রাখুন। বাঁ পা সামনের দিকে ছড়ানো থাকবে এবং মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। এখন চিবুক বা থুতনি কণ্ঠকূপে রাখুন (জালন্ধরবন্ধ করে) এবং দু’হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে মলদ্বার বা গুহ্যদেশ সবলে কুঞ্চিত করে তলপেট ভেতরের দিকে টেনে নিয়ে আসুন। শ্বাস নেযা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তলপেট আকুঞ্চিত এবং গুহ্যদ্বার সঙ্কুচিত থাকবে। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে তলপেট ও মলদ্বার শিথিল করুন এবং চিবুক মুক্ত করে দিন। এভাবে আট-দশবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।
এরপর পা বদল করে অর্থাৎ বাঁ পায়ের গোড়ালি যোনিমণ্ডলে সংযুক্ত করে ডান পা ছড়িয়ে দু’হাতে ডান পায়ের আঙুল ধরে চিবুক কণ্ঠকূপে নিবদ্ধ করে আগের মতো শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদ্বার কুঞ্চন ও তলপেট আকর্ষণ করে পূর্ণশ্বাস গ্রহণের পর আবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কুঞ্চন ও আকর্ষণ শিথিল করুন। এভাবে আট-দশবার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
এই মুদ্রা অভ্যাসে কোষ্ঠবদ্ধতা, লিভারের দোষ, অজীর্ণ, অর্শ ও ভগন্দরদোষ দূর হয়। যুবকদের সুপ্তিস্খলন দূর এবং স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই যৌন-মিলনের ধারণশক্তি বৃদ্ধি পায়। এতে তলপেট ও বস্তিপ্রদেশের সমস্ত গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের ভালো ব্যায়াম হয়। স্ত্রী-ব্যাধি হয় না। এই মুদ্র অভ্যাসে মেয়েদের মাতৃগ্রন্থিকে (ওভারি) সুস্থ ও সবল রাখে, ঋতুস্রাবজনিত ব্যাধি হতে পারে না। এছাড়া এই মুদ্রা জরায়ুর দুর্বলতা, জরায়ুর স্থানচ্যুতি রোধ করে।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭০][**][৭২]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭০। মুদ্রা : মূলবন্ধ মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭০। মুদ্রা : মূলবন্ধ মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# মূলবন্ধ মুদ্রা (Mulabandha Mudra):

মূল শব্দের অর্থ আদি বা উৎপত্তিস্থল। আমাদের স্নায়ুরজ্জুর প্রধান ধারক হিসেবে মেরুদণ্ড মস্তিষ্কের নিম্নাংশ থেকে বের হয়ে গুহ্যদেশে এসে শেষ হয়েছে। নাভিপ্রদেশে কতকগুলো অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্র আছে। এই গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রগুলো মলমূত্রত্যাগ, সন্তান প্রসব প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই গ্রন্থিগুলোর মধ্যে কিডনী (Kidney), পুরুষ দেহের টেস্টিস (Testes), প্রস্ট্রেট গ্রন্থি (Prostrate gland), ক্যুপার্স গ্ল্যান্ড (Cowper’s gland) এবং নারী দেহের ওভারী (Overy), বারথোলিনস গ্ল্যান্ড এবং স্কেনিস গ্ল্যান্ড (Bertholin’s gland and Skene’s gland) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেহের এই অংশেই মূলাধার চক্র অবস্থিত।


প্রাচীনকালের সিদ্ধিপ্রাপ্ত যোগী-ঋষিরা প্রতীকী ব্যঞ্জনায় এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা দেন এভাবে। আমাদের শরীরের মধ্যে অসংখ্য নাড়ী আছে, তার মধ্যে ১৪টি প্রধান। এগুলো হলো- ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, সরস্বতী, বারূণী, পূষা, হস্তিজিহ্বা, যশস্বিনী, বিশ্বোদরী, কুহূ, শঙ্খিনী, পরদ্বিণী, অম্লম্বুষা ও গান্ধারী। জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান নাড়ীগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কুহূনাড়ী জননেন্দ্রিয়ের সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন করে আর শঙ্খিনী নাড়ী দেহের মলাদি নির্গমনে সহায়তা করে। এই কুন্দস্থানেই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করছেন।
যে মুদ্রা অভ্যাসে বা প্রক্রিয়ায় এই মূলস্থানের অর্থাৎ কুন্দস্থানের গ্রন্থি, স্নায়ু প্রভৃতি সুস্থ, সক্রিয় ও অধিক কর্মক্ষম ও সবল হয়ে ওঠে, তাকেই মূলবন্ধ মুদ্রা (Mulabandha Mudra) বলে।

পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা সহজ সিদ্ধাসনে বসুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদেশ সবলে আকুঞ্চিত করুন এবং একই সাথে শঙ্খিনী নাড়ীকে (জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে যার উৎপত্তি) উপরে আকর্ষণ করুন। অর্থাৎ গুহ্যদেশ থেকে নাভিদেশ পর্যন্ত সবলে আকর্ষণ করুন। আকর্ষণের সময় মলদ্বারও সঙ্কুচিত হয়ে আসবে। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করে দিন। এভাবে দশবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবেলা প্রতিবারে দশবার করে দিনে কুড়িবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
এই মুদ্রা অভ্যাসে বস্তিপ্রদেশের গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুব ভালো ব্যায়ামের কাজ হয়। এতে করে কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ প্রভৃতি পেটের পীড়া হয় না, জঠরাগ্নি বা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, যৌনমিলনে ধারণশক্তি বৃদ্ধি পায়, কোনপ্রকার স্ত্রী-ব্যাধি সহজে হতে পারে না। অর্শরোগ ও বন্ধ্যাত্ব রোগ প্রতিকারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। ইন্দ্রিয় সংযম বা ব্রহ্মচর্য রক্ষায় মুদ্রাটি বিশেষভাবে কার্যকরি।
হঠযোগ-প্রদীপিকা-৬৫ স্তোত্রে যোগ-শাস্ত্রকাররা বলেন- ‘যুবা ভবতি বৃদ্দোহপি সততং মূলবন্ধনাং’। অর্থাৎ মূলবন্ধ মুদ্রা অভ্যাসে বৃদ্ধও যুবার মত স্বাস্থ্য ও শক্তির অধিকারী হয়।

নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৯][**][৭১]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৯। মুদ্রা : নৌলী মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৯। মুদ্রা : নৌলী মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# নৌলী মুদ্রা (Nauli Mudra):
উড্ডীয়ান মুদ্রা ভালোভাবে রপ্ত করতে না পারলে মৌলী (Nauli Mudra) করা সম্ভব হয় না। মূলত উড্ডীয়ানই নৌলীর ভিত্তি। দাঁড়িয়ে নৌলী চর্চা অপেক্ষাকৃত সহজ।

পদ্ধতি:
প্রথমে উড্ডীয়ান ভঙ্গিমায় দাঁড়ান। অর্থাৎ পা দুটো প্রায় দেড় ফুট ফাঁক করে দাঁড়িয়ে একটু সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটু সামান্য ভেঙে হাত দুটো উরুর উপর রাখুন। এবার হাঁটু দুটো আরেকটু ফাঁক করে দিন। ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশী দৃঢ় করে দেহের মধ্য অংশের মাংসপেশী শিথিল করে দিন। এবার ধীরে ধীরে দম ছেড়ে দিয়ে পেট একেবারে খালি করে দিন এবং দম বন্ধ রেখে এখন রেকটাস পেশীদ্বয়কে সঙ্কুচিত ও টেনে তলপেটের মাঝখানে নিয়ে আসুন। অর্থাৎ তলপেট ভেতরের দিকে টেনে পেটের দুপাশের পেশীগুলো চেপে পেটের মধ্যস্থলের পেশীটি শিথিল করে ফুলিয়ে দিন। এ অবস্থায় তলপেটের মাঝখানটা দৃঢ় হবে এবং দু’ধার নরম হবে। এই প্রক্রিয়াকে মধ্যম নৌলী বলে। সহজভাবে যতক্ষণ সম্ভব এই অবস্থায় থাকুন।
এরপর শ্বাস নিতে নিতে দেহ শিথিল করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এভাবে মুদ্রাটি তিনবার করুন।
মধ্যমনৌলী ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে এরপর কিছুদিন বামনৌলী ও ডাননৌলী অভ্যাস করুন। এরপর বাম, ডান ও মধ্যমনৌলী একসঙ্গে অভ্যাস করুন।
পদ্মাসনে বসে মুদ্রাটি একইভাবে করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পা বদল করে করে মুদ্রাটি অভ্যাস করতে হবে। অবশ্যই এ মুদ্রা খালিপেটে করা উচিৎ।

বাম ও ডাননৌলী:
রেকটাস পেশীদ্বয় পৃথকভাবে সঞ্চালিত করলে বাম ও ডাননৌলী হয়। যখন বাম রেকটাসকে সঙ্কুচিত করে ডান রেকটাসকে স্ফীত করা হয়, তাকে দক্ষিণ বা ডাননৌলী বলে। এ অবস্থায় তলপেটের বাঁ ধার নরম ও নিচু থাকবে।
একইভাবে ডান রেকটাসকে সঙ্কুচিত করে বাঁ রেকটাসকে ফুলিয়ে তুললে বামনৌলী বলা হয়।
বাম, ডান ও মধ্যম নৌলী ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে তিনটি একসঙ্গে দুই বা তিনবার করে মোট ছয় বা নয় বার করুন।

উপকারিতা:
উড্ডীয়ান মুদ্রার সব গুণ নৌলীতে রয়েছে। এতে অল্পসময়ে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। ভুক্তদ্রব্য সহজে হজম হয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, উদরাময় প্রভৃতি পেটের পীড়া নিরাময় হয় এবং যকৃৎ, প্লীহা, মূত্রাশয় ইত্যাদির দোষ ও দুর্বলতা দূর হয়। মুদ্রাটি অভ্যাস রাখলে একশিরা, হার্নিয়া, হাইড্রোসিল ও কোনরকম স্ত্রী-ব্যাধি হতে পারে না। মেয়েদের গর্ভাশয়ের দোষ-ত্রুটি ও ঋতুকালীন অনিয়ম মুদ্রাটি অল্পদিন অভ্যাসে স্বাভাবিক হয়ে আসে।

নিষেধ:
যাদের হৃদরোগ, হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, একশিরা, এ্যাপেন্ডিসাইটিস, অন্ত্রক্ষত প্রভৃতি রোগ আছে অথবা যাদের প্লীহা ও যকৃত অস্বাভাবিক বড়, তাদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত মুদ্রাটি অভ্যাস করা উচিত নয়। ১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৮][**][৭০]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৮। মুদ্রা : উড্ডীয়ান মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৮। মুদ্রা : উড্ডীয়ান মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# উড্ডীয়ান মুদ্রা (Uddiyana Mudra):
দম সম্পূর্ণ ছেড়ে বুকের পাঁজর ও ডায়াফ্রাম উপরদিকে তুলে ধরে এবং পেটের পেশী ভিতরের দিকে টেনে নিলে পেটের মধ্যে যে গর্ত হয়, তাকে উড্ডীয়ান বলে। এজন্যই মুদ্রাটির নাম উড্ডীয়ান মুদ্রা (Uddiyana Mudra)।
মুদ্রাটি বসে এবং দাঁড়িয়ে দু’ভাবে করা যায়।


পদ্ধতি:
প্রথমে পদ্মাসনে বা সহজ আসনে বসুন। এবার দু’হাত দিয়ে দু’হাঁটু মাটির সঙ্গে চেপে ধরুন অথবা পা দুটো প্রায় দেড় ফুট ফাঁক করে দাঁড়ান। এখন একটু সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটু সামান্য ভেঙে হাত দুটো উরুর উপর রাখুন। ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশী দৃঢ় করে দেহের মধ্য অংশের মাংসপেশী শিথিল করে দিন। এবার ধীরে ধীরে দম ছেড়ে দিয়ে পেট একেবারে খালি করে দিন এবং দম বন্ধ রেখে পেটের উপরিভাগ যতটা সম্ভব ভিতরের দিকে টেনে মেরুদণ্ডের সাথে লাগাতে চেষ্টা করুন। বুকের পাঁজর ও ডায়াফ্রাম উপরে উঠে আসবে এবং তলপেট সঙ্কুচিত হবে। যতক্ষণ সম্ভব এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর ঘাড় ও কাঁধের মাংসপেশী শিথিল করে ধীরে ধীরে দমভর শ্বাস নিন। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে মুদ্রাটি আবার করুন। এভাবে ১০/১২ বার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
পদ্মাসনে বসে মুদ্রাটি একইভাবে করতে হয়। তবে এ ক্ষেত্রে পা বদল করে করে মুদ্রাটি অভ্যাস করতে হবে। অবশ্যই এ মুদ্রা খালিপেটে করা উচিৎ।


উপকারিতা:
উড্ডীয়ান তলপেট ও বুকের ডায়াফ্রামের জন্য একটি উত্তম ব্যায়াম। এতে প্যানক্রিয়াস ও এ্যাড্রিনাল গ্রন্থিরও খুব ভালো ব্যায়াম হয়। মুদ্রাটি অভ্যাস রাখলে কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ, অম্লশূল, পিত্তশূল, অন্ত্রক্ষত প্রভৃতি রোগ সহজে হতে পারে না। উড্ডীয়ানে পেটের রেকটাস নামক পেশীদ্বয় সতেজ ও দৃঢ় থাকে এবং তলপেটের দেহযন্ত্রগুলো সবল ও সক্রিয় থাকে। এতে ক্ষুদ্র ও বৃহদন্ত্র সঙ্কুচিত হয় বলে অজীর্ণ ও সঞ্চিত খাদ্যাংশ ও মল সব মলনাড়ীতে চলে যায়। ফলে সহজে কোষ্ঠবদ্ধতা দূর হয়ে যায়। পেটে দুষিত বায়ু জমতে পারে না। এ মুদ্রা অভ্যাসে ডায়াফ্রাম বিশেষভাবে ওঠা-নামা করে বলে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সহজে কোন স্ত্রী-ব্যাধি হতে পারে না।

নিষেধ:
যাদের হৃদরোগ, হার্নিয়া, হাইড্রোসিল, একশিরা, এ্যাপেন্ডিসাইটিস, অন্ত্রক্ষত প্রভৃতি রোগ আছে অথবা যাদের প্লীহা ও যকৃত অস্বাভাবিক বড়, তাদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত মুদ্রাটি অভ্যাস করা উচিত নয়। ১২ বছরের কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের জন্যও মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৭][**][৬৯]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৭। মুদ্রা : বিপরীতকরণী মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৭। মুদ্রা : বিপরীতকরণী মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# বিপরীতকরণী মুদ্রা (Viparita Karani Mudra):
এই মুদ্রা অভ্যাসে দেহের কয়েকটি স্থানকে বিপরীত অবস্থানে নিয়ে দেহ-মনের উন্নতিলাভে প্রয়োগ করা হয় বলে এর নাম বিপরীতকরণী মুদ্রা (Viparita Karani Mudra)।
মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা কম থাকলে বা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন অভ্যাসকারীদের পক্ষে যোগব্যায়ামের সর্বাঙ্গাসন অভ্যাস করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রথম কিছুদিন বিপরীতকরণী মুদ্রা অভ্যাস করলে মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা ও নমনীয়তা ফিরে আসে। এই মুদ্রাকে কখনো কখনো অর্ধসর্বাঙ্গাসনও বলা হয়।


পদ্ধতি:
প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটোকে পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন। এবার দম নিতে নিতে পা দুটো জোড়া ও সোজা অবস্থায় যতদূর সম্ভব মাথার উপরে তুলুন। হাত দুটো কনুই থেকে ভেঙে কোমরের দু’পাশে ঠেকা দিয়ে ধরুন। এখন কনুইয়ের উপর ভর দিয়ে পা দুটো আরো উপরে তুলে পায়ের পাতা মাথা বরাবর নিয়ে আসুন। হাত দিয়ে দেহের নিম্নাংশ উপরদিকে ঠেলে ধরে রাখুন। কোমর ভেঙে থাকবে, তবে হাঁটু যেন না ভাঙে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর দম ছাড়তে ছাড়তে পা নামিয়ে হাত আলগা করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে মুদ্রাটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
যোগশাস্ত্র মতে মুদ্রাটি নিয়মিত অভ্যাসে ‘বলি’ ও ‘পলি’ থেকে দেহকে রা করে। ‘বলি’ অর্থ চর্মসঙ্কোচন আর ‘পলি’ অর্থ পক্ককেশ। চামড়ায় ভাঁজ পড়ে না এবং চুল পাকে না। অর্থাৎ দেহে যৌবন অটুট থাকে। মুদ্রাটিতে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, স্যালভারী প্রভৃতি গ্রন্থির ভালো কাজ হয়। ফলে দেহের সমস্ত দেহযন্ত্র সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। দেহ সহজে রোগাক্রান্ত হয় না। মুদ্রা অবস্থায় হৃৎপিণ্ড মাথার উপরে থাকে বলে সহজে প্রচুর বিশুদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে প্লাবিত হয়। পিনিয়াল গ্রন্থি, পিটুইটারি গ্রন্থি রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি-উপাদান সহজে সংগ্রহ করতে পারে। হৃৎপিণ্ড মুদ্রা অবস্থায় কিছুক্ষণ মাধ্যাকর্ষণ থেকে মুক্তি পায় বলে বিশ্রাম পাওয়ায় তার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। মুদ্রাটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্ল প্রভৃতি রোগ দূর করে, পেট ও তলপেটের পেশী দৃঢ় করে এবং ঐ অঞ্চলের স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। এতে পেট ও কোমরে অপ্রয়োজনীয় চর্বি হ্রাস পায়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৬][**][৬৮]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৬। মুদ্রা : যোগমুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৬। মুদ্রা : যোগমুদ্রা।
রণদীপম বসু

# যোগমুদ্রা (Yogamudra):
এই মুদ্রা অভ্যাসে দেহ রোগমুক্ত হয়ে যোগসাধনের উপযুক্ত হয় বলে এর নাম যোগমুদ্রা (Yogamudra)।


পদ্ধতি:
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। হাতের তালু চিৎ করে দু’হাত কোলে নাভির উপর রাখুন। এবার দম ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে দেহের উপরের অংশ সামনে নুইয়ে কপাল মাটিতে ঠেকান। খেয়াল রাখতে হবে পাছা যেন মাটি থেকে উঠে না যায়। যারা খুব মোটা বা যাদের পেটে প্রচুর চর্বি রয়েছে, তারা একটু অন্যভাবে অর্থাৎ দু’হাত কোলের উপর না রেখে হাত দুটো পেছন দিকে নিয়ে একহাত দিয়ে আরেক হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে মাথা নুইয়ে কপাল মাটিতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর দম নিতে নিতে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন এবং হাত-পা আলগা করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনে পা বদল করে মুদ্রাটি আবার করুন।
এভাবে ২/৩ বার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


উপকারিতা:
নিয়মিত অভ্যাসে এই মুদ্রা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত প্লীহা ও রুগ্ন যকৃতকে সুস্থ সবল করে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে সহায়তা করে এবং পুরাতন কোষ্ঠবদ্ধতা যত কঠিন হোক না কেন তা নিরাময় করে। স্থানভ্রষ্ট মলনালীকে নিজ স্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। মুদ্রাটি মুত্রাশয়কে সবল ও সক্রিয় করে, পেট পিঠ বস্তিদেশ ও পায়ের পেশীকে দৃঢ় এবং ঐ অঞ্চলের গ্রন্থি ও স্নায়ুজাল সতেজ রাখে। মেয়েদের সন্তান প্রসবের জন্য বা অন্য কোন কারণে যদি তলপেটের পেশী শিথিল হয়ে পড়ে, এই মুদ্রা অভ্যাসে অল্পদিনে তাদের শিথিল পেশী পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। এছাড়া মুদ্রাটি অভ্যাসে পেট ও কোমরে অপ্রয়োজনীয় মেদ বা চর্বি জমতে পারে না এবং জানু ও পাছার পেশীর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায়। এই মুদ্রা হাঁপানী সারাতে সাহায্য করে এবং তা অভ্যাসে কোন স্ত্রী-ব্যাধি সহজে আক্রান্ত করতে পারে না।


নিষেধ:
যাদের প্লীহা, যকৃৎ অস্বাভাবিক বড়, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত মুদ্রাটি তাদের করা উচিত হবে না।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৫][**][৬৭]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৫। মুদ্রা।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৫। মুদ্রা।
রণদীপম বসু

# মুদ্রা (Mudra):
‘মুদ্রা’ শব্দের অর্থ আনন্দ বা ছাপ। যে ক্রিয়া অভ্যাসে দেহ-মনের পরিপূর্ণ আনন্দ লাভের পাশাপাশি অশেষ কল্যাণ সাধিত হয়, তাই মুদ্রা (Mudra)। অর্থাৎ সেই সব ক্রিয়ার নামই মুদ্রা যা অভ্যাসে দেহ-মনের উপর এমন ছাপ পড়ে যাতে অটুট স্বাস্থ্যে দেহ-মনের উন্নতি লাভের পথ সুগম হয়।

বহিঃদৃষ্টিতে মুদ্রা আসনের অনুরূপ হলেও প্রয়োগ-প্রক্রিয়া ও প্রভাবের স্বাতন্ত্র্য বিবেচনায় মুদ্রা ও আসনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আসন অভ্যাসে আমাদের অস্থি, পেশী ও স্নায়ুতন্ত্রগুলো সুস্থ ও সবল হয়। অন্যদিকে মুদ্রা অভ্যাসে বহিঃস্রাবী ও অন্তঃস্রাবী গ্রন্থিসমূহ অধিক কর্মক্ষম ও সুস্থ থাকে। একটা বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট থাকতে হবে যে দৈহিক সুস্থতার জন্য স্নায়ুতন্ত্রের চাইতে গ্রন্থিসমূহের উপরই আমাদের অধিকতর নির্ভর করতে হয়। কেননা গ্রন্থিগুলোর সবলতা ও কর্মক্ষমতার উপর আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের সুস্থতা, সবলতা ও কর্মক্ষমতা নির্ভর করে। তাই আসনচর্চার চেয়ে মুদ্রাচর্চাকে যতই নিরীহ ভাবি না কেন, প্রকৃতপক্ষে মুদ্রাচর্চা আমাদের সুস্থ সবল দেহ-মনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ একটি উপায়।

অভ্যাসের প্রকৃতিগতভাবেও আসনের সাথে মুদ্রার উল্লেখযোগ্য ভিন্নতা রয়েছে। যেমন ধ্যানাসন বা স্বাস্থ্যাসন অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হয়। কিন্তু মুদ্রা অভ্যাসকালে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ-বর্জনে বৈচিত্র্য রয়েছে। কখনো হয়তো ধীরে ধীরে দীর্ঘশ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে হয়। আবার কখনো বা একেবারে দম বন্ধ করে বা ছেড়ে মুদ্রার অভ্যাস করতে হয়। তাই মুদ্রা অভ্যাসের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া কিরূপ হবে সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা এবং সে অনুযায়ী চর্চা করা আবশ্যক।

ঘেরণ্ড-সংহিতার মুদ্রাকথনের তিনটি শ্লোকে পঁচিশটি মুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন-

মহামুদ্রা নভোমুদ্রা উড্ডীয়ানাং জালন্ধরম্ ।
মূলবন্ধং মহাবন্ধং মহাবেধশ্চ খেচরী।। ১।।
বিপরীতকরণী যোনিবজ্রোলী শক্তিচালনী।
তাড়াগী মাণ্ডবী মুদ্রা শাম্ভবী পাঞ্চধারণা।। ২।।
অশ্বিনী পাশিনী কাকী মাতঞ্চী চ ভুজঙ্গিনী।
পঞ্চবিংশত মুদ্রানি সিদ্ধিদানীহ যোগীনাম্ ।। ৩।।

এগুলোর মধ্যে সবগুলো মুদ্রাই সবার ক্ষেত্রে অভ্যাসযোগ্য নয়। স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যেসব মুদ্রা সবার জন্য কার্যকরী ও অভ্যাসযোগ্য, আমরা না হয় সেগুলোই চর্চা ও অভ্যাস করবো। তবে সাবধানতা এই যে, কেবল যোগমুদ্রা ছাড়া অন্য কোন মুদ্রা ১২ বছরের কম বয়স্ক ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের করা উচিত হবে না।

[Images: from internet]

(চলবে...)
...
পর্ব: [৬৪][**][৬৬]
...

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৪। যুগলাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৪। যুগলাসন।
রণদীপম বসু

# যুগলাসন (Partner-Yogasanas)


@ যুগলাসন ১.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ২.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৩.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৪.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৫.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৬.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৭.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৮.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ৯.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১০.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১১.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১২.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১৩.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১৪.০ (Partner-Yogasana):

@ যুগলাসন ১৫.০ (Partner-Yogasana):

[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬৩][**][৬৫]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৩। অন্যান্য আসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৬৩। অন্যান্য আসন।
রণদীপম বসু

# অন্যান্য আসন (Another Asanas)


@ আসন ১.০ (asana):

@ আসন ২.০ (asana):

@ আসন ৩.০ (asana):

@ আসন ৪.০ (asana):

@ আসন ৫.০ (asana):

@ আসন ৬.০ (asana):

@ আসন ৭.০ (asana):

@ আসন ৮.০ (asana):

@ আসন ৯.০ (asana):

@ আসন ১০.০ (asana):

[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৬২][**][৬৪]