Tuesday, April 14, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪২। আসন: কোণাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৪২। আসন: কোণাসন।
রণদীপম বসু

কোণাসন (Konasana):


পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাত দুটো দেহের পেছনে নিয়ে কোমরের দুপাশে হাতের দুই তালু মেঝেতে বিছিয়ে দিন যেন আঙুলগুলো বাইরের দিকে থাকে। এখন হাতের তালুর উপর ভর রেখে মেরুদণ্ড সোজা ও টানটান করুন এবং পা দুটো হাঁটু না ভেঙে যতটুকু সম্ভব দুপাশে ছড়িয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

আসন বৈচিত্র্য:
এ আসনে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন- উপবিষ্ট কোণাসন (Upavishta Konasana), সুপ্ত কোণাসন (Supta Konasana), বদ্ধ কোণাসন (Baddha Konasana), সুপ্ত বদ্ধ কোণাসন (Supta Baddha Konasana) প্রভৃতি।

@ উপবিষ্ট কোণাসন (Upavishta Konasana):

পদ্ধতি (ক) :

প্রথমে কোণাসনে বসুন। হাঁটু না ভেঙে পা দুটো দুপাশে যতটুকু সম্ভব ছড়ানো থাকবে। এবার হাত দুটো সামনের দিকে ছড়িয়ে দিয়ে শরীটাকে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকাতে থাকুন এবং সম্ভব হলে বুকটাকে মেঝেতে বিছিয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

পদ্ধতি (খ) :

প্রথমে কোণাসনে বসুন। হাঁটু না ভেঙে পা দুটো দুপাশে যতটুকু সম্ভব ছড়ানো থাকবে। এবার হাত দুটো শরীরের দুপাশে প্রসারিত করে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের এবং বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল বা পায়ের চেটো ধরুন। এখন মাথা একটু উপরের দিকে তুলে সামনে তাকিয়ে শরীটাকে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকাতে থাকুন এবং সম্ভব হলে বুকটাকে মেঝেতে বিছিয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ সুপ্ত কোণাসন (Supta Konasana):

পদ্ধতি:

প্রথমে সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাত দুটো শরীরের সমান্তরালে রেখে মেঝেতে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন মেঝেতে বিছানো হাতের উপর ভর দিয়ে পা দুটো হাঁটু না ভেঙে সটান উপরে তুলুন। কিছুটা ঝাঁকি দিয়ে কোমরটাকে তুলে মাথার উপরে এবং পায়ের অগ্রভাগ শরীরের পেছনদিকে নিয়ে আসুন। এবার হাত দুটো মাথার পেছনের দিকে নিয়ে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের এবং বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে হাত ও পা দুদিকে যতটুকু সম্ভব ছড়িয়ে দিন। এ অবস্থায় গোটা শরীর মূলত ঘাড়ের উপর থাকবে। ধীরে ধীরে হাতে ধরা পায়ের আঙুল মাথার দুপাশে মেঝেতে ছুঁইয়ে ধরে রাখুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর ধীরে ধীরে হাত-পা আলগা করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। সামান্য বিশ্রাম নিয়ে এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ বদ্ধ কোণাসন (Baddha Konasana):


পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে বসুন। এবার হাঁটু ভেঙে দু' পায়ের পাতার নিচের দিকটা পরস্পরের সঙ্গে লাগান। এখন দু’ হাত দিয়ে দু’ পায়ের গোছা ধরে আস্তে আস্তে টেনে এনে দু’ উরুর সংযোগস্থলের মেঝেতে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে দু’ হাঁটুতে চাপ দিয়ে হাঁটু মেঝেতে লাগান। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এ আসনটিকে কখনও কখনও ভদ্রাসন (Bhadrasana) বা গোরক্ষাসন (Gorakshasana) বা ব্রহ্মচর্য আসনও (Brahmacharya Asana) বলা হয়ে থাকে।

আসনের এ অবস্থায় দুহাত দিয়ে দু’ পায়ের যুক্ত গোছা ধরে রেখে কোমরের উপরিভাগ থেকে শরীরটাকে সামনের দিকে যতটুকু সম্ভব ঝুঁকিয়ে নিন। সম্ভব হলে কপাল পায়ের আঙুলে লাগানোর চেষ্টা করুন।
এভাবে ২/৩ বার আসনটি করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

@ সুপ্ত বদ্ধ কোণাসন (Supta Baddha Konasana):


পদ্ধতি:
প্রথমে বদ্ধ কোণাসনে বসুন। দু’ পায়ের পাতার নিচের দিকটা পরস্পরযুক্ত অবস্থায় দু’ উরুর সংযোগস্থলে লাগানো থাকবে। এবার কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ দু’ হাতের উপর ভর দিয়ে পেছনের দিকে চিৎ হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন এবং হাত দুটো পরস্পর কনুই ধরা অবস্থায় দু’ পাশ থেকে মাথাটাকে ঘিরে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।


কোণাসনের উপকারিতা:
এই আসন হাত ও পায়ের ধমনী, শিরা-উপশিরা, স্নায়ু ও পেশী সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি পায় এবং পায়ের গঠন দৃঢ় ও সুগঠিত হয়। আসনটিতে উরুর সন্ধিস্থলের স্থিতিস্থাপকতা ঠিক থাকায় মেয়েদের সন্তান প্রসবে দৈহিক কোন বাধা সৃষ্টি করে না। তবে এ আসন ব্রহ্মচর্য পালনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৪১][**][৪৩]

No comments: