Friday, June 26, 2009

[Yoga] # ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|ধৌতি|


---------------------------------------------------------
# ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|ধৌতি|
--------------------------------
@ ধৌতি (Dhauti)...৮২
@ ধৌতি: কপালভাতি (Kapalbhati)...৮৩
@ ধৌতি: বাতসার (Batasara)...৮৪
@ ধৌতি: অগ্নিসার (Agnisara)...৮৫
@ ধৌতি: বারিসার (Barisara)...৮৬
@ ধৌতি: নাসাপান (Nasapana)...৮৭
@ ধৌতি: সহজ বস্তি-ক্রিয়া (Sahaja Basti-kriya)...৮৮
@ ধৌতি: ত্রাটক (Trataka)...৮৯

---------------------------------------------------------

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৯। ধৌতি: ত্রাটক।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৯। ধৌতি: ত্রাটক।
রণদীপম বসু

# ত্রাটক (Trataka):

বিভিন্ন আসন বা ব্যায়াম অভ্যাসে শরীরের বিভিন্ন উন্নতি সাধন হলেও ত্রাটক অভ্যাসের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টি যতোটা বৃদ্ধি করা সম্ভব তা অন্য কোন পদ্ধতির দ্বারা সম্ভব নয়। চোখ হচ্ছে দেহের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের শ্রেষ্ঠ ইন্দ্রিয়। তাই ত্রাটক অভ্যাসের সময় চোখের উপর বা চোখের সূক্ষ্ম স্নায়ুমণ্ডলী এবং মাংসপেশীর উপর যেন কোন রকম চাপ না পড়ে সেদিকে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।


পদ্ধতি:
যে কোন ধ্যানাসনে বসে প্রথমে মনটাকে সুস্থির করুন। এবার সামনের পরিষ্কার দেয়ালে একটি কালো বিন্দু কিংবা মোমবাতির আলোর সামনে বসে এক নিবিষ্টে তাকিয়ে থাকুন। কিছু সময় পর চোখ দিয়ে অল্প অল্প জল বেরিয়ে আসতে পারে। এজন্যে চিন্তার কোন কারণ নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, আশপাশ থেকে অন্য কোন আলো যাতে বেশি পরিমাণে চোখের উপর এসে না পড়ে। এভাবে নির্দিষ্ট দিকে সামর্থ্য অনুযায়ী ৪/৫ মিনিট তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করুন।


কিছুদিন এই প্রক্রিয়ায় অভ্যাসের পর যে কোন ধ্যানাসনে বসে শরীর সুস্থির রেখে এবার শুধুমাত্র চোখের মণি’কে ধীরে ধীরে একবার ডানদিকে, পরে বামদিকে এবং একবার উপর দিকে, পরে নিচের দিকে নিতে থাকুন। তবে একদিক থেকে অপর দিকে যাবার সময় চোখের মণি’কে সামনের দিকে স্বাভাবিক অবস্থায় অল্প কিছুক্ষণ রাখতে হবে। এভাবে প্রতিটি দিকে সামর্থ্য অনুযায়ী ৫/৬ বার চোখের মণি ঘুরানোর অভ্যাস করুন।

আরো কিছুদিন এরকম অভ্যাসের পর এবার চোখের মণি একবার ঘড়ির কাঁটার দিকে কক-ওয়াইজ ঘুরিয়ে এবপর আবার উল্টোদিকে একবার এন্টি কক-ওয়াইজ ঘোরাতে থাকুন। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ৫/৬ বার এই প্রক্রিয়াটি অভ্যাস করুন।


যা-ই করুন, কিছুতেই যেন মাত্রাধিক্য না হয়। পরিমাণে কম সংখ্যকবার করা যেতে পারে, কিন্তু বেশি বার করা মোটেও উচিত হবে না। এভাবে অভ্যাসের পর হাতের তালু দিয়ে চোখের উপর হালকা মালিশ করে নিন।

উপকারিতা:
এই ত্রাটক অভ্যাসে চোখের অনেক রোগ সেরে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কোন আবেগীয় কারণ ছাড়াই যাদের চোখ দিয়ে জল পড়ে কিংবা ঘুম থেকে উঠার পর চোখে যন্ত্রণা হয়, তাদের জন্য ত্রাটক অভ্যাস বিশেষ ফলদায়ক।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৮][**][৯০]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৮। ধৌতি: সহজ বস্তি-ক্রিয়া।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৮। ধৌতি: সহজ বস্তি-ক্রিয়া।
রণদীপম বসু

# সহজ বস্তিক্রিয়া (Sahaja Basthikriya):

যে ক্রিয়ায় বস্তি অর্থাৎ তলপেট পরিষ্কার হয়, তারই নাম বস্তি-ক্রিয়া। কোষ্ঠবদ্ধতা বহু রোগের মূল উৎস হওয়ায় কোষ্ঠ বা পায়খানা পরিষ্কার রাখার জন্য প্রত্যেকেই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে এই দুঃসহ কোষ্ঠবদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এই নিয়মগুলোকে বস্তি-ক্রিয়া বলা হয়ে থাকে।

পদ্ধতি:
সকালে ঘুম থেকে উঠে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানিতে একটি পাতি বা কাগজি লেবুর রস এবং পরিমাণমতো লবণ মিশিয়ে পান করুন। এরপর ছ’বার পবন-মুক্তাসন, চারবার বিপরীতকরণী মুদ্রা, তিনবার অর্ধচন্দ্রাসন বা শলভাসন এবং তিনবার পদহস্তাসন করুন।
তবে উচ্চ রক্তচাপ ও অম্লরোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য যথাক্রমে লবণ ও লেবুর রস ব্যবহার না করাই ভালো।

উপকারিতা:
এই বস্তি-ক্রিয়া অভ্যাসে রাখলে অজীর্ণ ও কোষ্ঠবদ্ধতা রোগ কোনদিন হতে পারে না এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
অত্যধিক বয়েসী কিংবা যাদের শরীর অত্যন্ত দুর্বল বা রুগ্ন, অথবা যাদের পক্ষে কোনরকম আসন বা ব্যায়াম করা সম্ভব নয়, তারা সূর্যোদয়ের পূর্বে বিছানা ত্যাগ করে পরিমাণমতো ঠাণ্ডা বা ঈষদুষ্ণ পানি পান করে খোলা জায়গায় নির্মল বাতাসে কিছু সময় পায়চারি করলেই কোষ্ঠ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৭][**][৮৯]

Wednesday, June 24, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৭। ধৌতি: নাসাপান।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৭। ধৌতি: নাসাপান।
রণদীপম বসু


# নাসাপান (Nasapana) বা সহজ নেতিক্রিয়া (Sahaja Netikriya):

জলের সাহায়্যে নাসাপথে যে নেতিক্রিয়া অভ্যাস করা হয়, তাকে নাসাপান বলে। আর এই প্রক্রিয়াটি অতি সহজ বলেই একে সহজ নেতিক্রিয়া বলে।

পদ্ধতি:
একটি বড় চ্যাপ্টা মুখওয়ালা পাত্র জলভর্তি করে এতে নাক ও মুখ ডুবিয়ে দিন। এবার মুখ বন্ধ রেখে দম নিতে নিতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে পাত্রের জল ভিতরে টানার চেষ্টা করুন। প্রথম প্রথম অভ্যাসকালে নাক দিয়ে জল টানতে একটু কষ্ট হবে। দু’একদিন নাক জ্বালা করবে, হাঁচিও আসতে পারে। তবে নিষ্ঠার সাথে দু’চারদিন অভ্যাসে জলটানা প্রক্রিয়াটি আয়ত্তে আনতে পারলে মুখ দিয়ে জলপানের মতোই নাক দিয়েও নাসাপান সহজ হয়ে যাবে। যদিও এই জল পেটে গেলেও কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই, তবু নাক দিয়ে জল টেনে দেহে রাখা উচিত নয়, মুখ দিয়ে তা বের করে দিতে হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় নাসাপান ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে ২/৩ মাস অভ্যাস করা যেতে পারে। পরে যখন মনে হবে নাসিকায় বা কণ্ঠে কোন দূষিত পদার্থ সঞ্চিত হয়েছে, কেবল তখনই নাসাপান অভ্যাস করা উচিত। তবে নাসাপানের পর কপালভাতি করা আবশ্যক।

উপকারিতা:
নাসাপান অভ্যাসে নাসিকা ও কণ্ঠদেশে সঞ্চিত দূষিত পদার্থ নির্গত হয়ে যাওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস সহজসাধ্য হয়। এতে মাথা ঠাণ্ডা থাকে, কোনভাবেই মাথাধরা রোগ হয় না। সাইনাস বা পুরনো সর্দি সারাতে এই নেতিক্রিয়াটি অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে গণ্য হয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৬][**][৮৮]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৬। ধৌতি: বারিসার।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৬। ধৌতি: বারিসার।
রণদীপম বসু


# বারিসার (Barisara) বা বমন-ধৌতি (Bamana-Dauti):

পদ্ধতি:
সাধ্যানুযায়ী এক থেকে দুই লিটার ঈষৎ গরম জলে চা চামচের এক থেকে দুই চামচ লবণ মিশ্রিত করে ঈষদুষ্ণ অবস্থায় আকণ্ঠ পান করুন। কিছুক্ষণ পর মুখ নিচু করে প্রয়োজনে গলায় আঙুল দিয়ে আলজিভে আস্তে আস্তে নাড়া দিয়ে ঐ জল বমি করে বের করে দিন। একবারে সব জল বের না হলে কয়েকবার প্রক্রিয়াটি করুন।

উপকারিতা:
মুখ দিয়ে বহিরাগত জলের সাথে পেটের সঞ্চিত দূষিত পিত্ত, শ্লেষ্মা ও অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ সহজে বের হয়ে আসায় দেহ নির্মল হয়। ফলে পিত্ত রোগ, অম্ল-রোগ ও সর্দি-কাশির প্রকোপ হ্রাস পায়। অর্থাৎ খাওয়ার আধ-ঘণ্টা বা একঘণ্টা পরে যাদের চোঁয়া ঢেকুর উঠে বা রোজ বিকেলে ঢেকুর উঠতে থাকে এবং ঢেকুর উঠলে মুখ তেতো বা টক টক লাগে তাদের জন্য এই ধৌতি-প্রক্রিয়াটি বিশেষ উপকারী।
প্রথম প্রথম সপ্তাহে দু’তিনদিন এবং ৪/৫ সপ্তাহ পর থেকে সপ্তাহে একদিন করে এই প্রক্রিয়া অভ্যাস করে গেলে কোনদিন অম্ল বা পিত্তদোষ হবে না।

সতর্কতা:
বারিসার অভ্যাসের অব্যবহিত পরেই খাদ্য গ্রহণ করা উচিত নয়। অন্তত একঘণ্টা পর খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। এবং প্রয়োজন ছাড়া নিয়মিত বারিসার অভ্যাস করা নিষেধ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৫][**][৮৭]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৫। ধৌতি: অগ্নিসার।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৫। ধৌতি: অগ্নিসার।
রণদীপম বসু

# অগ্নিসার (Agnisara):

পদ্ধতি:
অগ্নিসার একধরনের নৌলিক ধৌতি। এটা দাঁড়িয়ে বা যে কোন আসনে বসে দু’ভাবেই করা যেতে পারে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটো কোমরের দু’পাশে রাখুন। অথবা পদ্মাসন বা যে কোন ধ্যানাসনে বসে হাত দুটো হাঁটুর উপর রাখুন। এবার পেট ও তলপেটকে উড্ডীয়ান অবস্থায় আনুন। অর্থাৎ প্রথমে শ্বাস ত্যাগ করে উদর বায়ুশূন্য করে কুম্ভক করুন বা দম বন্ধ করে থাকুন। এ অবস্থায় পেট ও তলপেটের মাংসপেশীকে শিথিল করে পরক্ষণেই পেট ও তলপেট কুঞ্চিত করে পেশী মেরুদণ্ডের দিকে টানতে থাকুন এবং পুনরায় শিথিল করে আবার কুঞ্চিত করুন ও পরক্ষণেই শিথিল করে দিন। এভাবে এক কুম্ভকে আয়াসহীনভাবে যতবার সম্ভব প্রক্রিয়াটি অভ্যাস করুন। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস গ্রহণ করুন এবং পেট ও তলপেট শিথিল করে দিন। ৮/১০ বার প্রক্রিয়াটি অভ্যাস করুন।


উপকারিতা:
এই ক্রিয়া উদরের যাবতীয় পীড়া নিরাময়ে সাহায্য করে। পাকস্থলী, প্লীহা, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, যৌনগ্রন্থি ইত্যাদি সবল ও সক্রিয় থাকে। মেদ কমে পেট ও তলপেটের পেশী দৃঢ় হয়। কোষ্ঠবদ্ধতা সেরে যায় এবং যৌনমিলনে অক্ষম ব্যক্তিদের সক্ষম হতে সাহায্য করে।

নিষেধ:
যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল তাদের এবং অল্পবয়সী মেযে যাদের ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি তাদের জন্য এই ক্রিয়া অভ্যাস করা নিষেধ।


# সহজ অগ্নিসার (Sahaja Agnisara):

পদ্ধতি (ক):
হাত দুটো জানুর উপর রেখে কোমর থেকে দেহের উপরের অংশ সামান্য একটু সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দাঁড়ান। এবার দম নিতে নিতে পেটের নিম্নভাগ ও নাভিদেশ আকুঞ্চন করতে করতে যতটা সম্ভব মেরুদণ্ড-সংলগ্ন করার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেযা শেষ হলে এখন শ্বাস ত্যাগ করতে করতে আকুঞ্চন শিথিল করে দিন। এভাবে ২০/২৫ বার প্রক্রিয়াটি অভ্যাস করুন।


পদ্ধতি (খ):
সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাতের বুড়ো আঙুল ডানদিকের কোমরের খাঁজে এবং বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল একইভাবে বাঁদিকের কোমরে রাখুন। এবার উভয় কোমরে বুড়ো আঙুল দৃঢ়ভাবে রেখে দু’হাতের অন্য সব আঙুল দিয়ে নাভিদেশ চাপ দিয়ে সঙ্কুচিত করে যতটা সম্ভব মেরুদণ্ড-সংলগ্ন করুন। নাভিদেশ মেরুদণ্ডে লাগার সঙ্গে সঙ্গে নাভির উপর আঙুলগুলো আলগা করে নাভিপ্রদেশ চাপমুক্ত করে শিথিল করে দিন। এভাবে ২০/২৫ বার প্রক্রিয়াটি অভ্যাস করুন।

উপকারিতা:
প্রক্রিয়াটি অভ্যাসকালে পেট ও তলপেট রক্তে প্লাবিত হয় বলে তলপেটে জমা সমস্ত রোগজীবাণু নাশ হয়। আমাশয়, কোষ্ঠতারল্য প্রভৃতি রোগ হয না এবং থাকলেও তা নিরাময় হয়ে যায়। যতদিন অগ্নিসার ধৌতি আয়ত্তে না আসে ততদিন এই সহজ অগ্নিসার ক্রিয়া অভ্যাস করা উচিত।

নিষেধ:
যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল তাদের এবং অল্পবয়সী মেযে যাদের ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি তাদের জন্য এই ক্রিয়া অভ্যাস করা নিষেধ।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৪][**][৮৬]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৪। ধৌতি: বাতসার।

ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৪। ধৌতি: বাতসার।
রণদীপম বসু

# বাতসার (Batasara):

পদ্ধতি:
পদ্মাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার ঠোঁট দুটো কাকের ঠোঁটের মতো ছুঁচালো করে ধীরে ধীরে দম নিতে নিতে বায়ু পান দ্বারা উদর পূর্ণ করুন। এবং পরক্ষণেই মুখ দিয়ে বায়ু ত্যাগ করুন। এভাবে ধৌতিটি ৮/১০ বার অভ্যাস করুন।

উপকারিতা:
বাতসার অভ্যাস শরীরকে নির্মল করে। যোগশাস্ত্রীদের মতে বাতসার সর্বপ্রকার রোগ দূর করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮৩][**][৮৫]

Tuesday, June 23, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৩। ধৌতি: কপালভাতি।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮৩। ধৌতি: কপালভাতি।
রণদীপম বসু

# কপালভাতি (Kapalbhati):
কপালভাতিকে কেউ কেউ প্রাণায়ামও বলে থাকেন।

পদ্ধতি:
পদ্মাসনে চোখ বন্ধ রেখে সোজা হয়ে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে কর্মকারদের হাপরের মতো দ্রুত শ্বাস নেয়া ছাড়ার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রকে সশব্দে দ্রুত বায়ুপূর্ণ এবং পরক্ষণেই বায়ুশূন্য করতে থাকুন। এক্ষেত্রে দম নেয়ার চাইতে দম ছাড়া হবে বেশি পরিমাণে এবং খুব জোরের সঙ্গে। দম নেয়া ও ছাড়ার সময় মেরুদণ্ড, বুক ও কাঁধ যতটা সম্ভব স্থির থাকবে এবং তলপেট হাপরের মতোই ভিতরে বাইরে দ্রুত আসা-যাওয়া করবে।
নতুন শিক্ষার্থীরা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রথম প্রথম মিনিটে ১৫/২০ বার দম ছাড়া ও নেয়ার মাত্রা রাখতে পারেন। কিছুদিন অভ্যাসের পর সামর্থ্য বাড়ার সাথে সাথে এই হার মিনিটে ৫০/৬০ বার থেকে ১২০ বার পর্যন্ত অভ্যাস করতে পারেন।

উপকারিতা:
কপালভাতি অভ্যাসে কপালে সর্দি জমতে পারে না এবং কফ্ দোষ বিনষ্ট হয়। এতে সাইনাস হবার সম্ভাবনা থাকে না এবং সাইনাস থাকলে তা দ্রুত সেরে যায়। এছাড়াও হৃদযন্ত্র সবল হয়, পেটের মেদ কমায় এবং কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮২][**][৮৪]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮২। ধৌতি।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮২। ধৌতি।
রণদীপম বসু

# ধৌতি (Dhauti):

‘হঠযোগ-প্রদীপিকা’ গ্রন্থের ২/১৪ স্তোত্রে বলা হয়েছে-
ধৌতিবস্তি স্তথা নেতিস্ত্রাটকং নৌলিকং থো।
কপালভাতিশ্চৈতানি ষট্কর্মাণি প্রচক্ষ্যতে।।

অর্থাৎ নাড়ী শোধনের জন্য ধৌতি, বস্তি, নেতি, নৌলিক, ত্রাটক ও কপালভাতি- এই ষট্কর্ম অভ্যাস করা উচিত।
যদিও প্রত্যেক যোগাসন অভ্যাসকারীকেই যে এই ষট্কর্ম করতেই হবে এমন কোন বিধান নেই, তবু যাদের দেহে মেদ ও শ্লেষ্মা অধিকমাত্রায় রয়েছে তাদের জন্য ষট্কর্ম অভ্যাস করা প্রয়োজন বলে যোগশাস্ত্রীরা বলে থাকেন। তবে আসন অভ্যাসকারী তাঁর নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী উপরোক্ত ষট্কর্মের এক বা একাধিক বেছে নিয়ে যথানিয়মে অভ্যাস করলে আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারেন।

উপরোক্ত ষট্কর্ম বা ধৌতিক্রিয়া অভ্যাসে বুকে ও পেটে সঞ্চিত দুষিত পদার্থ স্বাভাবিকভাবে নির্গত হয়ে যাওয়ায় বুক ও পেটে সহজে কোন রোগ আশ্রয় করতে পারে না। একান্তই পূর্বে কোন রোগ বাসা বেঁধে থাকলে এই ধৌতিক্রিয়া তা নিরাময় করতে সাহায্য করে। একই সাথে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার করতে সাহায্য করে থাকে, যা প্রাণায়াম অভ্যাসে বিশেষ প্রয়োজন হয়।

এই ষট্কর্ম বা ধৌতিক্রিয়ার উল্লেখযোগ্যগুলো হলো- কপালভাতি, বাতসার, অগ্নিসার, বারিসার বা বমন ধৌতি, সহজ নেতিক্রিয়া বা নাসাপান, সহজ বস্তিক্রিয়া, ত্রাটক ইত্যাদি।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮১][**][৮৩]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|প্রাণায়াম|


---------------------------------------------------------
# ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে...|প্রাণায়াম|
--------------------------------

...............................................................................

Monday, June 22, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮১। প্রাণায়াম: লঘু প্রাণায়াম।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮১। প্রাণায়াম: লঘু প্রাণায়াম।
রণদীপম বসু

# লঘু প্রাণায়াম (Laghu Pranayama):

নিয়মিত অভ্যাসের মাধ্যমে সহজ প্রাণায়ামে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর লঘু প্রাণায়াম অভ্যাস করা যেতে পারে। লঘু প্রাণায়ামে (Laghu Pranayama) দম নেয়া বা পূরক (Puraka), দম আটকে বায়ু ধারণ করে রাখা বা কুম্ভক (Kumbhaka) এবং দম ছাড়া বা রেচক (Rechaka) প্রক্রিয়া যথানিয়মে অনুসরণ করতে হয়।


এর মধ্যে কুম্ভক (Kumbhaka) বা দম আটকে রাখার সময় ও প্রক্রিয়া যথাযথ না হলে পূরকান্ত-কুম্ভকে রক্তে ক্ষতিকারক কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে এবং রেচকান্ত-কুম্ভকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ঘাটতির কারণে শরীরে সৃষ্ট তীব্র স্নায়ুচাপে সহনশীলতার পর্যায় ছাড়িয়ে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে বলে সদগুরুর তত্ত্বাবধান ছাড়া কুম্ভক প্রাণায়াম অভ্যাস করা উচিত নয়। যোগশাস্ত্রীদের মতে 'হঠযোগ-প্রদীপিকা' (Hatha Yoga Pradipika) গ্রন্থে উল্লেখিত লঘু প্রাণায়াম আট ধরনের। যথা- ১.০ সূর্যভেদ (Surya Bhedan), ২.০ উজ্জায়ী (Ujjayi), ৩.০ সীৎকারী (Sitkari), ৪.০ শীতলী (Shitali), ৫.০ ভ্রামরী (Bhramari), ৬.০ ভস্তিকা (Bhastrika), ৭.০ মূর্চ্ছা (Moorcha) ও ৮.০ প্লাবনী (Plavini)।
এক্ষেত্রে একান্তই উল্লেখিত প্রাণায়ামের অভ্যাস করতে হলে কুম্ভক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে শুধু পূরক ও রেচক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথম পাঁচটি প্রাণায়াম সতর্কতার সাথে অভ্যাস করা যেতে পারে। সাধারণ অভ্যাসকারীদের জন্য শেষোক্ত তিনটি প্রাণায়াম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

(০১) সূর্যভেদ প্রাণায়াম (Surya Bhedan Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে বাম নাসাপুট বন্ধ করুন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দক্ষিণ নাসাপুটের উপর আলতোভাবে রাখুন। এবার পিঙ্গলা নাড়ী অর্থাৎ দক্ষিণ নাসাপুট দিয়ে ধীরে ধীরে দমভোর শ্বাসগ্রহণ বা পুরক করুন। পুরকান্তে অর্থাৎ শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে আকর্ষিত বায়ু জালন্ধরবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও মূলবন্ধ এই তিনটি মুদ্রা দ্বারা ধারণ করে নিজ নিজ সাধ্যানুযায়ী ১০/১৫ সেকেন্ড দম আটক বা কুম্ভক করুন- যে পর্যন্ত না পায়ের নখ হতে মাথার চুল পর্যন্ত দেহস্থ সমস্ত নাড়ী’র বায়ু রোধ হয়।


এরপর বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা দক্ষিণ নাসাপুট বন্ধ করে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল আলগা করে ইড়া নাড়ী দ্বারা অর্থাৎ বাম নাসাপুট দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। শ্বাস ছাড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে- পূরকে যত সময় লেগেছে রেচক অভ্যাসকালে যেন তার চেয়ে সময় বেশি না লাগে। অর্থাৎ পূরক, কুম্ভক ও রেচকের সময়ানুপাত হবে ২ ঃ ১ ঃ ২। তাড়াহুড়ো করে রেচক অভ্যাস করা যাবে না।
এইভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ৪ থেকে ৬ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।


চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার যত রোগ-ব্যাধি ও দুর্বলতা সব দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার শরীর এক অসীম প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে স্নায়ুর দুর্বলতা দূর হয়ে দেহ সবল হয়ে উঠে। ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত সুস্থ সবল হয়ে ওঠে, এরা সহজে রোগাক্রান্ত হয় না। ক্ষুধামন্দা রোধ করে, কৃমি নাশ করে। দেহের মেদ হ্রাস এবং নাসাতন্ত্রের যাবতীয় রোগ নিরাময় করে শ্লেষ্মাদোষ নাশ করে।

(০২) উজ্জায়ী প্রাণায়াম (Ujjayi Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার মুখ বন্ধ রেখে গলা বা ভোকাল কর্ড হতে সশব্দে উভয় নাক দিয়ে বুক ভরে শ্বাসগ্রহণ বা পূরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে চিবুক কণ্ঠকূপে রেখে জালন্ধরবন্ধ অবস্থায় বস্তিপ্রদেশের স্নায়ুগুলোকে আকর্ষণ করে নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত বায়ুধারণ বা কুম্ভক করুন। এবার স্নায়ুর আকর্ষণ শিথিল করে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা ডান নাসাপুট বন্ধ করে বাম নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন।
এভাবে উভয় নাক দিয়ে ৬ থেকে ১২ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।


চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার স্খলনদোষ দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমি উর্ধ্বরেতা হয়ে উঠছি। আর মেয়েরা চিন্তা করবে- আমার রতিগ্রন্থির রসাদির অনিচ্ছাকৃত ক্ষরণ এবং প্রদরাদি রোগ আরোগ্য হচ্ছে এবং আমি কামজয়ী হয়ে উঠছি।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের ভালো কাজ হয়, সর্দি-কাশি নিরাময় হয় এবং ইনফুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, টাইফয়েড প্রভৃতি কফরোগ ও হাঁপানি সেরে যায়। স্ত্রী পুরুষের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং জরা রোধ হয়। উচ্চরক্তচাপ রোগের ক্ষেত্রে এই প্রাণায়ামে আশ্চর্য সুফল পাওয়া যায়।

(০৩) সীৎকারী প্রাণায়াম (Sitkari Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসে মুখ ও ঠোঁট সরু করে পরস্পর সংলগ্ন করুন এবং জিহ্বার অগ্রভাগ সরু হয়ে থাকা মুখ ও ঠোঁটের সাথে স্থাপন করুন। এবার মুখ দিয়ে একটানা সি সি সি শব্দ করতে করতে বেশ জোরের সঙ্গে ধীরে ধীরে মুখ দিয়েই বুক ভরে পূরক বা শ্বাস নিতে থাকুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে ৫/১০ সেকেন্ড বায়ু ধারণ বা কুম্ভক করে অতঃপর উভয় নাক দিয়ে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন। এভাবে নিজ সামর্থ অনুযায়ী চার থেকে ছয় মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।


চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় চিন্তা করতে হবে- আমার আলস্য নিদ্রা ও তমোভাব দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার দেহমন দিব্য-শক্তির অধিকারী হয়ে উঠছে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে আলস্য, নিদ্রা, জড়তা ও শারীরিক দুর্বলতা দূর হয়ে দেহ স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও বলশালী হয়। যোগশাস্ত্রীদের মতে এই প্রাণায়াম অভ্যাসে দেহ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত হওয়ায় পুরুষেরা কামদেবের মতো রূপবান এবং মেয়েরা অসামান্যা রূপবতী হন।

(০৪) শীতলী প্রাণায়াম (Shitali Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার মুখ ও ঠোঁট পাখির ঠোঁটের মতো সরু করে জিহ্বাগ্র মুখের একটু বাইরে নিয়ে আসুন এবং মুখ দিয়ে বেশ জোরে ও ধীরে ধীরে দমভোর পূরক বা শ্বাসগ্রহণ করুন। পূরক বা শ্বাসগ্রহণ শেষে আকর্ষিত বায়ু জালন্ধরবন্ধ, উড্ডীয়ানবন্ধ ও মূলবন্ধ এই তিনটি মুদ্রা দ্বারা ধারণ করে নিজ সামর্থানুযায়ী ১০/১৫ সেকেন্ড কুম্ভক করুন, যে পর্যন্ত না পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত দেহস্থ নাড়ীগুলোর বায়ু রোধ হয়। এরপর উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। এভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ৫/৬ মিনিট ধরে প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
চিন্তা:
প্রতিবার কুম্ভকের সময় সীৎকারী প্রাণায়ামের মতোই চিন্তা করতে হবে- আমার আলস্য নিদ্রা ও তমোভাব দূর হয়ে যাচ্ছে এবং আমার দেহমন দিব্য-শক্তির অধিকারী হয়ে উঠছে।


উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাস রক্ত শুদ্ধ হয় এবং দারুণভাবে প্রাণশক্তি বৃদ্ধি পায়। পিত্তরোগীদের জন্য, যাদের হাতে পায়ে গায়ে জ্বালা বোধ হয় তাদের জন্য এই প্রাণায়াম বিশেষ উপকারী। চর্মরোগ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং উচ্চরক্তচাপ রোগীদের জন্য আশ্চর্য সুফল আনে, তবে তাদের জন্য কুম্ভক বাদ দিয়ে শুধু পূরক ও রেচক অভ্যাস বাঞ্ছনীয়।
নিষেধ:
ঠাণ্ডা আবহাওয়া কিংবা শীতকালে সূর্য না ওঠা পর্যন্ত এই প্রাণায়াম অভ্যাস করা নিষেধ। কফপ্রধান ব্যক্তিদের জন্যেও প্রাণায়ামটি করা উচিত নয়।

(০৫) ভ্রামরী প্রাণায়াম (Bhramari Pranayama):
পদ্ধতি:
বজ্রাসন বা সুখাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার দু’হাতের বৃদ্ধাঙুল বা তর্র্জনি দিয়ে দু’কানের ছিদ্র হালকাভাবে বন্ধ করে নিন। এখন দুই নাক দিয়ে দম ভরে পূরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন। পুরক শেষে আকর্ষিত বায়ু ধারণ করে ৮/১০ সেকেন্ড কুম্ভক করুন।


এরপর ধীরে ধীরে ভ্রমরের ডাকের মতো শব্দ করতে করতে দুই নাক দিয়ে রেচক বা শ্বাস ত্যাগ করুন। আবার পূরক বা স্বাভাবিক দম নিয়ে ৮/১০ সেকেন্ড কুম্ভক করে ধীরে ধীরে পুনরায় ভ্রমরের ডাকের মতো শব্দ করতে করতে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। রেচকের সময় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ড যখন কাঁপবে তখন স্বরযন্ত্রের কম্পন যেন আমাদের কানের পর্দা বা টিমপ্যানিক মেমব্রেন-এ অনুভূত হয়।


এইভাবে পূরক, কুম্ভক ও রেচক অভ্যাস করলে একবার ভ্রামরী অভ্যাস করা হয়। প্রতি দফায় পাঁচবার পূরক, কুম্ভক ও রেচক করে এই প্রাণায়াম চার দফায় অভ্যাস করুন। প্রতি দফা অভ্যাসের পর ১৫ সেকেন্ড করে শবাসন অভ্যাস করতে হবে।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে শ্রবণেন্দ্রিয় সতেজ থাকে, গলার স্বর মিষ্ট হয় এবং গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারে না। যারা কানে কম শোনে, এই প্রাণায়াম অভ্যাসে শ্রবণেন্দ্রিয়ের উন্নতি হয় এবং স্বাভাবিক শ্রবণক্ষমতা ফিরে আসে।

(০৬) ভস্তিকা প্রাণায়াম (Bhastrika Pranayama):
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার ডানহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক চেপে ধরে বাঁ নাক দিয়ে সজোরে থেমে থেমে কপালভাতি প্রাণায়ামের অনুরূপ দ্রুত রেচক বা শ্বাস ত্যাগ করে উদর বায়ুশূন্য করুন এবং পেট ও তলপেট আকুঞ্চিত করে মেরুদণ্ডের সাথে লাগানোর চেষ্টা করুন। পেটের পেশীতে যেন হঠাৎ টান না পড়ে।


রেচকান্তে ডান নাক থেকে বুড়ো আঙুল আলগা করে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে বাঁ নাক চেপে ধরে আকুঞ্চন শিথিল করে ডান নাক দিয়ে বুক ভরে দ্রুত দম নিয়ে পূরক করুন। পুরকান্তে চিবুক কণ্ঠকূপে স্থাপন করে আকর্ষিত বায়ু জালন্ধরবন্ধ করে নিজ সাধ্যানুযায়ী কুম্ভক করুন। এরপর আবার বাঁ নাক মুক্ত করে বুড়ো আঙুল দিয়ে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে সজোরে দ্রুত রেচক বা শ্বাসত্যাগ করুন। এভাবে ২/৩ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।

(০৭) মূর্চ্ছা প্রাণায়াম (Moorcha Pranayama):


(০৮) প্লাবনী প্রাণায়াম (Plavini Pranayama):

[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৮০][**][৮২]

Saturday, June 20, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮০। প্রাণায়াম: নাড়ী শোধন প্রাণায়াম।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৮০। প্রাণায়াম: নাড়ী শোধন প্রাণায়াম।
রণদীপম বসু

# নাড়ী শোধন প্রাণায়াম (Nadi Shodhana Pranayama):

পদ্ধতি:
পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে শিরদাঁড়া সোজা অথচ শিথিল রেখে (চোখ বন্ধ থাকা ভালো) স্বাভাবিক অবস্থায় বসুন। এবার ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ডান নাকে এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলদ্বয় একত্রে বাঁ নাকের কাছে নিয়ে যান। তর্জনি এবং মধ্যমা আঙুলদ্বয় একত্রে ভাঁজ হয়ে হাতের তালু স্পর্শ করে থাকবে।


এখন বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ডান নাক চেপে ধরে ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ নাক দিয়ে ধীরে ধীরে যতটা সম্ভব বুক ভরে পুরক বা দম নিতে থাকুন। শ্বাস নেয়া শেষ হলে এবার একত্রে কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে বাঁ নাক চেপে ছিদ্র বন্ধ করে ডান নাক দিয়ে রেচক বা দম ছাড়তে থাকুন। রেচকের পরপরই বাঁ নাক চেপে রেখেই এখন ডান নাক দিয়ে পুরক বা দম নিন এবং পুরক শেষ হলে বুড়ো আঙুলে ডান নাক চেপে বাঁ নাক দিয়ে ধীরে ধীরে রেচক বা দম ছাড়ুন। এভাবে প্রতি নাকে ৩/৪ বার করে উভয় নাকে ৬ থেকে ৮ বার অভ্যাস করুন।


লক্ষ্য রাখতে হবে, দম নেয়া ও ছাড়ার সময় যাতে নাকে বা গলায় কোন আওয়াজ না হয়। একই সাথে এটাও খেয়াল রাখতে হবে, পুরক বা দম নেয়া এবং রেচক বা দম ছাড়ার সময় যেন ১ ঃ ২ অনুপাতে হয়। অর্থাৎ যতটুকু সময় ধরে দম নেয়া হবে তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে দম ছাড়তে হবে। নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম প্রথম তা আয়ত্তে আনা সহজ না হলেও কিছুদিনের নিয়মিত চর্চায় তা আয়ত্তে চলে আসবে।


এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যারা পুরক ও রেচকের মধ্যবর্তী কুম্ভক বা দম আটকে রাখার চর্চাও যুক্ত করতে চান সেক্ষেত্রে পুরক, কুম্ভক ও রেচক এই তিন প্রক্রিয়ার সময়ানুপাত যথাক্রমে ১ ঃ ২ ঃ ২ বা ২ ঃ ১ ঃ ৪ হিসাবে অভ্যাস করতে হবে। অর্থাৎ যতক্ষণ পুরক বা শ্বাসগ্রহণ হবে তার দ্বিগুণ সময় ধরে রেচক বা শ্বাসত্যাগ করতে হবে। কিন্তু কুম্ভক বা দম আটকে রাখার সময়কাল নিজের সামর্থ্যমতো ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। তবে গৃহীদের পক্ষে কুম্ভক অভ্যাস না করাই বাঞ্ছনীয়। বই পড়ে কুম্ভক অভ্যাস করা উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল। একান্তই কেউ তা অভ্যাস করতে চাইলে অবশ্যই সদগুরুর কাছে হাতে কলমে এই প্রাণায়ামের সম্পূর্ণ পদ্ধতি শিখে তবে চর্চা করতে হবে।

উপকারিতা:
দেহ থেকে যাবতীয় রোগবিষ টেনে বের করে দেয় বলে এটির নাম নাড়ী শোধন প্রাণায়াম। এই প্রাণায়াম বিশেষভাবে দেহের প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করে এবং সর্দি-কাশির দোষ নষ্ট করে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৯][**][৮১]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৯। প্রাণায়াম: ভ্রমণ-প্রাণায়াম।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৯। প্রাণায়াম: ভ্রমণ-প্রাণায়াম।
রণদীপম বসু

# ভ্রমণ-প্রাণায়াম (Bhramana-Pranayama):
কুম্ভক ছাড়া পূরক ও রেচকসহ যে প্রাণায়াম অভ্যাস করতে হয় তাকেই সহজ প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama) বলে। তাই কুম্ভকের ব্যবহার নেই বলে ভ্রমণ-প্রাণায়াম এই সহজ-প্রাণায়ামেরই অন্তর্ভূক্ত।

পদ্ধতি:
মেরুদণ্ড সরল ও টানটান রেখে সোজা হয়ে সমান তালে হাঁটুন। হাঁটার সময় প্রতি ৪ (চার) পদক্ষেপের সাথে সাথে মনে মনে ১, ২, ৩, ৪ গুনতে হবে এবং একই সাথে উভয় নাক দিয়ে পুরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন। পুরক বা শ্বাসগ্রহণ শেষ হওয়া মাত্রই আবার ৪ (চার) পদক্ষেপের সঙ্গে আগের মতো মনে মনে ১, ২, ৩, ৪ গুনার সাথে সাথে উভয় নাক দিয়ে রেচক বা শ্বাস ত্যাগ করুন। ৩/৪ সপ্তাহ এভাবে অভ্যাসের পর এবার ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে পুরক বা শ্বাস নিতে হবে, কিন্তু রেচক বা শ্বাস ছাড়ার সময় ১, ২, ৩, করে ৬ পর্যন্ত গুনতে হবে এবং সময় নিতে হবে। আবার কিছুদিন অভ্যাসের পর এভাবে ৬ পর্যন্ত গুনে শ্বাস নিতে হবে এবং শ্বাস ছাড়তে হবে ৮ পর্যন্ত গুনে। এভাবে আরো কিছুদিন অভ্যাসের পর ৮ পদক্ষেপ পর্যন্ত পুরক বা শ্বাস নেয়া এবং ১২ পদক্ষেপ পর্যন্ত রেচক বা শ্বাস ছাড়ার অভ্যাস রপ্ত হয়ে গেলে সাধ্যে কুলালে একইভাবে ১২ পদক্ষেপ পর্যন্ত পুরক বা শ্বাস গ্রহণ এবং ১৮ পদক্ষেপ পর্যন্ত রেচক বা শ্বাস ছাড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। এরপর আর মাত্রা বাড়াবার দরকার হয় না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ অভ্যাসের মাধ্যমে এভাবে হাঁটাকে ভ্রমণ-প্রাণায়াম বলে। এই ভ্রমণ-প্রাণায়াম নিজ নিজ সামর্থানুযায়ী ১০/১৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টাও করা যেতে পারে। কিংবা অভ্যাসের সময়কাল আরো বাড়ালেও কোন ক্ষতি হয় না।


ক্ষতি তখনই হবে যদি প্রাণায়ামটি অভ্যাসের সময় হাঁপ ধরে যায়। কেননা প্রাণায়াম অভ্যাস সব সময়ই আয়াসহীন হওয়া চাই। হাঁপ ধরে গেলে স্বাভাবিক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস রেখে বিশ্রাম নিতে হবে। প্রাণায়ামটি অভ্যাসের সময় যদি বাঁ বুকে একটু চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হয়, বুঝতে হবে, ফুসফুসের ক্ষমতা অনুযায়ী মাত্রা বেশি হয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ওইদিন ওইখানেই অভ্যাস বন্ধ রাখতে হবে। একদিন সম্পূর্ণ বিশ্রাম নিয়ে এক মাত্রা কমিয়ে পুনরায় শুরু করতে হবে।

এ প্রাণায়াম প্রাতে ও সন্ধ্যায় খোলা বা মুক্ত স্থানে, মাঠে বা ধূলাবিহীন রাস্তায় নির্মল বায়ুতে অভ্যাস করা বাঞ্ছনীয়।

উপকারিতা:
এই ভ্রমণ-প্রাণায়াম সবার পক্ষে বিশেষ উপকারী। বয়স্ক বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জন্য তা মৃতসঞ্জীবনীর কাজ করে থাকে। তবে তার মাত্রা স্বাস্থ্যানুযায়ী হতে হবে। অন্যান্য প্রাণায়ামে যত রকমের উপকার রয়েছে তার প্রায় সবই এই ভ্রমণ-প্রাণায়ামে রয়েছে। নিয়মিত ও নিয়মানুযায়ী প্রাণায়ামটি অভ্যাস রাখলে যক্ষ্মা, হাঁপানি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি রোগ কখনোই হতে পারে না এবং ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রাদি অধিক কর্মক্ষম থাকে। রক্ত অধিকতর পরিশোধিত হয়।
অন্য ব্যায়াম না করেও কেবল ভ্রমণ-প্রাণায়াম অভ্যাস রাখলে দেহ চমৎকার রোগমুক্ত থাকে। যে কোন রোগ থেকে আরোগ্যের পরপরই এই প্রাণায়াম অভ্যাস করলে রোগীর শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার সহজ হয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৮][**][৮০]

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৮। প্রাণায়াম: সহজ প্রাণায়াম।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৭৮। প্রাণায়াম: সহজ প্রাণায়াম।
রণদীপম বসু

# সহজ প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama):
কুম্ভক ছাড়া পূরক ও রেচকসহ যে প্রাণায়াম অভ্যাস করতে হয় তাকেই সহজ প্রাণায়াম (Sahaja Pranayama) বলে। সহজ প্রাণায়াম অভ্যাসে একটু ভুলত্রুটি হলেও কোন প্রকার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে না। তাই বালক, বৃদ্ধ এমন কি দুর্বল রোগীরা পর্যন্ত নির্দ্বিধায় এই প্রাণায়াম অভ্যাস করতে পারে। সহজ প্রাণায়াম অনেক ধরনের হয়ে থাকে। এ ধরনের কয়েকটি সহজ প্রাণায়ামের অভ্যাসবিধি দেয়া হলো-

@ সহজ প্রাণায়াম।০১।
পদ্ধতি:

পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ বা পুরক করুন। পুরকান্তে অর্থাৎ শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে কিন্তু গভীরভাবে শ্বাসত্যাগ বা রেচক করুন। এইভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ২ থেকে ৫ মিনিট ধরে নাক দিয়ে বায়ু গ্রহণ বা পুরক করুন এবং মুখ দিয়ে ত্যাগ বা রেচক অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুস, পাকস্থলী ও যকৃত সুস্থ সবল হয়ে ওঠে, এরা সহজে রোগাক্রান্ত হয় না। প্রাণায়ামটি অভ্যাসে রাখলে খোস, পাঁচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি রোগ হতে পারে না, আর এ সব রোগ থাকলেও অল্পদিনেই তা ভালো হয়ে যায়।

@ সহজ প্রাণায়াম।০২|
পদ্ধতি:

পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ আসনে মেরুদণ্ড সরল ও সোজা রেখে বসুন। এবার চিবুক উর্ধ্বে তুলে উভয় নাক দিয়ে সশব্দে বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে চিবুক কণ্ঠকূপে রাখুন এবং উভয় নাক দিয়ে সশব্দে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন। এখন আবার চিবুক উঁচু করুন এবং একইভাবে শ্বাস গ্রহণ করে চিবুক কণ্ঠকূপে রেখে শ্বাস ত্যাগ করুন। এভাবে সহজভাবে নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী দুই থেকে চার মিনিট বা যতটুক পারুন অভ্যাস করুন।
প্রাণায়ামটি ভালোভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে শ্বাসগ্রহণ বা পুরকের সময়ের চেয়ে শ্বাসত্যাগ বা রেচকের সময় একটু বেশি নেবে।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের ভালো কাজ হয়, সর্দি-কাশি নিরাময় হয় এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ সহজে হতে পারে না, প্রতিরোধক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৩|
পদ্ধতি:

পদ্মাসন, বজ্রাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসুন। এবার উভয় নাক দিয়ে বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে মুখ ও ঠোঁট পাখির চঞ্চু বা ঠোঁটের মতো ছোট করে সজোরে এবং থেমে থেমে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন। অর্থাৎ অল্প বায়ু ত্যাগ করে একটু থামুন, আবার অল্প বায়ু ত্যাগ করুন। এভাবে শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করে দুই থেকে তিন মিনিট বা ৬/৭ বার প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
যোগশাস্ত্রীদের মতে এই সহজ প্রাণায়ামে অভ্যাসে বিভিন্ন রকমের কাশি, সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, প্লুরিসি, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রভৃতি বিশ রকমের কফরোগ নিরাময় হয়। শ্বাসনালী সতেজ ও সুস্থ থাকে, মুখের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং মুখের যাবতীয় ব্যাধি এমনকি মুখের পক্ষাঘাত জাতীয় রোগ পর্যন্ত নিরাময় হয়।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৪|
পদ্ধতি:

পদ্মাসন বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে বসুন। এবার অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে উভয় নাক দিয়ে সাধ্যমতো বুক ভরে শ্বাস গ্রহণ বা পুরক করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষে মুখের পেশী ও স্নায়ুর উপর জোর দিয়ে হাঁ করে মুখ দিয়ে সজোরে শ্বাস ত্যাগ বা রেচক করুন। এভাবে নিজ নিজ সামর্থমতো ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এই প্রাণায়াম অভ্যাস কণ্ঠস্বরে মাধুর্য্যতা বাড়ায়। বিশেষ করে সঙ্গীত শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরের মিষ্টতা বজায় রাখতে এবং কণ্ঠের কম্পন আয়ত্ত করতে সাহায্য করে।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৫|
পদ্ধতি:

পদ্মাসনে বা যে কোন ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার রেচক প্রক্রিয়ায় বা শ্বাস ত্যাগ করতে করতে পেট বা উদর বায়ুশূন্য করুন। শ্বাসত্যাগ শেষ হলে এখন উদর ও তলপেট বা নাভিপ্রদেশ সাধ্যমতো মেরুদণ্ডের সাথে লাগাতে আকুঞ্চন করতে করতে উভয় নাক দিয়ে শ্বাসগ্রহণ বা পুরক করতে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে আকুঞ্চনের সময় যেন উদরের পেশীতে টান না পড়ে। শ্বাসগ্রহণ শেষ হলে ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ বা রেচকের সঙ্গে সঙ্গে উদর ও নাভিপ্রদেশের আকুঞ্চন শিথিল করে দিন। এভাবে প্রাণায়ামটি ২ থেকে ৫ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম নিয়মিত অভ্যাস করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে যাবতীয় অজীর্ণতা দূর করে এবং উদর ও নাভিপ্রদেশের স্নায়ু ও পেশীগুলোকে সতেজ ও সবল করে অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে দেয় না। প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয়, অগ্ন্যাশয়, যৌনগ্রন্থি প্রভৃতি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। হাঁপানী রোগীদের জন্যেও তা বিশেষ উপকারী।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৬|
পদ্ধতি:

পদ্মাসনে বা যে কোন সহজ ধ্যানাসনে সোজা হয়ে বসুন। এবার দমভরে পুরক বা শ্বাস নিতে থাকুন এবং একইসাথে তলপেট বা নাভিপ্রদেশ আকুঞ্চন করে ভেতরের দিকে টেনে নিন। শ্বাস নেয়া শেষ হলে নাক বন্ধ করে মুখে ফু দিয়ে রেচক বা শ্বাসত্যাগ করুন এবং নাভিপ্রদেশ শিথিল করে দিন। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং যাবতীয় পেটের পীড়া নিরাময় করে। পেট ও তলপেটের মাংসপেশী দৃঢ করে এবং এ অঞ্চলের স্নায়ুজাল সক্রিয় রাখে। প্লীহা, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, মূত্রাশয় ও যৌনগ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। এ প্রাণায়াম দেহের কুপিত বায়ু সহজে বের করে দেয। রাত্রে যাদের ভালো ঘুম হয় না, নাক-মুখ দিয়ে গরম হাওয়া বের হয়, তাদের জন্য এই প্রাণায়ামটি অত্যন্ত উপকারী।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৭|
পদ্ধতি:

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ হাত বাঁ বুকের উপর এবং ডান হাত ডান বুকের উপর রাখুন। কনুই দুটোকে পেছনদিকে যথাসাধ্য ভেঙে রাখুন। এখন উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে পুরক বা শ্বাস নিতে থাকুন। যতক্ষণ শ্বাস নেয়া অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ বুক ও হাতের পেশী ও স্নায়ু সটান থাকবে। এবার ধীরে ধীরে রেচক বা শ্বাসত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে ওগুলো শিথিল করে দিন। এভাবে ২ থেকে ৪ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুস ও শ্বাসক্রিয়া সতেজ ও সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর করে। বয়েস অনুযায়ী যাদের বুক সরু বা অপরিণত, তাদের জন্য প্রাণায়ামটি খুবই উপকারী।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৮|
পদ্ধতি:

পা দুটো জোড়া করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এখন হাত দুটো কাঁধ বরাবর সামনে উপরে তুলুন। এবার রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কিছুটা নত হয়ে দু’হাত দিয়ে দু’ হাঁটু স্পর্শ করুন। প্রক্রিয়াটা এমনভাবে হবে যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হবে আর হাতও হাঁটু স্পর্শ করবে। এখন পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে সোজা হয়ে দাঁড়ান যেন শ্বাস নেয়াও শেষ হয় এবং সেই সঙ্গে দেহটাও সোজা হয়। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
প্রাণায়ামটি অভ্যাসে বিশেষ করে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং যক্ষ্মারোগ প্রতিরোধ করে।

@ সহজ প্রাণায়াম।০৯|
পদ্ধতি:

পা দুটো জোড়া রেখে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত দুটো পাঁজরের দু’পাশে লম্বা করে রাখুন। এখন ধীরে ধীরে ও গভীরভাবে পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো উপরদিকে তুলুন এবং মাথার পেছনদিকে নিয়ে লম্বা করে মাটিতে রাখুন। প্রক্রিয়াটি এমনভাবে হবে যেন শ্বাস নেয়াও শেষ হবে আর হাত দুটোও মাথার পেছনে মাটিতে লাগবে। এরপর রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত দুটো পূর্বাবস্থায় পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন যেন শ্বাসত্যাগও শেষ হয় এবং হাত দুটোও পূর্বাবস্থায় মাটিতে আসে। এভাবে ২ থেকে ৫ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।


এবার হাত দুটোকে বিশ্রাম দিয়ে পা দুটো দিয়ে অভ্যাস করুন। প্রথমে পুরক বা শ্বাস নিতে নিতে ডান পায়ের হাঁটু না ভেঙে সোজা অবস্থায় রেখে যতদুর সম্ভব উপরে তুলুন। এরপর রেচক বা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা’টিকে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসুন। এখন বাঁ পা দিয়েও একইভাবে অভ্যাস করুন। এভাবে পা বদল করে করে করে ২ থেকে ৪ মিনিট প্রাণায়ামটি অভ্যাস করুন।
তারপর দু’ পা একসঙ্গে করে একই ভাবে প্রাণায়ামটি ২/৩ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
এ প্রাণায়াম অভ্যাসে ফুসফুসের বায়ুধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হাত, পা ও তলপেটের পেশী দৃঢ় ও সবল করে এবং এসব অঞ্চলের স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। সর্দি কাশি নিরাময় করতেও এ প্রাণায়াম উপকারী।

@ সহজ প্রাণায়াম।১০|
পদ্ধতি:

শবাসনে শুয়ে দেহটাকে শিথিল করে দিন। হাত দুটো পরস্পর অঙ্গুলিবদ্ধ করে নাভির উপর রাখুন। এবার উভয় নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দমভরে পুরক বা শ্বাস গ্রহণ করুন। শ্বাসগ্রহণ শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে রেচক বা শ্বাসত্যাগ করুন। পুরক বা শ্বাসগ্রহণকালে চিন্তা করতে হবে- বায়ুস্থ প্রাণশক্তি আমার দেহের মধ্যে প্রবেশ করে নাভিদেশে অবস্থিত সূর্যগ্রন্থি বা প্যাংক্রিয়াস গ্ল্যান্ডে জমা হচ্ছে এবং শ্বাস ত্যাগ বা রেচককালে মনে করতে হবে- সূর্যগ্রন্থিতে সঞ্চিত প্রাণ-শক্তি দেহের প্রতিটা রন্ধ্র, গ্রন্থি, স্নায়ু ও শিরা-উপশিরায় পরিব্যাপ্ত হয়ে গোটা দেহকে প্রাণবন্ত করে চলেছে এবং দেহে সঞ্চিত দূষিত পদার্থ ও রোগ জীবাণু বিষ বায়ুর সঙ্গে বের হয়ে যাচ্ছে।


এভাবে প্রাণায়ামটি নিজ সামর্থমতো ৫ থেকে ১০ মিনিট অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
নিয়মিত এ প্রাণায়ামের অভ্যাস নীরোগ দেহ এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি-চিন্তাশক্তি সম্পন্ন বলিষ্ঠ মন গঠনে বিশেষভাবে সহায়তা করে। দেহ ও মনকে প্রশান্তিময় করে তোলে।

[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৭৭][**][৭৯]