Thursday, April 9, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩৬। আসন: বৃশ্চিকাসন।


ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩৬। আসন: বৃশ্চিকাসন।
রণদীপম বসু

বৃশ্চিকাসন (Vrishchikasana):
এ আসন অভ্যাসে দেহকে বৃশ্চিক বা বিচ্ছুর মতো দেখায় বলে আসনটির নাম বৃশ্চিকাসন।

@ পদ্ধতি (ক):


প্রথমে শলভাসনের ভঙ্গিমায় আসুন। অর্থাৎ হাত দুটো দেহের দু’পাশে লম্বাভাবে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালু মেঝের দিকে থাকবে। চিবুক মেঝেতে অথবা একপাশে বাঁকিয়ে রাখুন। এখন পা দুটো জোড়া ও সোজা রেখে মেঝে থেকে হাত দেড়েক উপরে তুলুন। শলভাসনের এই ভঙ্গিমায় হাত দুটো দু’পাশে মেলে দিন। এবার পা দুটো আরো উঁচু করে এনে হাঁটু থেকে ভেঙে পায়ের পাতা মাথার উপর বা দু’পাশে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত, বুক ও কোমরের উপর জোর রেখে পা দুটো উঁচু করে উঠিয়ে ফের আস্তে আস্তে মেঝেতে নামিয়ে নিয়ে আসুন এবং উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
এ আসন অভ্যাসে ঘাড়, কাঁধ, গলা, বুক, পিঠ, মেরুদণ্ড, পেট, বস্তিপ্রদেশ, নিতম্ব ও কোমরের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, ফলে দেহে কোন রোগই আসতে পারে না।

@ পদ্ধতি (খ):


প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এবার পা দুটো হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা যতদূর সম্ভব পিঠের উপর আনুন এবং হাতদুটো পেছন দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গোড়ালির কাছে শক্ত করে ধরুন। এখন পা দুটো যতটুকু সম্ভব মাথার দিকে টেনে আনুন। শরীর ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে বুক, হাঁটু ও উরু মেঝে থেকে উঠে আসবে। শুধু পেট ও তলপেট মেঝেতে থাকবে। ধনুরাসনের এই অবস্থায় দু’হাত দিয়ে দুপায়ের বুড়ো আঙুল ধরে পায়ের পাতা দুটো টেনে এনে মাথার তালুর উপর রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর হাত-পা আলগা করে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
ধনুরাসনের সমস্ত উপকার এ আসন থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ আসন মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় রাখে। মেরুদণ্ড-সংলগ্ন স্নায়ুমণ্ডলী ও তার পাশের পেশী সতেজ ও সক্রিয় রাখে। বুকের পেশী ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বুক সুগঠিত করে। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তলপেটের উপর দেহের সমস্ত ভার পড়ে বলে ঐ অঞ্চলের পেশী, স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় থাকে এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, প্লীহা, যকৃৎ খুব ভালো কাজ করে। আসনটি অভ্যাসে দেহের মধ্যভাগের অপ্রয়োজনীয় মেদ দূর হয়।

@ পদ্ধতি (গ):


প্রথমে ব্যাঘ্রাসনে আসুন। অর্থাৎ হাঁটু গেড়ে পায়ের আঙুলগুলো মেঝেতে রেখে বসুন। এবার দু’হাতের তালু উপুড় করে কনুই পর্যন্ত মেঝেতে রাখুন। এখন শ্বাস নিতে নিতে দেহের ভার কনুই থেকে হাতের তালুর উপর রেখে কাঁধ ও কোমরের উপর ভারসাম্য রাখা অবস্থায় হাঁটু উঁচু করে পায়ের আঙুল দিয়ে মেঝেতে সামান্য একটু ঠেলা বা ঝাঁকুনি দিয়ে পা দুটো জোড়া অবস্থায় সোজা উপরে তুলে দিন এবং মাথার একটু পেছনদিকে নিয়ে আসুন। এবার মাথা একটু উপরে তুলে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ব্যাঘ্রাসনের এ অবস্থা থেকে এখন উত্থিত পা দুটো হাঁটু ভেঙে পায়ের পাতা দুটোকে নামিয়ে এনে মাথার তালুতে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০সেঃ থেকে ৩০সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
এরপর আস্তে আস্তে পা উঠিয়ে মেঝেতে নামিয়ে আনুন। কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:
ব্যাঘ্রাসনের সমস্ত উপকার এ আসনে পাওয়া যায়। এ আসন অভ্যাসে হাত, পা, বুক, মেরুদণ্ড, পিঠ, পেট, ঘাড়, কাঁধ, গলা, নিতম্ব, বস্তিপ্রদেশ এবং দেহের মধ্যভাগের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। পেটে ও কোমরে অপ্রয়োজনীয় মেদ জমতে পারে না বলে এ আসনে দেহ খুব হালকা হয় এবং দেহের ক্ষিপ্রতা বাড়ে। মেরুদণ্ডের মধ্যে অধিক রক্ত সঞ্চালিত হওয়ায় মেরুদণ্ড অধিক সাবলীল হয় এবং হাত ও কোমরের প্রচণ্ড শক্তি বৃদ্ধি করে।

নিষেধ:
যাদের হৃদযন্ত্রে বা গলদেশের ভেতরে কোন রোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আসনটি করা উচিৎ নয়।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৩৫][**][৩৭]

No comments: