| ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯৫। নিরাময়: কৃশতা।
রণদীপম বসু
# (০৫) কৃশতা (Thinness|Krishota):
কৃশতাকে একটি রোগ হিসেবেই চিহ্ণিত করা হয়ে থাকে। পিতা-মাতার স্বাস্থ্যহীনতা, দুর্বলতা বা স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞানের অভাব বা দারিদ্র্য এবং পিটুইটারি গ্রন্থির অধিক ক্ষরণ ও মানসিক দুশ্চিন্তাকেই এই রোগের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয়।
রোগের লক্ষণ:
কৃশতার প্রাথমিক লক্ষণই হচ্ছে নির্ধারিত মাত্রাসীমার চেয়ে ওজন কম থাকা। শারীরিক উচ্চতা ও দেহের গড়ন অনুযায়ী মানসম্মত হারের মধ্যেই ওজন থাকা আবশ্যক। এর চেয়ে ওজন ১০% -এর বেশি নিচে হলেই তাকে কৃশতা বা দুর্বলতা রোগ হিসেবে চিহ্ণিত করা যেতে পারে। সাধারণ ক্ষেত্রে ওজনের এই মানসম্মত হার হবে এরকম-
উচ্চতা (ইঞ্চি) ওজন (পুরুষ) কিঃগ্রাঃ ওজন (স্ত্রী) কিঃগ্রাঃ
৬০ ইঞ্চি ৫০ থেকে ৫৬ কেজি ৪৫ থেকে ৫২ কেজি
৬৩ ইঞ্চি ৫৩ থেকে ৫৯ কেজি ৪৯ থেকে ৫৬ কেজি
৬৫ ইঞ্চি ৫৭ থেকে ৬৩ কেজি ৫২ থেকে ৫৯ কেজি
৬৮ ইঞ্চি ৬৩ থেকে ৬৯ কেজি ৫৯ থেকে ৬৫ কেজি
৭০ ইঞ্চি ৬৬ থেকে ৭৩ কেজি ৬২ থেকে ৬৯ কেজি
এখানে ওজন দেখানোর ক্ষেত্রে প্রথমটি ছোট গড়নের এবং দ্বিতীয়টি বড় গড়নের পুরুষ ও স্ত্রীর মানসম্মত ওজন দেখানো হয়েছে। মাঝারি গড়নের পুরুষ বা স্ত্রীর ক্ষেত্রে দুটোর মাঝামাঝি ওজনকে বিবেচনায় নিতে হবে। যেমন ৬০ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট পুরুষের দেহের মানসম্মত ওজন হবে ছোট গড়নের ক্ষেত্রে ৫০ কেজি, এবং বড় গড়নের ক্ষেত্রে ৫৬ কেজি। অতএব মাঝারি গড়নের ক্ষেত্রে ওজন হবে ৫৩ কেজি।
রোগের কারণ:
শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে দেখা যায় যে রুগ্ন ও দুর্বল পিতা-মাতার সন্তানরা অনেকক্ষেত্রেই রুগ্ন ও দুর্বল হয়ে থাকে। এটা কোন অপরাধ নয়, তবে পিতা-মাতার স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞানের অভাব বা দারিদ্র্য একটা ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা যায়। ছোট ছেলে-মেয়েরা কাঁদলেই তাদেরকে গলা পর্যন্ত টই করে খাইয়ে দিতে হবে এরকম অতিভোজন-স্বভাব ছেলেমেয়েদের পাকস্থলী ও যকৃতকে দুর্বল করে অজীর্ণতাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে থাকে। ফলে কচি বয়স থেকেই এরা কৃশ ও দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার পিতা-মাতার আর্থিক অনটন থাকলে ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শুশ্রূষা নিশ্চিত করতে না পারাও একটা কারণ।
যুবকদের ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, মানসিক দুশ্চিন্তা, প্রয়োজনীয় পরিশ্রম ও ব্যায়াম বিমুখতা এবং দেহের প্রধান গ্রন্থিগুলো বিশেষ করে ইন্দ্রিয় গ্রন্থি ও পিটুইটারি গ্রন্থির দুর্বলতা কৃশ ও দুর্বল হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম এবং এর সাথে বয়সোপযোগী শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের অভাব ছাড়াও পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব এই রোগের কারণ।
রোগ নিরাময়:
অপুষ্ট কৃশ ও দুর্বল শিশুরা পঞ্চম বছরে পা দিলে সামর্থমতো পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা এবং স্বাভাবিক দৌড়ঝাঁপ করার ব্যবস্থা করা। এর সাথে অল্প মাত্রায় অর্ধ-চন্দ্রাসন, পদহস্তাসন ও ত্রিকোণাসন অভ্যাস করানো গেলে ২/৩ বছরের মধ্যে অন্য শিশুর মতো সুস্থ ও সবল হয়ে উঠবে।
অপুষ্ট কৃশ ও দুর্বল যুবকরা প্রতিদিন নিয়মিত কিছু ‘খালি হাতে ব্যায়াম’ বা সূর্যনমস্কার ব্যায়াম অভ্যাসের পর যৌগিক আসনের আটটি আসন ও মুদ্রা চর্চা করলে অবশ্যই তারা অধিকতর সুস্থ সবল ও কর্মঠ জীবনযাপন করতে পারবে। এক্ষেত্রে সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে লেবুর রস মিশিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে প্রথমে কিছু খালি হাতে ব্যায়াম ও সূর্য-নমস্কার ব্যায়াম করে ২/৩ মিনিট শবাসন করতে হবে। এরপর পবন-মুক্তাসন, গোমুখাসন, অর্ধকুর্মাসন, শশঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন, মৎস্যাসন ও সর্বাঙ্গাসন করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে কখনোই একসাথে ছয় থেকে আটটি আসনের বেশি অভ্যাস করা উচিত নয়।
বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোজ সকালে নিয়মিত সহজ বস্তিক্রিয়া অভ্যাসে কোষ্ঠ পরিষ্কার করে সকাল-বিকাল অল্প মাত্রায় পবনমুক্তাসন, অর্ধকুর্মাসন ও যোগমুদ্রার সাথে ভ্রমণ-প্রাণায়াম ও নাড়ী শোধন প্রাণায়াম অভ্যাস করলে সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে কর্মঠ দীর্ঘজীবন লাভ করা কঠিন নয়।
[Images: from internet](চলবে...)
পর্ব: [৯৪][**][৯৬]
No comments:
Post a Comment