Saturday, July 25, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯২। নিরাময়: অজীর্ণ ও অম্লদোষ।


|ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯২। নিরাময়: অজীর্ণ ও অম্লদোষ।
রণদীপম বসু

# (০২) অজীর্ণ ও অম্লদোষ (Indigestion, Dyspepsia and Acidity | Ojirno- Omlo):

সাধারণ ক্ষেত্রে এই রোগে মৃত্যু ঘটে না। তবে এ রোগে আক্রান্ত হলে দেহের ক্ষয়ের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমতে থাকে। ফলে সহজেই অন্যান্য রোগের কবলে পড়ে মৃত্যু বরণ করা সহজতর হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় থেকে যাতে এই অজীর্ণ রোগ বিস্তার লাভ করতে না পারে এবং দ্রুত নিরাময় হয় যথাসাধ্য সে চেষ্টা করা উচিত।


রোগের লক্ষণ:
আক্রান্ত রোগী খাবার পর বমি বমি ভাবসহ বুকে পেটে চাপ বোধ করে। বমি হলে চাপ একটু কম মনে হয়। ক্ষুধামন্দা, আহারে অরুচি, পেটে অতিরিক্ত বায়ু-জমা, মুখে ও শ্বাসে দুর্গন্ধ, জিহ্বায় সাদা বা হলদে ময়লার স্তর জমা, তলেপট ভার হয়ে থাকা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অজীর্ণের সাথে যারা রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত হয় তাদের পেটে ঘা ও ব্যথা হতে পারে। দুর্বল অন্ত্রের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য বা কোষ্ঠতারল্য হতেও দেখা যায়।


রোগের কারণ:
অপরিমিত বা অল্প ক্ষুধায় অধিক মাত্রায় আহার বা অতিরিক্ত তেল ঘি মশলাযুক্ত গুরুপাক খাদ্য গ্রহণ এবং কায়িক-শ্রমবিমুখতা বা পরিমিত ব্যায়ামের অভাব এই রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। অতিরিক্ত ওষুধপ্রীতি, অধিক রাতে ভরপেট খাবার অভ্যাস, দিনের পর দিন একই ধরনের খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত ঘুম বা মদ্যপান, মানসিক দুঃশ্চিন্তা বা অশান্তি, এক বা একাধিক বিশেষ গ্রন্থির অক্ষমতা ইত্যাদি যে কোন কারণে অজীর্ণ রোগ হতে পারে।


রোগ নিরাময়:
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ১-২ গ্লাস পানি খেয়ে পবন-মুক্তাসন, পদ-হস্তাসন, ভুজঙ্গাসন, যোগমুদ্রা, মৎস্যাসন, বিপরীতকরণী মুদ্রা ও অগ্নিসার অভ্যাস করলে বিশেষভাবে উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়া বিকেলে সহজ কিছু খালি-হাতে ব্যায়াম বা সূর্য-নমস্কার ব্যায়াম অভ্যাসের পর সর্বাঙ্গাসন, ধনুরাসন, পশ্চিমোত্থানাসন, অর্ধচক্রাসন এবং এক মিনিট উড্ডীয়ান মুদ্রা ও এক মিনিট নৌলী অভ্যাস করলে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, ১৩/১৪ বছরের নিচে অল্পবয়েসী ছেলেমেয়েদের (মেয়েদের ঋতু সুপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত) উড্ডীয়ান ও নৌলী অভ্যাস করা উচিত নয়।


দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত দুর্বল রোগীদের জন্য সহজপাচ্য লঘু খাবার গ্রহণ এবং দুপুর ও রাতে খাদ্য গ্রহণের পর পর কিছুক্ষণ বজ্রাসন অভ্যাস করলে ভুক্তখাদ্য সহজে পরিপাক হতে সহায়তা হবে। সকাল-বিকাল খোলা জায়গায় ভ্রমণ-প্রাণায়াম করলে সুফল পাওয়া যাবে। অজীর্ণ ও অম্ল রোগীদের জন্য সকালে ও বিকেলে শুকনো খই বা মুড়ি চমৎকার ও আদর্শ নাস্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। আহারের সময় পানি যত কম খাওয়া হবে ততই ভালো। খাওয়ার আধঘণ্টা পর সাধারণ পানীয় জল বা ডাবের পানি খাওয়া উচিত। দিনে যত বেশি পানি খাওয়া যাবে ততই উপকার।

এভাবে নিয়মিত অভ্যাসে রোগের লক্ষণ দূর হয়ে গেলে উপরোক্ত আসনগুলোর সাথে নিয়মিত হলাসনশলভাসন অভ্যাস করলে অজীর্ণ ও অম্ল রোগ চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৯১][**][৯৩]

No comments: