ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯০। রোগ-নিরাময়।
রণদীপম বসু
# রোগ-নিরাময়ে ইয়োগা (Remedy from diseases by practising Yoga):
শরীর আছে বলেই রোগের অস্তিত্ব। তাই শরীর থাকলে রোগ-ব্যাধি থাকবেই। মাঝে মাঝেই আপনার দেহ-মন্দিরে ব্যাধির অস্পৃশ্য ছোঁয়া লাগবেই। আর এসব রোগ-বালাই’র উৎপাত থেকে দেহযন্ত্রকে নিরাপদে আগলে রাখতে হলে কিছুটা চেষ্টা-চরিত তো থাকতেই হবে।
প্রধানত দুটো কারণে দেহ রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে-
(১) স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম-কানুন না-জানা বা না-মানা’র প্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত বিপাকক্রিয়াজনিত কারণ।
(২) রোগ-জীবাণু সংক্রমণ।
যে বিষয়টা আমাদের মনে রাখতে হবে, জীবাণু সংক্রমিত রোগ থেকে আরোগ্যের ক্ষেত্রে ইয়োগা বা যৌগিক-ব্যায়ামের বিশেষ কোন ক্ষমতা নেই। সে ক্ষেত্রে যথাযথ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন আবশ্যক। তবে ইয়োগা যা করতে পারে তা হলো, নিয়মিত অভ্যাসে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতো শক্তিশালী হয়ে উঠে যে রোগ-জীবাণু দেহে প্রবেশ করলেও ইয়োগা চর্চাকারীকে সহজে কাবু করতে পারে না। ফলে দেহ সহজে আক্রান্ত হয না।
তারপরও অধিকতর নিরাপত্তার কারণে দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশের উপায়গুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিৎ। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে, খাবার ও পানির মাধ্যমে, হাত-পায়ের ত্বক বা চামড়া ভেদ করে কিংবা ইঞ্জেকশানের সুইয়ের মাধ্যমে ইত্যাদি নানাভাবে দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এগুলো প্রবেশ করে দেহের বিপাকক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্যোগ নিলেই দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাবাহী রক্তের শ্বেতকণিকা তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। তাই এই প্রতিরোধ ক্ষমতার উপরই মূলত দেহের রোগে আক্রান্ত হওয়া না হওয়া নির্ভর করে।
বলা হয়ে থাকে, কোন রোগই একাঙ্গিক নয়, সর্ব-দৈহিক। অর্থাৎ কোন একটি গ্রন্থি বা স্নায়ু বা যন্ত্র দুর্বল হলেই দেহে রোগের সৃষ্টি হয় না। কেননা অন্য গ্রন্থি বা স্নায়ু এই ঘাটতি পূরণ করতে প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদনে এগিয়ে আসে। কিন্তু দেহের কয়েকটি গ্রন্থি বা কয়েকটি স্নায়ু বা কয়েকটি যন্ত্র কিংবা একাধিক গ্রন্থি-স্নায়ু-যন্ত্র একসাথে কম-বেশি দুর্বল ও অক্ষম হয়ে পড়লেই দেহ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই দেহকে রোগমুক্ত করা রা রাখার জন্য বিভিন্ন গ্রন্থি, স্নায়ু বা দেহযন্ত্রাংশগুলোকে সবল ও কর্মক্ষম রাখা একান্তই আবশ্যক এবং এ জন্যেই নিয়মিত ইয়োগা চর্চার মাধ্যমে বিভিন্ন আসন ও মুদ্রা অভ্যাস করা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম না-জানা বা না-মানার কারণে যেসব রোগ হয়ে থাকে তার অনেকগুলোই ইয়োগা বা যৌগিক-ব্যায়াম অভ্যাসের মাধ্যমে নিরাময় হওয়া সম্ভব। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, ইয়োগার মাধ্যমে রোগ নিরাময় সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই সময়কাল নির্ভর করে রোগের বয়স বা প্রাচিনত্বের উপর। রোগ পুরাতন হলে দীর্ঘমেয়াদী ইয়োগা অভ্যাসের প্রয়োজন হতে পারে। প্রথমত প্রয়োজনীয় আসনগুলো আয়ত্ত করতে ব্যয়িত সময়, দ্বিতীয়ত দুর্বল অক্ষম বা বিকৃত দেহযন্ত্রের উপর আসনের প্রভাব ধীরে ধীরে কার্যকর হওয়া।
চমৎকৃত হওয়ার মতো বিষয় হলো, ইয়োগা অভ্যাসে রোগাক্রান্ত দেহযন্ত্র কেবল সুস্থই হয়ে ওঠে না, পাশাপাশি অন্যান্য দেহযন্ত্রগুলোকেও অধিকতর সুস্থ সবল ও সক্রিয় করে তুলে। ফলে দেহটা তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্যে মাধুর্য্যমণ্ডিত ও সুস্থ সাবলীল হয়ে ওঠে। আর এই দেহের আধারে থাকা মনটাও তার নিজস্ব স্বতঃস্ফূর্ততায় হয়ে ওঠে ঝলমলে উজ্জ্বল।
এ প্রেক্ষিতে এবার ইয়োগা অভ্যাসে নিরাময়যোগ্য কিছু রোগ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।
[Images: from internet](চলবে...)
পর্ব: [৮৯][**][৯১]
No comments:
Post a Comment