
|ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯১। নিরাময়: কোষ্ঠবদ্ধতা।
রণদীপম বসু
# (০১) কোষ্ঠবদ্ধতা (Constipation | Koshthoboddhota):
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবেই এই রোগটার সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় এটাকে আমরা গ্রাহ্য করি না বলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই রোগটি যতক্ষণ না কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে ততক্ষণ আমাদের বোধোদয় হয় না। আর সুযোগে এই রোগটির শিকড় গেড়ে বসার কারণে আরো নানান রোগে ভোগার সূত্রপাত ঘটে থাকে। পুরুষের তুলনায় মেয়েদেরকে এ রোগে বেশি ভুগতে দেখা যায়।

রোগের লক্ষণ:
মলত্যাগে অনিয়ম ও মাঝে মাঝে কাদার মতো দুর্গন্ধযুক্ত মলত্যাগ। কোষ্ঠ পরিষ্কার না হওয়ায় তলপেট ভার হয়ে থাকা। মুখে ও শ্বাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে জিহ্বায় সাদা বা হলদে ময়লা স্তর পড়া। মাথায় ভারবোধ করা, মাথাধরা। অনিদ্রা ও আহারে অরুচি। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কোষ্ঠবদ্ধতার লক্ষণ।

রোগের কারণ:
নানান কারণে কোষ্ঠবদ্ধতা হতে পারে। খাদ্য নির্বাচনে সতর্কতার অভাব, অখাদ্য গ্রহণ, তাড়াহুড়ো করে বা অন্যমনস্কভাবে খাদ্যগ্রহণ, অপরিমিত বা অল্প ক্ষুধায় পুরো আহার কিংবা অধিক রাতে ভরপেট খাবার অভ্যাস, বাসী-পচা অতিরিক্ত তেল ঘি মশলাযুক্ত আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া, পেটের পেশীর দুর্বলতা, কায়িক শ্রমবিমুখতা, মানসিক দুঃশ্চিন্তা বা অশান্তি, এক বা একাধিক বিশেষ গ্রন্থির অক্ষমতা ইত্যাদি। তাছাড়া প্রয়োজন মুহূর্তে মলত্যাগ না করে মল চেপে রাখলেও এ রোগ হতে পারে। আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া বা পানি কম খাওয়াও এ রোগের অন্যতম কারণ।
যারা কম পানি পান করে বা কোন কারণে যাদের অধিক প্রস্রাব হয়, তাদের অন্ত্রে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় মল নিঃসরণ কষ্টকর হয়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে কোষ্ঠবদ্ধতা তৈরি হয়।
এছাড়া স্থূলদেহীরা মোটা হবার ফলে কিংবা অব্যবহারের কারণে পেটের পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে করে শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুক ও পেটের মাঝে অবস্থিত মধ্যচ্ছদা পর্দার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যহত হয়ে পাকস্থলীর উপর সঠিক আলোড়ন সৃষ্টি করতে না পারায় পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্রকে অধিক সক্রিয় করে তুলতে ব্যর্থ হয়। ফলে স্বাভাবিক মল নিঃসরণ সম্ভব হয় না এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেয়।

রোগ নিরাময়:
পরিমিত খাবারের সাথে বেশি করে শাক-সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ রোগ বেশি পুরাতন হলে সহজে সারতে চায় না। সেক্ষেত্রে উচিত রোজ রাতে শোবার আগে ৩/৪ চামচ ইসবগুলের ভূষি পানিতে ভিজিয়ে চিনিসহ পান করে ঘুমোতে যাওয়া এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে ১-২ গ্লাস ঈষদোষ্ণ পানিতে এক চামচ লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করে কিছুক্ষণ পায়চারি করার পর কয়েকটি আসন অভ্যাস করে তারপর পায়খানায় যাওয়া। তবে পায়চারির বদলে উড্ডীয়ান ও নৌলি মুদ্রা দুটো অভ্যাস করলে (অবশ্যই কমপক্ষে ১৩/১৪ বছর বা তার বেশি বয়সের ছেলে এবং ঋতু সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন মেয়েদের ক্ষেত্রে) আরো দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
এ ক্ষেত্রে বিশেষ ফলপ্রসূ যেসব আসন অভ্যাস করতে হয় সেগুলো হলো- পবন-মুক্তাসন, ভুজঙ্গাসন কিংবা অর্ধ-চক্রাসন, পদ-হস্তাসন, অর্ধচন্দ্রাসন, মৎস্যাসন, বিপরীতকরণী মুদ্রা বা সর্বাঙ্গাসন কিংবা হলাসন। এ ছাড়া সহজ বস্তিক্রিয়া কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করণে অদ্বিতীয় হিসেবে ধরা হয়।
[Images: from internet](চলবে...)
পর্ব: [৯০][**][৯২]
No comments:
Post a Comment