Saturday, July 25, 2009

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯৩। নিরাময়: আমাশয়।


|ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে । ৯৩। নিরাময়: আমাশয়।
রণদীপম বসু

# (০৩) আমাশয় (Dysentery | Amashoy):

এটা জীবাণু ঘটিত এক ধরনের সংক্রামিত রোগ। সাধারণ ক্ষেত্রে এই রোগ জীবনসংশয়কারী না হলেও খুব বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। এই রোগে একবার আক্রান্ত হলে ভোগান্তি থেকে সহজে নিরাময় হওয়া যায় না। ক্রনিক পর্যায়ে চলে গেলে দেহে অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে এবং রোগী নিজেই এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
দু'ধরনের আমাশয়ের কথা শোনা যায়। অ্যামিবা জাতীয এক ধরনের জীবাণু থেকে অ্যামিবিক আমাশয় এবং সিগেলা জাতীয় ব্যাসিলাস থেকে ব্যাসিলারি আমাশয় হয়ে থাকে। জীবাণুগুলো পেটে গিয়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটাতে থাকলে ক্ষুদ্রান্ত্রে ও বৃহদন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং অন্ত্রের ঝিল্লীতে ঘা বা ক্ষত সৃষ্টি করে। এই ঘা বা ক্ষত বৃহদন্ত্রে হলে তাকে বলে কোলাইটিস (Colitis), আর প্রদাহ ক্ষুদ্রান্ত্রে হলে তাকে অন্ত্র-প্রদাহ বা ইটারাইটিস (Eteritis) বলে। এই ঘা বা ক্ষতজনিত প্রদাহ দুই অন্ত্রেই হতে পারে। তাকে বলে এন্টারোকোলাইটিস (Enterocolitis)।

রোগের কারণ:
পানি, বাতাস, মশা, মাছি ও খাবারের মাধ্যমেই সাধারণত এই রোগ সংক্রামিত হয়ে থাকে। গরম ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে।


রোগের লক্ষণ:
প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে- কয়েকদিন আগে থেকে পেটে অস্বস্তি ও ভার ভার বোধ হওয়া। কোন কোন ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং তারপরে উদরাময় দেখা দেয়। পায়খানার পূর্বে নাভির চারপাশে ও তলপেটে ব্যথা অনুভূত হয়। পেট কামড়াতে থাকে এবং বার বার পায়খানার বেগ হয়। কিন্তু পায়খানা খুব অল্পই হয়। পায়খানা দুর্গন্ধযুক্ত হয় এবং পায়খানার পরেও ব্যথা বা পেট কামড়ানো কিছুক্ষণ থাকে।
পায়খানা হলে প্রথমে কাদা কাদা এবং পরে পায়খানার সাথে কফ বা মিউকাস মিশ্রিত অল্প অল্প হলদে, সবুজ, কালো মল নির্গত হতে থাকে। জীবাণু দ্বারা অন্ত্রের ঝিল্লী ক্ষত-বিক্ষত হলে রক্তস্রাবের কারণে পায়খানা লালচে হয়ে যায়। মলের সাথে রক্ত নির্গত হলে তখন এ রোগকে বলা হয় রক্ত-আমাশয় (Blood-dysentery)।
অনেক ক্ষেত্রে পেটে বায়ু জমে এবং দেহের তাপ বৃদ্ধি পেয়ে অল্প জ্বরও আসতে পারে।


রোগ নিরাময়:
দ্রুত বংশ বৃদ্ধিক্ষম বহিঃস্থ জীবাণু দ্বারা আক্রান্তের কারণে এই আমাশয় রোগ সৃষ্টি হয বলে রোগগ্রস্ত হলে প্রথমে ঔষধের সহায়তায় যত শীঘ্র সম্ভব দেহকে জীবাণুমুক্ত করা আবশ্যক। সেই সাথে নিয়মিত যৌগিক-ব্যায়াম ও যথাযথ রোগারোগ্যের নিয়ম-কানুন পালন করলে আর আক্রমণ করতে পারে না। তবে মনে রাখতে হবে, শুধুমাত্র ঔষধে এ জাতীয় রোগ চিরতরে দূর হয় না। সুযোগ পেলেই এরা দেহে বাসা বেঁধে ফেলে। নিয়মিত ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম অভ্যাসে রাখলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে সে সুযোগ আর থাকে না।

আমাশয় রোগীর পথ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। পানীয় হিসেবে লেবুর শরবত, ঘোল বা মাঠা, পাতলা বার্লি, ডাবের পানি, বেলের শরবত ইত্যাদি। খাবার হিসেবে কাঁচকলা, থানকুনি পাতা, কাঁচা পেঁপে ও জিওল মাছের ঝোল দিয়ে নরম ভাত। এছাড়া দুধের ছানা বা ছানা জাতীয় খাবার আমাশয় রোগীর জন্য বিশেষ উপকারী।


আমাশয় রোগীকে রোজ সকালে সহজ বস্তিক্রিয়া অভ্যাস করে কোষ্ঠ পরিষ্কার করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে এক গ্লাস পানি পান করে পবন-মুক্তাসন, পদ-হস্তাসন, বিপরীতকরণী মুদ্রাযোগমুদ্রা অভ্যাস করা প্রয়োজন। এ সময় কোন কঠিন ব্যায়াম বা আসন করা ঠিক নয়। সকাল বিকাল খোলা জায়গায় কিছুক্ষণ পায়চারি করা যেতে পারে। রোগ প্রশমিত হয়ে এলে এই আসন ও মুদ্রাগুলোর সাথে সুবিধামতো সকালে বা বিকেলে নিয়মিত পশ্চিমোত্থানাসন, অর্ধ-কুর্মাসন, অর্ধ-চক্রাসন, মৎস্যাসনসর্বাঙ্গাসন অভ্যাস করলে শরীর সুস্থ সবল তো হবেই, আমাশয়ের মতো এমন বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাকর রোগ থেকে চিরকাল মুক্ত থাকা যাবে।
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব: [৯২][**][৯৪]

2 comments:

Aero River said...

যা জীবাণুঘটিত তা কি শুধুমাত্র ব্যায়াম করেই দূর করা যাবে? কোন নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে নয়, কৌতুহল থেকেই প্রশ্নটি করছি।

ও হ্যাঁ, এখন থেকে আমি নতুন ঠিকানায় পূর্বের লেখাগুলোসহ ব্লগ লিখছি। আশা করি একবার ভিজিট করে দেখবেন ও আপনার সুচিন্তিত মতামত জানাবেন।

যোগ ব্যায়াম সম্পর্কে আমার খুব আগ্রহ, কিন্তু অলসতার কারণে করা হয় না।

ভালো থাকুন


aR
Bangla Hacks

Aero River said...

আপনার মন্তব্য পেয়ে ভালো লাগলো। হ্যাঁ আপনার কথাই সঠিক। তবে নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করলে কি জীবাণূঘটিত রোগব্যাধি একেবারেই হবে না- এ কথা কি ঠিক? জীবাণু কি আক্রমণই করবে না?

আপনার ব্লগ বিষয়ে কোনরকম সাহায্য লাগলে জানাতে দ্বিধা করবেন না।

ভালো থাকুন।

aR
Bangla Hacks