Thursday, December 4, 2008

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।০৫ । অনুশীলনের ভিত্তি।














ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।০৫ । অনুশীলনের ভিত্তি।
রণদীপম বসু

একজন ইয়োগা চর্চাকারীকে তাঁর দেহ-মনের সুস্থতা ও উৎকর্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে দুটো পর্যায়ে অনুশীলনের প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি হচ্ছে তাত্ত্বিক বা ভাবগত পর্যায়ের অনুশীলন। অন্যটি শারীরিক বা দৈহিক অনুশীলন।

যেহেতু ইয়োগা হচ্ছে যুগপৎ দেহ ও মনের অনুশীলন, সে জন্যে তাত্ত্বিক অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর মধ্যে ইয়োগার প্রভাবের ইতিবাচক সম্ভাবনাগুলোকে বিশ্বাসের পর্যায়ে নিয়ে আসা জরুরি। এই বিশ্বাস কোন হাওয়াই বিশ্বাস নয়। এক ধরনের অটোসাজেশান, যা তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে কোন পরিবর্তনযোগ্যতা থাকলে তাও পর্যালোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। আমি কী ? আমার ক্ষমতা কতটুকু ? আমার কী আছে ? আর কী প্রয়োজন ? নৈতিকতা কী ? নৈতিকতার সাথে কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনের কোন বিরোধ আছে কিনা ইত্যাদি। মনকে সুস্থ রাখার জন্য এসব প্রশ্ন এবং তার উত্তর খুঁজে বের করা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে বলেই মনের সুস্থতার জন্য একটা আচরণবিধি ইয়োগা চর্চায় জরুরি হয়ে পড়ে। মূলতঃ পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের প্রথম দুটো অঙ্গ সময় কাল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে জারিত হয়ে এখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে।

আর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে বিভিন্ন আসন প্রাণায়াম মেডিটেশনের শারীরিক ও মনোদৈহিক অনুশীলনের মাধ্যমে দেহ ও মনকে রোগমুক্ত সুস্থ ও অফুরন্ত প্রাণশক্তির আঁধার হিসেবে গড়ে তোলার দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক চর্চা।



কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে, ইয়োগার সরলার্থে কতকগুলো যোগব্যায়ামের পদ্ধতি উল্লেখ করে তা চর্চার প্রক্রিয়া ও উপকার কী কী বর্ণনা করে দিলেই যেখানে ল্যাঠা চুকে যেতো, সেখানে এতোসব কাসুন্দি ঘাটার দরকারটা কী ছিলো ? তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলতে হচ্ছে যে, এটা করলে আসলে ল্যাঠা চুকে যেতো কিনা জানি না, তবে বিরাট একটা অসম্পূর্ণতা তৈরি হতো বলে ধারণা, যাতে তাত্ত্বিক অনুশীলনের প্রস্তুতিটাই তৈরি হতো না। লোহা গরমে রেঙে না উঠলে যেমন কোন সৃষ্টির অনিবার্য নমনীয়তা আসে না, এটাও ঠিক তেমনই। চর্মচোখে আমরা অন্যের যোগাসনে বা যোগব্যায়ামের যে চিত্ররূপ দেখি, এটাই সবকিছু নয়। এই দেখার ভেতরেও আরো যেসব গুরুত্বপূর্ণ দেখার বিষয় রয়ে গেছে সেগুলোই ইয়োগার প্রাণ। কেননা ইয়োগার প্রতিটা আসনে দেহভঙ্গি বিন্যস্ততার সাথে সুশৃঙ্খল শ্বাস-প্রশ্বাস ও মনের যে রাখিবন্ধন অত্যন্ত জরুরি, সেটা স্থাপন না হলে যোগচর্চাটাই বিফলে চলে যেতে পারে। আর এ বিষয়টাকে মাথায় রেখেই বিষয়সংশ্লিষ্টতার কারণে ইয়োগার দর্শনসূত্র, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং এতোসব প্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা।



তাই ইয়োগা সম্পর্কে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হিসেবে অবশ্যই আমাদেরকে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করে নিতে হয়, তা হচ্ছে-
১.০ ইয়োগা আলাদা কোন ধর্মমত বা বিশ্বাস নয়। বরং এর উল্টো। এটা একটা সুশৃঙ্খল ও কার্যকর সাধন প্রক্রিয়া।
২.০ এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই কাঙ্ক্ষিত প্রয়োজনকে চিহ্ণিত করে মনের মধ্যে সম্ভাব্যতাগুলো ধারণ করার মতো একটা বিশ্বাস তৈরির মাধ্যমে নিজের উপর আস্থাবোধ গড়ে তুলতে হয়।
৩.০ যে পদ্ধতিতে এই আস্থাবোধ গড়ে তুলতে হয়, তাকে কেউ কেউ মেডিটেশনও বলে থাকেন। তবে মনকে সম্পৃক্তকরণের মধ্যে নিহিত রয়েছে এর জাদুকরি সাফল্য।
৪.০ এ বিশ্বাস কোন অলৌকিক বিশ্বাস নয়। সম্পূর্ণ লৌকিক এবং দেহগত।
৫.০ এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুনির্দিষ্ট থাকে বলেই অনুশীলন প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন অজ্ঞতা বা অস্পষ্টতা থাকা কাম্য নয়। কার্যকারণ সম্পর্কের মোটামুটি পরিষ্কার একটা ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়।
৬.০ সুস্থতাই যেহেতু এর প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য, তাই প্রথমে দেহের উপরস্থ ও অন্তস্থিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর অবস্থান ও এদের কার্যপদ্ধতি সম্পর্কেও একটা প্রাথমিক ধারণা রাখা আবশ্যক। লাগলে লাগুক, নইলে না, এরকম অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো বিষয় ইয়োগা নয়।
৭.০ মন হচ্ছে অপরিসীম ক্ষমতা সম্পন্ন সেই অলৌকিক ডাক্তার, এবং তা যে দেহনির্ভর একটা চেতনাগত অবস্থা ছাড়া আর কিছুই নয়, এই বিষয়টা আত্মস্থ করে এই অনন্য দেহকে ঘিরে যাবতীয় প্রক্রিয়া নিষ্পন্ন করতে হয়।
৮.০ দেহকে রোগমুক্ত ও প্রয়োজনীয় প্রাণশক্তিময় সুস্থতায় উন্নীত করতে কতকগুলো বিশেষ দেহভঙ্গির অনুশীলনে নমনীয়তা অর্জনের মাধ্যমে দেহের রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বসন প্রক্রিয়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে বিশেষভাবে আন্দোলিত করার যে ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় তাকে আসন, প্রাণায়াম বা মূদ্রা বলা হয়। এর সাথে মনসম্পৃক্ততাকেও আবশ্যিক হিসেবে ধরে নেয়া হয়।
৯.০ আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যে কোন ক্ষেত্রে মনঃসংযোগ বা অনায়াস একাগ্রতাই সাফল্যের নিয়ামক শক্তি। দেহস্থিত মনকে সেই শক্তিতে রাঙিয়ে তোলা ইয়োগার কাজ।
১০.০ সর্বোপরি শরীর ও মনের স্বাস্থ্য অক্ষুণ্ন রেখে ধারাবাহিক চর্চর মাধ্যমে তাকে উৎকর্ষতায় উন্নীত করাই ইয়োগা চর্চার চূড়ান্ত লক্ষ্য।
১১.০ যে কোন বয়সের যে কোন ব্যক্তিই প্রয়োজন অনুযায়ী এই ইয়োগা চর্চায় অংশ নিতে পারেন।



ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়ামের শারীরিক অনুশীলন শুরুর আগে অভ্যাসকারীদের কয়েকটি জ্ঞাতব্য বিষয় মাথায় রেখেই চর্চায় নিয়োজিত হতে হয়। তবে তারও আগে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি যে বিষয় জেনে রাখা আবশ্যক, তা হচ্ছে অন্যান্য ব্যায়ামের সঙ্গে যোগ-ব্যায়ামের পার্থক্য কোথায়।
[Image: from internet]


(চলবে...)

পর্ব:[০৪][**][০৬]
...
[sachalayatan]
[somewherein]
...

No comments: