Thursday, December 4, 2008

[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।০৬। অন্য ব্যায়ামের সাথে ইয়োগার পার্থক্য কী ?










ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।০৬। অন্য ব্যায়ামের সাথে ইয়োগার পার্থক্য কী ?
রণদীপম বসু

অন্যান্য ব্যায়ামের (Physical Exercise) সাথে যোগ-ব্যায়ামের (Yoga) পার্থক্য কোথায় ? এর সঠিক উত্তর পেতে হলে ব্যায়ামের উদ্দেশ্য কী, এবং সুস্বাস্থ্য বলতে কী বোঝায় তার উপর একটু চোখ বুলিয়ে আসলে বোধ হয় মন্দ হবে না। ব্যায়ামের উদ্দেশ্য যদি হয় দেহে অসাধারণ পুষ্টি ও অমিত শক্তিধারণ, তবে তা ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম দ্বারা সম্ভব নয়। আর যদি হয় ব্যায়ামের উদ্দেশ্য শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখা, দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখা এবং জ্বরা-বার্ধক্যকে দূরে রাখা, তাহলে এ ক্ষেত্রে ইয়োগার জুড়ি নেই। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী বলতে যদি দেহের স্বাভাবিক গঠন, পুষ্টি ও শক্তিলাভ বোঝায়, এটা যোগ-ব্যায়াম দ্বারাই সম্ভব। এই সুস্থতার চাইতে স্ফীত পেশী ও অমিত শক্তিলাভ কি খুব গুরুত্বপূর্ণ ?



দেহে শুধু মাংসপেশী (Muscles) অস্বাভাবিক স্ফীত হলে বা অসাধারণ শক্তি থাকলেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বা তার অধিকারীকে সুস্থদেহী বলা যায় না। হতে পারেন এরা মাসলম্যান, কিন্তু এদের দেহে প্রায়ই অকালে জ্বরা-বার্ধক্য দেখা দেয় বা মৃত্যু হাতছানি দেয়। এর কারণ আর কিছুই না। দীর্ঘকাল যন্ত্র নিয়ে বা অতিরিক্ত শ্রমসাধ্য ব্যায়াম করলে শরীরের অত্যধিক শক্তি ক্ষয় হয়, দেহে অত্যধিক পৈশিক ক্রিয়া হয়। দেহে যতো বেশি পৈশিক ক্রিয়া হয়, শরীরে ততো বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। আর দেহে যতো বেশি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া ততো বেশি বৃদ্ধি পায়। কারণ হৃদযন্ত্র এই বিষাক্ত গ্যাস দেহ থেকে বের করে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। শারীর বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী দেহে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ আমাদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় যে অতিরিক্ত শ্রমসাধ্য কাজে বা দৌড়ানোর সময় আমাদের হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, জোরে বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বইতে থাকে। কেন এমন হয় ? অত্যধিক পৈশিক ক্রিয়ার কারণে দেহে প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। আর ঐ গ্যাস দেহ থেকে বের করে দিতে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুস তার ক্ষমতা অনুযায়ী সচেষ্ট হয়ে উঠে। ঠিক একইভাবে শ্রমসাধ্য ব্যায়ামেও হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু দিনের পর দিন যদি হৃদযন্ত্রকে এইভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, তবে তার কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং সেও দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শ্রমসাধ্য ব্যায়ামে দেহের পেশীর পুষ্টি ও ওজন বাড়তে থাকায় দুর্বল হৃদযন্ত্র বিশাল দেহ চালানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং একদিন বিকল হয়ে পড়ে। মূলত ওই ব্যায়ামগুলো কেবল পেশীবৃদ্ধির দিকেই নজর দেয় বলে যোগ-ব্যায়াম ছাড়া অন্য কোন ব্যায়ামে দেহের সর্বাঙ্গীন ব্যায়াম হয় না।



ইয়োগার মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে দেহের স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System) ও দেহযন্ত্রগুলোর স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষমতা ঠিক রাখা। স্নায়ুতন্ত্র দেহযন্ত্রকে পরিচালিত করে দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে খবরাখবর মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডে পৌঁছে দেয়, আবার সেখান থেকে আদেশ-নির্দেশ বহন করে দেহের প্রয়োজনীয় অঙ্গকে চালিত করে। তাই দেহের কোন অংশের স্নায়ু যদি বিকল হয়ে যায়, দেহের সেই অংশটি অসাড় হয়ে পড়ে। আজ পর্যন্ত অন্য এমন কোন ব্যায়াম আবিষ্কৃত হয় নি যার দ্বারা এই অত্যাবশ্যক স্নায়ুতন্ত্রের ব্যায়াম হয়। কুস্তি বা উগ্র যন্ত্র-ব্যায়ামে এই স্নায়ুজাল অনেক সময় বিকল হয়ে যায়, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। কেননা এই সকল ব্যায়ামে আসলে দেহের শুধু কয়েকটি নির্দিষ্ট অংশের ব্যায়াম হয়।

জীবদেহের সকল যন্ত্রই তন্তুময়। এই তন্তু কোষ (Cell) দ্বারা গঠিত। কোষের গঠন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দরকার হয় নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ এবং নালীহীন গ্রন্থিসমূহের প্রয়োজনমতো রস-নিঃসরণ। অন্যদিকে চাই দেহের বিষাক্ত ও অসার পদার্থের অপসারণ। কোষের গঠন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দরকার প্রোটিন, শর্করা ইত্যাদি নানাজাতীয় খাদ্য ও অক্সিজেন। এই অক্সিজেন আমরা প্রায় সবটুকুই পাই প্রশ্বাসের মাধ্যমে। সুতরাং দেহের পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্র যদি সবল ও সক্রিয় না থাকে, তাহলে দেহের কোষ, তন্তু বা পেশী কিছুই সুস্থ থাকতে পারে না।



শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাক যন্ত্রগুলো দেহের দেহগহ্বরে অবস্থিত। দেহগহ্বর দু’ভাগে বিভক্ত। বক্ষ-গহ্বর ও উদর গহ্বর। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস থাকে বক্ষ-গহ্বরে। এবং পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, অগ্ন্যাশয় প্রভৃতি পরিপাক-যন্ত্রগুলো উদর গহ্বরে অবস্থিত। এই দুই গহ্বরের মাঝে ডায়াফ্রাম নামে একটি বিশেষ ধরনের শক্ত পেশীর পর্দা আছে। ফুসফুসের নিজের কোন কাজ করার ক্ষমতা নাই। ডায়াফ্রাম-এর পেশী, বক্ষ-প্রাচীর ও পেটের দেয়ালের পেশীর সাহায্যে তাকে কাজ করতে হয়। শ্বাস নেয়ার সময় ডায়াফ্রাম উদর গহ্বরে নেমে যায় এবং চাপ দেয়। ফলে উদরস্থ যন্ত্রগুলি একটু নিচের দিকে চলে যায় এবং তলপেট উঁচু হয়ে উঠে। আবার পেট ও তলপেটের পেশী সঙ্কুচিত হলে এবং ডায়াফ্রামের পেশী প্রসারিত হলে শ্বাস বেরিয়ে যায়। পরিপাক-যন্ত্রগুলি যথাস্থানে ফিরে আসে। এইভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে পরিপাক-যন্ত্রগুলোও উঠানামা করে। ফলে স্বতঃক্রিয়ভাবে মৃদু মর্দন হয় বা ব্যায়াম হয়।

পরিপাক ক্রিয়া (Digestive System) সক্রিয় রাখতে হলে পেট ও তলপেটের পেশীগুলোর সঙ্কোচন ও প্রসারণ ক্ষমতা বজায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। হজমশক্তিহীন ব্যক্তিদের তলপেটের পেশী শক্ত ও দুর্বল হয়ে যায়। ভুজঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, ধনুরাসন, অর্ধ-চন্দ্রাসন প্রভৃতি আসনগুলো তলপেটের সম্মুখস্থ পেশীগুলো প্রসারিত ও পিঠের পেশীগুলো যেমন সঙ্কুচিত করে, তেমনি পদ-হস্তাসন, যোগমুদ্রা, পশ্চিমোত্থানাসন, জানুশিরাসন, হলাসন প্রভৃতি আসনগুলো পেটের পেশীগুলো সঙ্কুচিত ও পিঠের পেশীগুলো প্রসারিত করে। অর্ধ্বমৎস্যেন্দ্রাসন দ্বারা পেট ও পিঠের দু’পাশের পেশীর উত্তম ব্যায়াম হয়। শলভাসনের দ্বারা ডায়াফ্রাম-এর খুব ভালো ব্যায়াম হয়। আবার উড্ডীয়মান ও নোলি দ্বারা তলপেটের পেশীর আরো ভালো ব্যায়াম হয়। এবং প্রাণায়াম-এর মতো হৃদযন্ত্রের জন্য উপযুক্ত আর দ্বিতীয় ব্যায়াম নেই।



রক্ত সংবহনতন্ত্রের (Blood Circulatory System) মাধ্যমে আমাদের দেহের সর্বত্র রক্ত চলাচল করে এবং রক্ত থেকে দেহকোষগুলো প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করে। এই রক্ত-সংবহনতন্ত্রের প্রধান যন্ত্র হচ্ছে হৃৎপিণ্ড। তাছাড়া ধমনী (Artery), শিরা (Vein), জ্বালকশ্রেণী (Capillaries) এবং লসিকানালী (Lymphatics) এই তন্ত্রের অন্তর্গত। হৃৎপিণ্ড এক বিশেষ ধরনের পেশী দ্বারা নির্মিত। দেহে রক্ত চলাচল এই হৃৎপিণ্ডের পেশীর সম্প্রসারণ ও সঙ্কোচন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। হলাসন, সর্বাঙ্গাসন, শলভাসন প্রভৃতি আসন দ্বারা হৃৎপিণ্ডের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। সমস্ত দেহে রক্ত আনা-নেয়া করতে ধমনী ও শিরার মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। ধমনীর যেমন দেহের উপরাংশে রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, তেমনি দেহের নিম্নাংশ থেকে রক্ত টেনে আনতে শিরার অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। আর এই মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয় হৃৎপিণ্ডকে। সর্বাঙ্গাসন, শীর্ষাসন প্রভৃতি আসনকালে হৃৎপিণ্ড কিছুক্ষণের জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে বিশ্রাম পায়। এই সব আসনে দেহের উধ্বাংশে প্রচুর রক্ত সঞ্চালিত হয়।



আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, অক্সিজেন দেহকোষের পুষ্টির অন্যতম উপাদান। অত্যাবশ্যক এই অক্সিজেনের প্রায় সবটাই আমরা শ্বসন প্রক্রিয়ায় (Respiratory System) বায়ু থেকে ফুসফুসের মাধ্যমে পাই। সুতরাং ফুসফুসের পেশী ও বায়ুকোষের কর্মক্ষমতা কমে গেলে দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে, দেহে দেহকোষ গঠন ও পুষ্টিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রতি ৩ মিনিটে একবার করে ২৪ ঘণ্টায় ৪৮০ বার দেহের সমস্ত রক্ত ফুসফুসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বা চালিত হয়। দেহের এমন একটি অত্যাবশ্যক যন্ত্রের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য শলভাসন, উষ্ট্রাসন, ধনুরাসন প্রভৃতি আসন ও প্রাণায়াম ছাড়া আর কোন ব্যায়াম আজ পর্যন্ত পাওয়া নি।

দেহযন্ত্রগুলোর স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দেহে বিপাক ক্রিয়ার (Metabolism) মাধ্যমে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস ও অসার পদার্থ দেহ থেকে বের করে দেয়া অবশ্যই দরকার, এটা আগেই বলা হয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, ইউরিয়া, ইউরিক প্রভৃতি অ্যাসিড এবং মল-মূত্র প্রভৃতি অসার পদার্থ দেহে জমে থাকলে প্রথমে দেহে নানাপ্রকার ব্যাধির সৃষ্টি করে, পরে দেহের সব যন্ত্র বিকল করে দেয়। শেষ পরিণাম হয়তো অকালমৃত্যু। দেহযন্ত্র কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃশ্বাসের সাহায্যে, কফ-পিত্তাদি মলের সঙ্গে অথবা মুখ দিয়ে, আর ইউরিক ও ইউরিয়া প্রভৃতি অ্যাসিড মুত্রের সঙ্গে দেহ থেকে বের করে দেয়। আর লবণজাতীয় বিষাক্ত পদার্থগুলো ঘর্মগ্রন্থির সাহায্যে ত্বকের মাধ্যমে ঘামের আকারে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। সুতরাং, এই সব নিঃসারক যন্ত্রগুলো সুস্থ ও সক্রিয় থাকলে দেহে উৎপন্ন এই সব বিষাক্ত ও অসার পদার্থ সহজেই দেহ থেকে বের হয়ে যেতে পারে। শ্বাস-যন্ত্রের কথা আগেই বলা আছে, দেহের বৃক্কদ্বয়, মূত্রাশয়, মলনালী প্রভৃতি সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে নোলি, উড্ডীয়মান ইত্যাদি যোগ-ব্যায়াম অতুলনীয়। অন্য কোন ব্যায়ামে শরীরের এই সকল যন্ত্রের সঠিক ব্যায়াম হয় না।



আমাদের দেহের গ্রন্থিগুলো (Glands) প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নালীযুক্ত ও নালীহীন। লালাগ্রন্থি, ঘর্মগ্রন্থী, অশ্রুস্রাবী প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো নালীযুক্ত গ্রন্থি। লালাগ্রন্থি থেকে রস নিঃসৃত হয়ে খাদ্যের সঙ্গে মিশে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছুতে ও হজম হতে সাহায্য করে। ঘর্মগ্রন্থির সাহায্যে দেহ থেকে ঘাম বের হয়, আর অশ্রুস্রাবী-গ্রন্থির জন্য চোখ দিয়ে জল পড়ে। থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, পিটিউটারি, পিনিয়্যাল, এ্যাড্রিনাল প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো নালীহীন গ্রন্থি। এই সব গ্রন্থি থেকে যে রস নিঃসৃত হয়, তাকে হরমোন বলে। হরমোন রক্তের সঙ্গে সরাসরি মিশে যায় এবং দেহের সকল ইন্দ্রিয় ও যন্ত্রের গঠন, পুষ্টি ও সক্রিয়তায় সাহায্য করে। একমাত্র যোগ-ব্যায়াম ছাড়া আজ পর্যন্ত এমন কোন ব্যায়াম আবিষ্কৃত হয়নি, যার দ্বারা গ্রন্থি সুস্থ ও সক্রিয় রাখা যায়।

ব্যায়াম বহু প্রকার আছে। এর দ্বারা হাত, পা, কাঁধ প্রভৃতি অংশের পেশীর খুব ভালো ব্যায়াম হয়। ঐ সব ব্যায়ামে দেহের সব পেশীর ব্যায়াম হয় কি ? যোগ-ব্যায়াম ছাড়া অন্য কোন ব্যায়ামে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও অন্ত্রের পেশীর ব্যায়াম হয় না।

মেরুদণ্ড (Vertebral Column) আমাদের দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আছে। এরই স্থিতিস্থাপকতা ও সবলতার উপর দেহের যৌবনশক্তি ও কর্মক্ষমতা নির্ভর করে। পদ-হস্তাসন, জানুশিরাসন, পশ্চিমোত্থানাসন, অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন, অর্ধ-কুর্মাসন, অর্ধ-চন্দ্রাসন, শশঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, ধনুরাসন, ভুজঙ্গাসন, হলাসন প্রভৃতি আসনগুলো মেরুদণ্ড সবল ও নমনীয় রাখতে সাহায্যে করে।



ধ্যানাসন, পদ্মাসন, সিদ্ধাসন প্রভৃতি আসন দ্বারা দেহে শারীরিক ব্যায়াম হয় না। কিন্তু দেহের ও মনের প্রভূত উপকার হয়। এইসব আসনকালে দেহে পেশীর ক্রিয়া হয় না বললেও চলে। ফলে দেহে অতি সামান্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ মন্থর হয়, ফলে তারাও কিছুটা বিশ্রাম পায়। মস্তিষ্ক ও দেহ ভারমুক্ত হয় ও বিশ্রাম পায়। মানসিক বিশ্রামে ও চিত্তশুদ্ধিতে আসনগুলো অদ্বিতীয়। তাছাড়া এই সব আসনে পেটের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর রক্ত চলাচল করে। ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
[তথ্যসূত্র: সচিত্র যোগ-ব্যায়াম/সবিতা মল্লিক]




উপরোক্ত দেহযন্ত্র এবং এর কাজ ও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শারীর তত্ত্ব (Anatomy and Physiology) আমাদেরকে সে সহায়তা দিতে পারে। কিন্তু যে কথাটা না বললে নয়, উপরোক্ত যুক্তি উপস্থাপনে নিশ্চয়ই এখানে এটা বলার উদ্দেশ্য না যে অন্য কোন ব্যায়ামে আমাদের শরীর ও মনের কোন উপকার হয় না। নিশ্চয়ই হয়। তবে যোগ-ব্যায়ামের মতো সর্বাঙ্গীন উপকার অন্য কোন ব্যায়াম দ্বারা হয় না। বিশেষ করে দেহের অভ্যন্তরস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর জন্য এখনও যোগ-ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। তাই অতিশ্রমসাধ্য পেশীস্ফীতি অর্জন ও প্রদর্শনে হয়তো বা দুর্বার মোহ ও মাদকতা থাকতেই পারে, কিন্তু তা কি নির্ভরযোগ্য সুস্থতার বিকল্প হতে পারে ?
[Images: from internet]

(চলবে...)

পর্ব:[০৫][**][০৭]
...
[sachalayatan]
[somewherein]
...

No comments: