Wednesday, December 10, 2008
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩১। আসন: মৎস্যাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩১। আসন: মৎস্যাসন।
রণদীপম বসু
আসন অবস্থায় দেহটি অনেকটা মাছের মতো দেখায় বলে এ আসনের নাম মৎস্যাসন (Matsyasana)। দু’ধরনের মৎস্যাসন চর্চাই বহুল প্রচলিত।
# মৎস্যাসন-(ক)
প্রণালী:
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাতের তালু দু’টো চিৎ অবস্থায় পাছার নিচে রাখুন। এবার হাতের উপর ভর রেখে কোমরে চাপ দিয়ে সাধ্যমত বুক উঁচু করুন এবং মাথা পেছন দিকে নিয়ে এসে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ পর্যন্ত এই অবস্থায় থেকে এরপর আস্তে আস্তে হাতের উপর ভর রেখে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
# মৎস্যাসন-(খ)
প্রণালী:
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। এবার পা দু’টো পদ্মাসনে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন হাত দু’টো মাথার দু’পাশে রেখে চাপ দিয়ে কাঁধ, পিঠ, কোমর মেঝে থেকে তুলে ঠিক ধনুকের মতো করুন। শুধু মাথার ব্রহ্মতালু মেঝেতে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
আসন ছাড়ার সময় একটু সাবধান হতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে গেলে ঘাড়ে চোট লাগতে পারে। প্রথমে হাত আলগা করুন। হাতের তালু বা কনুই মেঝেতে রাখুন। এরপর হাতের উপর জোর রেখে মাথা সোজা করুন এবং মাথা, কাঁধ, পিঠ ও কোমর মেঝেতে রাখুন। এবার পা আলগা করে ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের হাত-পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসন দু’টো অভ্যাসে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, থাইমাস প্রভৃতি গ্রন্থির খুব ভালো কাজ হয়। যাদের হাঁপানি, সর্দিকাশির ধাত, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের দোষ আছে তাদের এ আসন অবশ্য করা উচিৎ। এ আসন মাথাধরা, অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা রোগ দূর করে। আসনটির সঙ্গে শশাঙ্গাসন বা পদ-হস্তাসন জাতীয় মেরুদণ্ড সামনে বাঁকানো যায় মতো আসনের অভ্যাস রাখলে স্লীপড ডিস্ক, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস জাতীয় রোগ কোনদিন হতে পারে না। এছাড়াও যাদের বুকের খাঁচার কোন দোষত্রুটি থাকে, আসনটি তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তর্মুখী রস নিঃসরণে এ আসন বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই রস ক্ষরণ যদি প্রয়োজনমতো না হয়, তবে দেহের ক্যালসিয়াম জীর্ণ হয়ে দেহের কাজে আসে না। ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়। তাছাড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃক্ষরণ কম হলে খাদ্যবস্তু হজম হয় না, ফলে অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, পেটফাঁপা প্রভৃতি নানারকম পেটের রোগ দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁতও দুর্বল হয়ে যায়। এ্যাপেণ্ডিসাইটিস, পিত্তশূল প্রভৃতি রোগও দেখা দিতে পারে। নানারকম চর্মরোগ হয়। আবার এই গ্রন্থির অতিরিক্ত অন্তঃক্ষরণে রক্তচাপ বৃদ্ধি রোগ হয়। তাই এ আসনটি অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গাসন করা উচিৎ। দু’টো আসন পরস্পর পরিপূরক। আসনটিতে দেহের সব জায়গায় কম-বেশি ব্যায়াম হয়। তাছাড়া আসন দু’টোর ভঙ্গিমায় ঘাড়, কাঁধ, গলা, হাত-পা, বুক, পেট, বস্তিপ্রদেশ, নিতম্ব, কোমর, মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুজালের খুব ভালো ব্যায়াম হয়, বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর হয়। বুকের খাঁচার দোষ-ত্রুটি থাকলে ভঙ্গিমা দু’টো অভ্যাসে অল্পদিনে ঠিক হয়ে যায়।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[৩০][**][৩২]
[sachalayatan]
Tuesday, December 9, 2008
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩০। আসন: ভেকাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।৩০। আসন: ভেকাসন।
রণদীপম বসু
ভেক অর্থ ব্যাঙ। আসনাবস্থায় দেহ ব্যাঙের আকৃতি ধরে বলে এই আসনকে বলা হয় ভেকাসন (Bhekasana)। যদিও যোগশাস্ত্রে মণ্ডূকাসন নামে ব্যাঙের আকৃতি সদৃশ আরেকটি আসনের চর্চাও হয়ে থাকে।
# ভেকাসন (Bhekasana):
পদ্ধতি:
পা সামনে ছড়িয়ে সোজা হয়ে বসুন এবং উরুর মধ্য দিয়ে দু’হাতের তালু মেঝেতে রাখুন। হাতের আঙুল সামনের দিকে থাকবে। এবার হাঁটু ভেঙে দু’পায়ের তালু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রেখে হাতের তালুর উপর ভর রেখে ধীরে ধীরে পাছাসমেত পা দু’টো যতোটা সম্ভব উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এভাবে থাকার চেষ্টা করুন। এরপর বিশ্রাম নিয়ে আসনটি এভাবে ২/৩ বার করুন এবং শেষে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
এ আসনটিকে কখনো কখনো তিতিভাসনও (Titibhasana)বলা হয়ে থাকে।
উপকারিতা:
আসনটিতে দেহের কম-বেশি সকল অংশের উপকার হয়। বিশেষ করে এতে হাতের শক্তি বাড়ে এবং দেহের কোন অংশে বাত বা সায়টিকা রোগ হ’তে পারে না। যদি এ ধরনের রোগ থাকে, তাহলে আসনটি অভ্যাসে তা নিরাময় হয়ে যায়।
# সুপ্ত-ভেকাসন (Supta-Bhekasana):
ভেক বা ব্যাঙ সুপ্ত-অবস্থায় এইভাবে থাকে, তাই আসনটির নাম সুপ্ত-ভেকাসন।
পদ্ধতি:
প্রথমে বজ্রাসনে বসে তারপর হাঁটু দুটো যতটুকু সম্ভব ছড়িয়ে অর্থাৎ মণ্ডূকাসনাবস্থা থেকে সামনের দিকে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। মাথা সামান্য উঁচু করে রাখুন। হাত দু’টো দেহের দু’পাশে থাকবে অথবা সামনে ছড়িয়ে রাখতে পারেন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন এবং এরপর পা সোজা করে উপুড় হয়ে শবাসনে প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিয়ে আসনটি এভাবে ২/৩ বার অভ্যাস করুন।
উপকারিতা:
আসনটি বাত, সায়টিকা দূর করে উরুর সন্ধিস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে। এ আসন অভ্যাসে রাখলে মেয়েদের সন্তান প্রসবকালে কোন অসুবিধা হয় না। তাছাড়া পেট বা তলপেটে মেদ জমতে পারে না। শ্বাস ধীর গতিতে চলে, ফলে ফুসফুস কিছুটা বিশ্রাম পায়।
বৈচিত্র্য:
চর্চার ক্ষেত্রে এ আসনের কিছু কিছু যে বৈচিত্র্য বা ভেরিয়্যাশান লক্ষ্য করা যায় তা অভ্যাস করলে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যাবে।
# ভেকাসন-(ক)
# এক পদ অর্ধ-ভেকাসন
# অর্ধ সুপ্ত-ভেকাসন-(ক)
# অর্ধ সুপ্ত-ভেকাসন-(খ)
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব: [২৯][**][৩১]
[sachalayatan]
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৯। আসন: মণ্ডূকাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৯। আসন: মণ্ডূকাসন।
রণদীপম বসু
মণ্ডূক অর্থ ব্যাঙ। আসনাবস্থায় দেহকে ব্যাঙ-সদৃশ মনে হয় বলে আসনটির নাম মণ্ডূকাসন (Mandukasana)।
পদ্ধতি:
প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। এবার হাঁটু দু’টো দু’পাশে যতোটা সম্ভব ফাঁক করে বসুন। পাছা দু’পায়ের পাতার মাঝখানে থাকবে এবং বুড়ো আঙুল দু’টো পরস্পর স্পর্শ করে থাকবে। এখন দু’হাতের তালু দু’হাঁটুর উপর রেখে মেরুদণ্ড সোজা করে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ৩০ সেঃ থেকে ৪০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসনটি পায়ের শক্তি বৃদ্ধি করে পায়ের পেশী ও স্নায়ুকে সবল এবং সুস্থ রাখে। মেয়েদের জন্য এ আসন বিশেষ উপকারী। মেয়েদের বস্থিপ্রদেশের এবং উরুর সন্ধিস্থলের পেশী ও স্নায়ু সতেজ ও সক্রিয় রাখতে খুবই উপকারী আসন এটি। ফলে কোন স্ত্রী-রোগ হতে পারে না ও সন্তান প্রসবে দৈহিক কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। এ আসনে মনের একাগ্রতা যেমন বাড়ে তেমনি হজমশক্তিও বৃদ্ধি পায়। ফলে পায়ে সায়টিকা বা বাত হ’তে পারে না, আর থাকলেও আসনটি অভ্যাসের ফলে অল্পদিনে ভালো হয়ে যায়।
বৈচিত্র্য:
এ আসন-চর্চায় চমৎকার কিছু বৈচিত্র্য বা ভেরিয়্যাশান লক্ষ্য করা যায়, যা অভ্যাসে সুফল পাওয়া যাবে।
# মণ্ডূকাসন-(ক)
# মণ্ডূকাসন-(খ)
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[২৮][**][৩০]
[sachalayatan]
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৮। আসন: মৎস্যেন্দ্রাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৮। আসন: মৎস্যেন্দ্রাসন।
রণদীপম বসু
# অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন (Ardha-matsyendrasana)
পদ্ধতি:
সামনের দিকে পা ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার ডান পা তুলে হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ পায়ের উপর দিয়ে নিয়ে বাঁ উরুর বাঁ পাশে মাটিতে রাখুন। ডান পায়ের পাতা মাটির সঙ্গে লেগে থাকবে। এবার বাঁ হাত ডান হাঁটুর পাশ দিয়ে নিয়ে ডান পায়ের আঙুল অথবা বাঁ পায়ের হাঁটু শক্ত করে ধরুন এবং ডান হাত পেছনদিক দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বাঁ উরু ও তলপেটের সংযোগস্থলে রাখুন। এখন ডানদিকে শরীরটা মোচড় দিয়ে ঘাড় ও মাথা ডানদিকে বাঁকিয়ে ডান পিঠ দেখতে চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর হাত-পা আলগা করে বসে বিশ্রাম নিন।
তারপর পা-হাত বদল করে একইভাবে আসনটি আবার করুন। অর্থাৎ বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে ডান পায়ের উপর দিয়ে নিয়ে ডান উরুর ডান পাশে মাটিতে রেখে ডান হাত বাঁ হাঁটুর পাশ দিয়ে নিয়ে বাঁ পায়ের আঙুল অথবা ডান পায়ের হাঁটু শক্ত করে ধরে বাঁ হাত পেছনদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে ডান উরু ও তলপেটের সংযোগস্থলে রাখুন এবং শরীরটাকে বাঁ দিকে মোচড় দিয়ে ঘাড় ও মাথা বাঁ দিকে বাঁকিয়ে বাঁ পিঠ দেখার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন এবং শেষে হাত-পা আলগা করে প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসনটি মেরুদণ্ডকে যৌবনোচিত নমনীয় ও সরল রাখতে অদ্বিতীয়। পিঠের ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুকেন্দ্রগুলো সতেজ ও সক্রিয় রাখে। আসনটিতে দেহের সব অংশের কম-বেশি ব্যায়াম হয় বলে দেহের কোন অংশে বাত বা সায়াটিকা হতে পারে না। এছাড়াও আসনটি অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্লীহা ও যকৃতের রোগ দূর করতে সহায়তা করে। যাদের কাঁধ একদিকে উঁচু বা নিচু তাদের আসনটি অবশ্যই করা উচিৎ। এ আসনের সঙ্গে পদহস্তাসন, শশঙ্গাসন বা মেরুদণ্ড সামনের দিকে বাঁকানো যায় মতো ঐ জাতীয় কোন আসন অভ্যাস করলে লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস, স্লীপড ডিস্ক জাতীয় কোন রোগ হতে পারে না।
ভ্যারিয়েশান:
এ আসন চর্চার ক্ষেত্রে মূলানুগ প্রণালীর বাইরেও প্রচুর বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। সম্ভবানুযায়ী তা অভ্যাস করা যেতে পারে। নীচে সেরকম কিছু বৈচিত্র্যময় আসনাবস্থা দেখানো হলো:
# পূর্ণ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(ক)
# অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(খ)
# অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(গ)
# পূর্ণ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(ঘ)
# অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(ঙ)
# অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(চ)
# অর্ধ বদ্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন-(ছ)
@ নিচের ছবিটা সতর্কতামূলক- যারা নারীকে কেবল ক্ষীণদেহী দুর্বল-তনু ভাবেন !
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব: [২৭][**][২৯]
[sachalayatan]
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৭। আসন: পর্বতাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে ।২৭। আসন: পর্বতাসন।
রণদীপম বসু
আসনাবস্থায় দেহকে পর্বতাকৃতির মনে হয় বলে এ আসনের নাম পর্বতাসন (parvatasana)।
পদ্ধতি:
প্রথমে পদ্মাসনে বসে ধীরে ধীরে হাঁটুর ওপর বসুন। প্রথম অভ্যাসকারীরা হাতের উপর ভর রেখে প্রথমে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করুন। সফল হলে এবার হাতের তালু দু’টো নমস্কারের ভঙ্গিমায় রেখে মাথার উপর তুলুন। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর পা ছড়িয়ে বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের পা বদল করে আসনটি আগের মতো আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসনটিতে পায়ের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। বিশেষ করে উরুর সামনের পেশী এবং সায়েটিক নার্ভের জন্য খুব কার্যকর। এতে করে পায়ে কোনদিন বাত বা সায়টিকা হ’তে পারে না, আর থাকলেও তা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এছাড়াও আসনটি অভ্যাসে মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব: [২৬][**][২৮]
[sachalayatan]
Friday, December 5, 2008
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৬| আসন: তৌলাঙ্গাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৬| আসন: তৌলাঙ্গাসন।
রণদীপম বসু
আসনাবস্থায় তূলাদণ্ডের মতো দেহের দু’ অংশকে সমভরে স্থাপন করা হয বলে এ আসনকে বলা হয় তৌলাঙ্গাসন (Tolangulasana)|
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বসে হাত দু’টো দেহের দু’পাশে রেখে শুয়ে পড়ুন। হাতের তালুদ্বয় পাছার নিচে চিৎ হয়ে থাকবে। এবার কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে আস্তে আস্তে বুক ও পা সমভাবে মাটি থেকে উপরে তুলুন। হাতের কনুই মেঝের সঙ্গে প্রায় ৯০ ডিগ্রী কোণ করে লেগে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসনটিতে দেহের সকল অংশের কম-বেশি উপকার হয়, বিশেষ করে পেটের মাংসপেশী সবল হয়। এ আসন অভ্যাসে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। পেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে পেটের যাবতীয় গ্রন্থি ও পেশী সবল ও সক্রিয় হয়।
আমাদের দেহের বেশিরভাগ রোগ পেট থেকে আসে। যেমন- পেটের ভিতরে দু’পাশে যে দু’টো বৃক্ক বা কিডনি আছে, তাদের কাজ রক্ত থেকে অপ্রয়োজনীয় জলীয় অংশ এবং যা কিছু শরীরের জন্য অপ্রয়োজনীয় তা মূত্ররূপে দেহ থেকে বের করে দেয়া। এই আসনে কিডনি সুস্থ ও সক্রিয় থাকলে দেহে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকারক কোন কিছু থাকতে পারে না। এড্রিনাল গ্রন্থি সক্রিয় রাখতে আসনটি বিশেষ কার্যকরী। মেয়েদের সন্তান প্রসবহেতু বা অন্য কোন কারণে পেট ও তলপেটের শিথিলতা দূর করে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে আনতে আসনটি বিশেষভাবে সাহায্য করে। আসনটি অভ্যাস রাখলে ছেলেদের হার্নিয়া জাতীয় রোগ কোনদিন হয় না। আসনটির সঙ্গে পদহস্তাসন বা শশঙ্গাসন অভ্যাস রাখলে বাত, সায়টিকা, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস, স্লীপ্ড ডিস্ক জাতীয় রোগ কোনদিন হতে পারে না। এছাড়া, এই আসন অভ্যাসের ফলে দেহে কোথাও অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমতে পারে না এবং সেইসঙ্গে হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[২৫][**][২৭]
[sachalayatan]
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৫| সূর্য-নমস্কার।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৫| সূর্য-নমস্কার।
রণদীপম বসু
সূর্য-নমস্কার (Surya-namashkara) বা (Sun-salutation) একটি উত্তম খালিহাতে ব্যায়াম। যে কোন ব্যায়াম বা খেলাধূলার পূর্বে কয়েকবার সূর্য-নমস্কার করে নিলে দেহ যথেষ্ট ব্যায়ামোপযোগী হয়ে ওঠে। রক্তের গতি ও দেহের তাপ যে কোন ব্যায়ামের পক্ষে উপযোগী করে তোলার জন্য পদ্ধতিটি বিশেষ কার্যকরি। তাই দু’-এক ক্ষেপ সূর্য-নমস্কার করে তারপর যোগাসন আরম্ভ করলে দ্রুত এবং ভালো ফল পাওয়া যায়।
ভারতীয় যোগ-দর্শন প্রণেতারা সূর্যকে দেবতা জ্ঞানে এবং সেই দেবতাকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে প্রণাম জানিয়ে যোগ-ব্যায়াম করতে বলে গেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন প্রথমে সূর্যকে প্রণাম করে তারপর যোগ-ব্যায়াম শুরু করলে তিনি খুশি হয়ে তাঁর দেহের প্রাণশক্তি অভ্যাসকারীর দেহে পাঠিয়ে দেন, অর্থাৎ যোগ-ব্যায়ামকারী প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে ওঠে। একালের বিজ্ঞান-মনস্ক অভ্যাসকারী যারা সূর্যের জারিজুরি সব জেনে গেছেন, ভক্তিজ্ঞান কম থাকলেও, তারাও এই বিশেষ ব্যায়ামটি করলে একই ফলাফল পাবেন।
ব্যায়ামটির ভঙ্গিমাগুলো দেখতে যোগাসনের মতো হলেও সূর্য-নমস্কার যোগ-ব্যায়াম নয়। এর মূলেই তফাৎ। কেননা, যোগাসন অভ্যাস করতে হয় স্থিতিতে, আর সূর্য-নমস্কারের ভঙ্গিমাগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত হবে গতিতে। তার মধ্যে কোথাও স্থিতি নেই, ঠিক ড্রিলের মতো। ১ ঃ ২ ঃ ৩ ঃ ৪ ঃ ৫ ঃ ৬ ঃ ৭ ঃ ৮ ঃ বলার বা উচ্চারণ করার সাথে সাথে ১ ঃ ২ ঃ ৩ ঃ ৪ ঃ ৫ ঃ ৬ ঃ ৭ ঃ ৮ ঃ নম্বর ভঙ্গিমাগুলো পর পর করে যেহে হয়। আবার ৮নং ভঙ্গিমা থেকে ১নং ভঙ্গিমায় ফিরে আসতে হয়। ১ থেকে ৮ এবং ফের ৮ থেকে ১-এ ফিরে এলে তবেই একবার সূর্য-নমস্কার হয়।
পদ্ধতি:
১ ঃ হাত দু’টো নমস্কারের ভঙ্গিমায় রেখে পা জোড়া ও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান।
২ ঃ এখন এ অবস্থায় হাত মাথার উপরে তুলুন। হাত দু’টো কানের সঙ্গে লেগে থাকবে।
৩ ঃ এবার গোড়ালি থেকে কোমর পর্যন্ত সোজা রেখে দেহের উপরাংশ যতটা সম্ভব পেছনদিকে বাঁকিয়ে নিয়ে যান। হাত কানের সঙ্গে লেগে থাকবে।
৪ ঃ এখন আবার ২ নং অবস্থানে ফিরে এসে গোড়ালি থেকে কোমর পর্যন্ত সোজা রেখে দেহের উপরাংশ নিচু করে হাত দু’টো সামনে পায়ের কাছে রাখুন।
৫ ঃ এবার হাতের তালু মাটিতে রেখে পায়ের পাতার উপর ভর দিয়ে উবু হয়ে বসুন।
৬ ঃ এক পা পেছনে ছড়িয়ে দিয়ে মাথা উঁচু করুন।
৭ ঃ এখন অপর পা-ও পেছনে ছড়িয়ে দিন। হাতের তালু এবং পায়ের আঙুলের উপর দেহের সমস্ত ভার থাকবে।
৮ ঃ এবার নিচু হয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করুন, অর্থাৎ হাত দু’টোর অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে গোটা দেহটাকে উপুর অবস্থায় মাটিতে শুইয়ে দিন।
এরপর উল্টোদিক থেকে পর পর ভঙ্গিমা করে অর্থাৎ ৮ থেকে ৮-৭-৬-৫-৪-৩-২-১ এভাবে ফের ১-এ ফিরে আসুন। তাহলেই একবার সূর্য-নমস্কার পূর্ণ হবে।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[২৪][**][২৬]
[sachalayatan]
[somewherein]
[Yoga] ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৪| আসন:গোমুখাসন।
ইয়োগা: সুদেহী মনের খোঁজে |২৪| আসন:গোমুখাসন।
রণদীপম বসু
# গোমুখাসন (Gomukhasana):
আসন অবস্থায় দেহটি গরুর মুখের আকৃতি ধরে বলে এ আসনের নাম গোমুখাসন (Gomukhasana)|
পদ্ধতি:
পা দু’টো সামনের দিকে ছড়িয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। এবার বাঁ পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে গোড়ালি ডান উরুর অথবা ডান পাছার কাছে মেঝেতে রাখুন। এবার ডান পা হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে বাঁ উরুর উপর দিয়ে নিয়ে বাঁ পাছার কাছে মেঝেতে রাখুন, যাতে গোড়ালি পাছা স্পর্শ করে থাকে। এখন ডান হাত মাথার উপর তুলে কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে হাতের তালু পিঠে মেরুদণ্ডের ঠিক উপরে উপুর করে রাখুন এবং বাঁ হাত কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে পেছনদিকে নিয়ে ডান হাতের আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর আস্তে আস্তে হাত-পা আলগা করে বিশ্রাম নিন।
এবার হাত-পা বদল করে আসনটি নিয়মমতো আবার করুন অর্থাৎ অর্থাৎ এবার ডান পা নিচে বাঁ পা উপরে রেখে বাঁ হাত উপরে এবং ডান হাত নিচের দিকে থাকবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে আসনটি ২/৩ বার করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
সাধারণভাবে যে পা উপরে অবস্থান করে, অনুরূপ সে হাত উপরে থাকে। অর্থাৎ ডান পা উপরের ভাঁজে থাকলে ডান হাত উপরে থাকে, বাঁ পা উপরে থাকলে বাঁ হাত উপরে। তবে এর উল্টোটাও হতে পারে।
উপকারিতা:
গোমুখাসনে বাঁকা মেরুদণ্ড সোজা ও সরল হয়। আসনটি কুচিন্তা ও উত্তেজনা দূর করে, হাত ও পায়ের পেশী এবং স্নায়ুজাল সবল ও সক্রিয় রাখে। এছাড়াও আসনটি অভ্যাস রাখলে কোনদিন অর্শ, মূত্রপ্রদাহ, বাত বা সায়টিকা হতে পারে না। হাত ও কাঁধের সন্ধিস্থলের ব্যায়ামের জন্য আসনটি বিশেষ কার্যকরী। আসনটি অভ্যাস রাখলে মেয়েদের সহজে কোন স্ত্রী-ব্যাধি হতে পারে না।
যারা সারাজীবন অবিবাহিত থাকতে চায়, তাদের আসনটি অভ্যাস রাখা উচিৎ।
[Images: from internet]
(চলবে...)
পর্ব:[২৩][**][২৫]
[sachalayatan]
[somewherein]
Subscribe to:
Posts (Atom)